বৈশাখী মেলার জন্য আত্রাইয়ে তৈরি হচ্ছে দৃষ্টিনন্দন কাগজের ফুল বৈশাখী মেলার জন্য আত্রাইয়ে তৈরি হচ্ছে দৃষ্টিনন্দন কাগজের ফুল – এইবেলা
  1. admin@eibela.net : admin :
বুধবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:০৯ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
কমলগঞ্জে চোরাচালান ও মাদক পাচার প্রতিরোধে বিজিবি’র জনসচেতনতামূলক সভা কমলগঞ্জে অগ্নিদগ্ধ ব্যবসায়ী দুরুদ মিয়া অবশেষে মারা গেলেন ওসমানীনগর গণফোরামের কমিটি ঘোষণা : আহ্বায়ক এ্যাডভোকেট মুজিবুল হক সদস্য সচিব আপ্তাব মিয়া কমলগঞ্জে পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া সেই আসামি শিমুল র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার ফিলিস্তিনে মুসলিম গণহত্যা : বড়লেখায় জাতীয় ইমাম সমিতির বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ বড়লেখায় বহির্বিশ্ব জাতীয়তাবাদী ফোরামের দুই নেতার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষ্যে সংবর্ধনা কুলাউড়ায় সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত হাফিজ আবুল কালামের জানাজার নামাজ রাতে অনুষ্ঠিত হবে কুলাউড়ায় চলন্ত ট্রেনের ১১টি বগি বিচ্ছিন্ন! বড়লেখায় মনিপুরি গৃহস্থের চুরি যাওয়া ৩ মহিষের ১টিসহ ১ চোর আটক : অবশেষে মামলা রেকর্ড বড়লেখায় গৃহবধূর রহস্যজনক মৃত্যু, পিতার অভিযোগ পরিকল্পিত হত্যা

বৈশাখী মেলার জন্য আত্রাইয়ে তৈরি হচ্ছে দৃষ্টিনন্দন কাগজের ফুল

  • বৃহস্পতিবার, ১০ এপ্রিল, ২০২৫

নাজমুল হক নাহিদ, আত্রাই (নওগাঁ) প্রতিনিধি :: আর মাত্র ক’দিন পরেই আসছে বাঙ্গালীর প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ। এই বৈশাখ উপলক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে বসবে বৈশাখী মেলা। তবে কাগজের বাহারী ফুল ছাড়া যেন পূর্নতা পায় না এসব মেলায়। কারন প্রিয়জনকে উপহার কিংবা ছোট্ট সোনামুনিদের খেলনা; কাগজের ফুলের কোন তুলনা হয় না। আর তাই কাগজের ফুলের যোগান দিতে দিন-রাত নানান রঙের বাহারি
কাগজ, কাপড় ও শোলা দিয়ে ফুল তৈরি করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন নওগাঁর আত্রাইয়ের জামগ্রামের ফুল কারিগররা। এই বৈশাখকে সামনে রেখে জামগ্রামের ফুলের কারিগররা স্টার, চর্কি, মানিক চাঁদ, গোলাপ, সূর্যমুখী, কিরণমালা, জবা, বিস্কুট, গাঁদাসহ বিভিন্ন নামের বাহারী নাম আর ডিজাইনে ফুল তৈরি করছেন। যেন দেখে মনে হবে এক একটা জীবন্ত ফুল।

আজ থেকে প্রায় ৪০ বছর আগে ওই গ্রামের ২-৩টি হিন্দু পরিবার এই ফুল তৈরির কাজ শুরু করেন। এখন তাদের হাত ধরে পুরো গ্রামের মানুষের প্রধান আয়ের উৎস এই ফুল তৈরি। বর্তমানে ওই গ্রামের প্রায় ৪শ পরিবার এই বাহারি ফুল তৈরির কাজে নিয়োজিত। সংসার দেখভাল করার পাশাপাশি গ্রামের নারী-পুরুষ, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, ছোট-বড় সবাই এই ফুল তৈরি করার কাজ করে থাকেন। দেশের বিভিন্ন স্থানে বসবে বৈশাখী মেলা আর এই মেলাগুলোকে আরো বর্ণিল সাজে সাজাতে তাদের এই প্রাণান্তর চেষ্টা। পাশাপাশি স্বাবলম্বী হচ্ছেন ফুল কারিগররা। আর তাই পহেলা বৈশাখ উপলক্ষ্যে কাক ডাকা ভোর থেকে শুরু করে রাত অবধি কাজ করে যাচ্ছেন ফুল তৈরির কারিগররা। গ্রামে ঢুকতেই চোখে পড়বে বিভিন্ন স্থানে জটলা বেঁধে কয়েকজন মিলে তৈরি করছে এই ফুলগুলো।

