কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি :: দরজায় কড়া নাড়ছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব। আগামী ২০ অক্টোবর (শুক্রবার) মহাষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে শুরু হবে শারদীয় উৎসব।
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় দশভূজা দেবী দূর্গাকে বরণ করতে প্রস্তুত হচ্ছে পূজামন্ডপগুলো। দুর্গোৎসবকে ঘিরে কমলগঞ্জের সর্বত্র চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি ও মন্ডপে মন্ডপে চলছে প্রতিমা তৈরির শেষ মুহুর্তের কাজ। ইতিমধ্যে উপজেলার অধিকাংশ পূজামন্ডপে শেষ হয়েছে প্রতিমা তৈরির কাজ। এখন রঙ তুলির আঁচড়ে সৌন্দর্য্য বর্ধণের কাজ চলছে। মাটির কাজ শেষ করে রং-তুলির খেলায় প্রতিমাকে সজ্জিত করতে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন মন্ডপগুলোর মৃৎশিল্পীরা। মৃৎশিল্পীদের রাত দিনের কাজ আর পূজা কমিটির ব্যস্ততা অত্যাসন দুর্গোৎসবের জানান দিচ্ছে। এ বছর কমলগঞ্জ উপজেলায় ১৪৬টি সার্ব্বজনীন ও ১৭টি ব্যক্তিগত মন্ডপে অনুষ্ঠিত হবে দুর্গাপূজা। উপজেলা ও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তার প্রস্তুতি।
উপজেলার বিভিন্ন পূজা মন্ডপ ঘুরে দেখা যায়, মাটির কাজ শেষ করে প্রতিটি প্রতিমাকে রঙ-তুলির নিপুণ আঁচড়ে রাঙাতে ব্যস্ত শিল্পীরা। চলছে সাজ-সজ্জার কাজও। দেবী দুর্গার সাথে সাজিয়ে তোলা হচ্ছে কার্তিক, গণেশ, লক্ষ্মী আর সরস্বতী দেবীকেও। যেন দম ফেলার ফুসরত নেই মৃৎশিল্পীদের। তবে এবারের পূজার প্রতিমায় ব্যতিক্রম আনার চেষ্টা করেছেন উপজেলার বেশ কয়েকটি পূজামন্ডপ। দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতির কারণে বিগত বছরের তুলনায় এ বছর দুর্গোৎসবে দ্বিগুন ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় কিছুটা হিমশিম খেতে হচ্ছে আয়োজকদের।
এরপরও থেমে নেই কোন আয়োজন। রকমারী আলোক সজ্জার বর্ণালী বাহারে সাজানো হবে মন্ডপ ও তার আশপাশ। হাতে আর কয়েকদিন বাকি। তাই রাত-দিন চলছে সাজ-সজ্জার কাজ।
উপজেলার মুন্সীবাজার ইউনিয়নের কুমারটেকি পালপাড়ার মৃৎশিল্পী অজিত রুদ্রপাল জানান, এ বছর তিনি ৯টি দুর্গা প্রতিমা তৈরির কাজ করছেন। সবকটি প্রতিমার মাটির কাজ প্রায় শেষ। এখন রং তুলির কাজ চলছে। ইতিমধ্যে ২টি প্রতিমার রঙের কাজ শেষ করেছেন।
আগামী ৪-৫ দিনের মধ্যেই বাকি প্রতিমাগুলোর রঙের কাজ শেষ হয়ে যাবে বলে তিনি জানান। মনোরঞ্জন পাল নামে আরেক মৃৎশিল্পী বলেন, বেশিরভাগ প্রতিমার মাটির কাজ শেষ করেছি। এখন রঙের কাজ চলছে। সব মিলিয়ে নির্ধারিত সময়ের আগেই কাজ শেষ করতে পারব বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
কমলগঞ্জ উপজেলায় ১৪৬টি সার্ব্বজনীন ও ১৭টি ব্যক্তিগত মন্ডপসহ মোট পূজা মন্ডপের সংখ্যা ১৬৩ টি। এর মধ্যে কমলগঞ্জ পৌরসভায় ৮টি, ১নং রহিমপুর ইউনিয়নে ২০ টি, ২ নং পতনউষার ইউনিয়নে ১৪টি, ৩নং মুন্সীবাজার ইউনিয়নে ১৬টি, ৪ নং শমসেরনগর ইউনিয়নে ১৪টি, ৫নং কমলগঞ্জ সদর ইউনিয়নে ৮টি, ৬নং আলীনগর ইউনিয়নে ২২টি, ৭নং আদমপুর ইউনিয়নে ১৩টি, ৮নং মাধবপুর ইউনিয়নে ২১টি ও ৯নং ইসলামপুর ইউনিয়নে ১০টি পূজামন্ডপ রয়েছে।
কমলগঞ্জ উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি শ্যামল চন্দ্র দাশ ও সাধারণ সম্পাদক প্রনীত রঞ্জন দেবনাথ বলেন, শারদীয় দুর্গাপূজা আনন্দঘন ও শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপনের লক্ষ্যে আমরা সর্বপ্রকার সর্তকতা অবলম্বন করছি। তাছাড়া ২০২১ সালের কমলগঞ্জে ঘটা অপ্রীতিকর ঘটনা ও আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাড়ত্তি নিরাপত্তা জোরদার করা হচ্ছে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি অধিকতর নিরাপত্তা জোরদারের জন্য প্রত্যেক মন্ডপে মন্ডপ কমিটির নিজ উদ্যোগে অধিক সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক রাখার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।
কমলগঞ্জ থানার অফিসার ইনর্চাজ সঞ্জয় চক্রবর্তী জানান, কমলগঞ্জে সার্বজনীন ও ব্যক্তিগতসহ মোট ১৬৩ টি পূজামন্ডপে শান্তিপূণ ভাবে পূজা উদযাপনের লক্ষ্যে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে সবধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। সবকটি পূজামন্ডপ এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা জোরদার করা হয়েছে। পূজা মন্ডপগুলোর নিরাপত্তা রক্ষায় পুলিশের ১০টি মোবাইল টিম ও আনসার বাহিনী পূজা চলাকালিন সময়ে সার্বক্ষণিক কাজ করবে।
তাছাড়া বাড়তি নিরাপত্তায় প্রতিটি মন্ডপে সিসি ক্যামেরা বসানোর জন্য মন্ডপ কমিটিগুলোকে বলা হয়েছে।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন বলেন, শারদীয় দুর্গোৎসব যাতে নির্বিঘে্ন সম্পন্ন হয় সেজন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। প্রতিটি পূজামন্ডপে আনসাবর ও স্বেচ্ছাসেবক দায়িত্ব পাল করবে। পাশাপাশি পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি সদস্যরা টহলে থাকবে।#
Leave a Reply