নাজমুল হক নাহিদ, আত্রাই (নওগাঁ) প্রতিনিধি :: নওগাঁর আত্রাই উপজেলা প্রশাসনের নীরব ভূমিকায় কৃষিজমিতে নির্বিচারে পুকুর খনন করা হচ্ছে। ভূমি ও ফসলি জমি সুরক্ষা আইন উপেক্ষা করে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ফসলি জমিতে চলছে ভেকু মেশিন দিয়ে পুকুর খনন। এতে প্রতি বছরেই আবাদি জমি কমে যাওয়ায় খাদ্যশস্য উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে।
অভিযোগ উঠেছে, পুকুর খননে ভূমির শ্রেনী পরিবর্তনসহ নানা জটিলতায় জমির মালিকদের অনাগ্রহ থাকলেও অসাধু ভেকু মেশিন ব্যবসায়ীরা সবকিছু ম্যানেজ করার দায়িত্ব নিয়ে জমির মালিকদের পুকুর খননে উদ্বুদ্ধ করছেন।
কৃষি অফিসের তথ্যমতে, গত পাঁচ বছরে এই উপজেলায় প্রায় ১৫০ বিঘা আবাদি জমি কমে গেছে। কৃষি কর্মকর্তা বলছেন, ফসলি জমি কৃষকের ব্যক্তি মালিকানা সম্পত্তি। নিরুৎসাহিত করা ছাড়া পুকুর খনন করলে আমরা বাধা দিতে বা আইন প্রয়োগ করতে পারি না। পুকুর খননকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বলেন এটি যেহেতু অফিসিয়াল বিষয় সেহেতু আমার তথ্য দেয়ার কোন এখতিয়ার নেই। পুকুর খননকারীর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আপনাকে বলতে পারবে।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বিগত কয়েক মাসে উপজেলার বড়বিশা মাঠ, বাঁকা মাঠ ও নাখবেড়ী মাঠসহ বিভিন্ন মাঠে ভেকু মেশিন দিয়ে ফসলি জমিতে পুকুর খনন করা হয়েছে। কোথাও আবার খননকৃত জমি থেকে ট্রাক্টর দিয়ে মাটি পরিবহন করে কেউ নিচু জমি ভরাট করছেন আবার কেউ ফসলি জমি ভরাট করে বাড়ি অথবা বাগান তৈরির প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এতে এক দিকে যেমন খাদ্যশস্য উৎপাদন কমে যাচ্ছে, অন্য দিকে পাকা সড়কে মাটি পড়ে কর্দমাক্ত হয়ে সড়ক নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এতে চলাচলেও চরম দুর্ভোগে পড়ছেন পথচারীরা।
উপজেলার শাহাগোলা গ্রামের আজাদ সরদারসহ বেশ কয়েকজন বলেন, দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে তাল মিলিয়ে যেখানে সেখানে অধিক বসতি গড়ে উঠছে। কিন্তু ফসলি জমি এক ইঞ্চিও বাড়ছেনা। অথচ যেভাবে প্রকাশ্য ফসলি জমিতে একের পর এক পুকুর খনন-ভরাট এবং অপরিকল্পিতভাবে যত্রতত্র বসতি গড়ে তোলা হচ্ছে তাতে খাদ্যশস্য উৎপাদন কমে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম চরমভাবে খাদ্য ঘাটতিতে পড়বে। তাই দ্রুত ফসলি জমি রক্ষায় পুকুর খনন-ভরাটকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানান তারা।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, বাঁকা মাঠে প্রায় ৮ বিঘা ফসলি জমিতে চারটি ভেকু মেশিন দিয়ে দিন-রাত চলেছে পুকুর খনন। বেশ কিছুদিন আগেও উপজেলার বড় বিশা গ্রামের মাঠে কয়েক স্থানে মোট ২০-২৫ বিঘা জমিতে চলছে পুকুর খনন। এর মধ্যে সাড়ে সাত বিঘা জমির মালিক দিদারুল আমিনের সাথে কথা হলে পুকুর খননে জমির শ্রেণী পরিবর্তন করেছেন কি না জানতে চাইলে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।
আত্রাই উপজেলা কৃষি অধিদফতরের তথ্যমতে, উপজেলায় মোট ফসলি জমির পরিমাণ ২৪ হাজার ৫০ হেক্টর। এর মধ্যে গত পাঁচ বছরে পুকুর খননসহ বিভিন্ন কারণে প্রায় ১৫০ বিঘা ফসলি জমি কমেছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ প্রসেনজিৎ তালুকদার বলেন, জমির মালিক তার জমিতে পুকুর খনন করলে তাতে আমরা বড়জোর নিরুৎসাহিত করতে পারি কিন্তু বাধা দিতে পারি না। কিন্তু ফসলি জমিতে পুকুর খননে শুধু বাধাই নয়, আইন প্রয়োগ করে ফসলি জমি সুরক্ষার নির্দেশনা রয়েছে। তাহলে কেন পদক্ষেপ নেয়া যাবে না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ফসলি জমি কৃষকের ব্যক্তি মালিকানা সম্পত্তি। কৃষক জমিতে কী করবে সেটা তার ব্যক্তিগত বিষয়। এখানে কৃষকের বিরুদ্ধে শক্তভাবে আইনও প্রয়োগ করা যাবে না।
নওগাঁ জেলা কৃষি অধিদফতরের উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ব্যক্তি মালিকানা সম্পত্তি হলেও যা ইচ্ছে তা করা যাবে না। ফসলি জমিতে পুকুর খনন করতে হলে অবশ্যই ভূমি সুরক্ষা আইন মেনেই করতে হবে।
এ বিষয়ে মুঠোফোনে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সিনথিয়া হোসেনের সাথে কথা বলে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আত্রাই উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ফসলি জমিগুলোতে নির্বিচারে পুকুর খননকারির বিরুদ্ধে কি কি পদক্ষেপ নিয়েছেন বা নিবেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা বলবো কিন্তু এটি যেহেতু অফিসিয়াল বিষয় সেহেতু আমার তথ্য দেয়ার কোন এখতিয়ার নেই। পদক্ষেপ বিষয়ে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এ বিষয়ে আপনাকে বলতে পারবে। #
Leave a Reply