ফুল তৈরির পর দেশের বিভিন্ন স্থানে ফেরি করে বিক্রি করে ব্যবসায়ীরা। তবে পহেলা বৈশাখে এই ফুলের চাহিদা থাকে সবচেয়ে বেশি। তবে দুই ঈদে, বিভিন্ন পূজা ও মেলায়ও এই ফুল বিক্রি করা হয়। কেউবা কাপড়, কাগজ আর বাঁশসহ নানা উপকরন দিয়ে সকাল থেকে রাত অবধি ফুল তৈরির কাজ করে চলেছেন। পরিবারের একজন নয়, ফুল তৈরির এ কাজ করছেন পরিবারের সকলেই। বিশেষ করে বাড়ির নারীরা সংসারের কাজ-কর্ম সেরে তৈরি করছেন এসব বাহারী ফুল। খুব বেশি পরিশ্রম না হলেও ধৈর্য সহকারে করতে হয় এই কাজগুলো। বাড়ির সকলে মিলে ফুল তৈরির পর পুরুষরা বিক্রির উদ্দেশ্যে চলে যায় জেলা ও জেলার বাহিরে। অর্থাৎ দেশের ৬৪ জেলাতে।

সেখানে গিয়ে তারা ১৫-২০ দিন পর্যন্ত অবস্থান করে ফুলগুলো বিক্রি শেষ করে পুনরায় বাড়ি ফিরেন। এতে করে বাৎসরিক একটি বড় অংকের আয়ও করে থাকেন ফুলের কারিগররা।

জামগ্রামের ফুল কারিগর সুরুজ ইসলাম দুলু বলেন, প্রথমে আমার দাদা, এরপর আমার বাবা। তারা গত হওয়ার পর আমিও দীর্ঘ ২০ বছর ধরে এই ফুল ব্যবসা করে আসছেন। এসব ফুল তৈরির উপকরন দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আমদানি করা হয়। তারপর সেগুলোকে প্রক্রিয়াজাত করে ফুলে রূপান্তরিত করা হয়। এই ফুল তৈরির কাজে তার স্ত্রী ও দুই সন্তান সহযোগিতা করে থাকেন। পহেলা বৈশাখ আসার এক মাস আগে থেকে শুরু হয় এসব ফুল তৈরির কাজ।

ওই গ্রামের ফুলের কারিগর মনিরুল ইসলাম কানন বলেন, তার বাবা এই ফুল তৈরি ও তৈরিকৃত ফুল বিভিন্ন জেলায় পাইকারী বিক্রির কাজ করতেন। সেই সুবাদে তিনিও এ কাজ করছেন। বর্তমানে তিনি, তার স্ত্রী, দুই সন্তান ও বাবা-মা যৌথভাবে সংসার করছেন। তবে এই ফুল তৈরি থেকে যে আয় হয় তা দিয়ে অনেক স্বচ্ছলভাবেই দিন কেটে যায় তাদের। তারা সারা বছর এ কাজ করে থাকেন।

৫৫ বছর বয়সি আমিনুল ইসলাম বুলু নামে এক ফুল ব্যবসায়ী জানান, জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই তিনি এই ফুল বিক্রির সাথে জড়িত। ফুলগুলো পার্শ্ববর্তী জয়পুরহাট, নাটোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বগুড়া ও রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বসা বৈশাখী মেলাগুলোতে বিক্রির উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হয়। যে এলাকায় যাওয়া হয় সেখানে তাবু খাটিয়ে নিজেরাই রান্না-বান্না করে খেতে হয়। এরপর সব ফুল বিক্রি হয়ে গেলে আবার ফিরে আসা হয়। এতে করে পহেলা বৈশাখ, দূর্গাপূজাসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মৌসুমভেদে লাভ হয় প্রায় ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত।

ফুলের কারিগর আফরোজা বানু বলেন, ফুল তৈরিতে পরিবারের গৃহিনীদের অবদান সবচেয়ে বেশি। সংসারের সব কাজ সম্পন্ন করে পরিবারের পুরুষদের এই ফুল তৈরিতে সাহায্য করি। তিনি আরো বলেন, সরকার থেকে
বিনা অথবা স্বল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থা করলে আমাদের এ শিল্পটি আরো এগিয়ে যাবে। আত্রাই মোল্লা আজাদ সরকারী কলেজে পড়–য়া শিক্ষার্থী পুজা বলেন, বাবা এই ফুলের ব্যবসা করে আমাদের লেখাপড়ার খরচ চালাচ্ছেন। আমিও পড়ালেখার পাশাপাশি ফুলের কাজ করে পরিবারকে সাহায্য করে থাকি। এতে করে আমার হাত খরচ চলে যায়।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. কামাল হোসেন বলেন, এটি একটি ঐতিহ্যপূর্ণ শিল্প। যার কদর দেশজুড়ে। সৌখিন মানুষ ও শিশুদের কাছে এই বাহারি কৃত্রিম ফুলগুলোর চাহিদা অনেক বেশি। এই ফুল কারিগররা
শুধু তাদের উপার্যনই নয়; বাংলার সকল সাংস্কৃতিক উৎসবকে বর্ণিল করতেও বিশেষভাবে ভূমিকা রাখছেন। এটা একটি ক্ষুদ্র কুটির শিল্প। আর এই শিল্পের তৈরি ফুলগুলি দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় বিক্রি হচ্ছে।
শুধু পহেলা বৈশাখ নয়, বিভিন্ন গ্রামীন মেলার সোন্দর্যবর্ধনে ব্যপক ভূমিকা রাখে এই জামগ্রামের ফুল। এর সাথে জড়িত কারিগরদের জন্য উন্নতমানের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করাসহ স্বল্পসুদে ঋণের ব্যবস্থা করার আশ্বাস প্রদান করেন।#

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো সংবাদ পড়ুন
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২২ - ২০২৪
Theme Customized By BreakingNews