বড়লেখা প্রতিনিধি::
ভাল চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে মৌলভীবাজারের বড়লেখার এক যুবককে সৌদিআরবে পাঠিয়ে ‘প্রতারণা’ করার অভিযোগ ওঠেছে। সৌদিআরবে বৈধ কাগজপত্র ও ভালো চাকরি দেওয়ার কথা বলে ওই যুবকের পরিবারের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছিল প্রায় ৬ লাখ টাকা। কিন্তু সংসারের স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনার স্বপ্ন নিয়ে সৌদি যাওয়া যুবক পাননি ভাল চাকরি। উল্টো শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়ে ১৬ দিন জেল খাটেন। এরপর দেশে ফিরেন শূন্য হাতে।
প্রতারণার শিকার যুবকের নাম মো. শরিফ উদ্দিন (২৩)। তিনি বড়লেখা সদর ইউনিয়নের গঙ্গারজল গ্রামের মো. আমির উদ্দিনের ছেলে। এ ঘটনায় প্রতারিত যুবক শরিফের বাবা বাদী হয়ে সম্প্রতি বড়লেখা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চার জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। আদালত চার আসামিকে ৬ ডিসেম্বর ধার্য তারিখে হাজির হতে সমন জারি করেছেন।
মামলায় অভিযুক্তরা হচ্ছেন- বড়লেখা পৌরসভার পাখিয়ালা গ্রামের মৃত আব্দুল ওয়াদুদের ছেলে মো. শাহজাহান কবির খোকন (৫০) ও তার ভাই হুমায়ুন আহমদ (৫২), পাখিয়ালা গ্রামের মৃত কুটু মিয়ার ছেলে মোস্তাব উদ্দিন (৫৫) এবং বড়লেখা সদর ইউনিয়নের জফরপুর গ্রামের মৃত সুরুজ আলীর ছেলে আলী আজাদ (৫৭)।
মামলার এজাহারে বলা হয়, মো. শাহজাহান কবির খোকন ও তার ভাই হুমায়ুন আহমদ ২০২১ সালের ১৫ ডিসেম্বর প্রতারণার শিকার যুবক শরিফের বাবা আমির উদ্দিনকে প্রস্তাব দেন তাদের সরকার অনুমোদিত ট্রাভেলসের লাইসেন্স আছে। তারা ভাল ভিসা দিয়ে শরফিকে সৌদিআরব পাঠাতে পারবেন। মাসে ৫০ হাজার টাকা বেতন হবে। তাদের সাথে মামলায় অভিযুক্ত মোস্তাব উদ্দিন ও আলী আজাদও একই প্রস্তাব দেন। এতে তাদের প্রস্তাবে আমির উদ্দিন রাজি হন। এরপর তাদের মধ্যে প্রথম পর্যায়ে ৪ লাখ ৩০ হাজার টাকার চুক্তিপত্র হয়। আমির উদ্দিন ছেলেকে সৌদি পাঠানোর জন্য চুক্তি অনুযায়ী কয়েক দফায় টাকা পরিশোধ করেন। এছাড়া বিভিন্ন কাজের কথা বলে আরও প্রায় ১ লাখ ৭০ টাকা নেওয়া হয়। এরপর ২০২২ সালের ২৬ জানুয়ারি শরিফ উদ্দিনকে সৌদি পাঠানো হয়। সেখানে পৌঁছার পর শরিফকে শাহজাহান কবির খোকনের লোকজন রিসিভ করে কাজ বুঝিয়ে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শরিফ সেখানে কোন লোক পাননি। শাহজাহান কবির খোকনের মোবাইলে ফোন দিলেও তাকে পাননি। অনাহারে-অর্ধাহারে এয়ারপোর্টে তিনদিন কাটে শরিফের। অসহায় অবস্থায় তাকে সেখানে পেয়ে এক ভারতীয় নাগরিক একটি গোদাম ঘরে নিয়ে রাখেন। এদিকে সৌদি থেকে ছেলের খবর না আসায় আমির উদ্দিন মামলায় অভিযুক্ত হুমায়ুন, মোস্তাব ও আলী আজাদের কাছে যান। কিন্তু তারা খোঁজ নিচ্ছে বলে টালবাহানা করতে তাকেন। এরমধ্যে কয়েক মাস গেলেও বৈধ কাগজপত্র পাননি শরিফ। সৌদিতে অবৈধভাবে পালিয়ে থাকা অবস্থায় গ্রেফতার হন। সেখানে প্রায় ১৬ দিন জেল খেটে দেশে ফিরে আসেন শরফি।
আলাপকালে প্রতারিত যুবক শরিফ উদ্দিন বলেন, ‘বৈধভাবে সৌদি পাঠানোর কথা বলে আমাদের থেকে তারা প্রায় ৬ লাখ টাকা নিয়েছি। ঋণ করে আমার বাবা টাকা দিয়েছেন। তারা আমার সাথে প্রতারণা করেছে। সৌদি পৌঁছে অসহায়ের মতো ৩ দিন এয়ারপোর্টের ফ্লোরে ঘুমিয়েছি। কেউ নিতে আসেনি। পরে এক ভারতীয় নাগরিক আমাকে নিয়ে তার একটি গোদাম ঘরে থাকার ব্যবস্থা করেন। তার (ভারতীয় নাগরিকের) ফোন থেকে শাহজাহান কবির খোকনকে ফোন দেই। সে আমাকে হুমকি দিয়ে বলে ‘আমি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা। এখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসায় আছি। তকে সৌদি আরবেই গুম করে ফেলব। আর আমাকে কোন ফোন দিবে না।’ ভয়ে আর ফোন দেইনি খোকনকে। এভাবে পালিয়ে কয়েক মাস থাকার পর আমি সৌদিতে গ্রেফতার হই। সেখানে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়ে নিঃস্ব অবস্থায় দেশে ফিরি।’
এ বিষয়ে প্রধান অভিযুক্ত মো. শাহজাহান কবির খোকনের বক্তব্য জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘তাকে সৌদি পাঠিয়েছি ঠিক আছে। সব অভিযোগ সত্য নয়। আমি তাদের কাছে আরও অনেক টাকা পাই।’
বড়লেখা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাদী পক্ষের নিয়োজিত আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. ইয়াছিন আলী।
caller_get_posts is deprecated. Use ignore_sticky_posts instead. in /home/eibela12/public_html/wp-includes/functions.php on line 6121caller_get_posts is deprecated. Use ignore_sticky_posts instead. in /home/eibela12/public_html/wp-includes/functions.php on line 6121
Leave a Reply