এইবেলা, জুড়ী ::
নির্মাণাধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাদ ঢালাইয়ে কাঁদামিশ্রিত পাথর ব্যবহার করা হচ্ছিল। পরে এলাকাবাসীর আপত্তিতে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজ বন্ধ রাখে। ঘটনার দুইদিন পর সেই পাথর দিয়েই আবার কাজ শুরু করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
জানা যায়, মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার জায়ফরনগর ইউনিয়নের ভবানীপুর এলাকায় একটি নতুন টেকনিক্যাল কলেজ নির্মাণ করা হচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির নাম, তৈমুছ আলী টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ।গত ২৩ জুন মাটি মিশ্রিত পাথর দিয়ে কাজ করার অভিযোগে এলাকাবাসীর আপত্তিতে কাজ বন্ধ রাখলে ও অদৃশ্য ছায়ায় আজ ২৫ জুন বৃহস্পতিবার থেকে কাজ শুরু করে দেওয়া হয়েছে।
শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর সুত্রে জানা গেছে, গত অর্থ বছরে (২০১৮-’১৯) ১৫ কোটি ৪৭ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রতিষ্ঠানটি নির্মাণের কাজ পায় ‘এম এন এন্টারপ্রাইজ’ ও ‘ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং’ নামের ঢাকার দুটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। চলতি অর্থ বছরের (২০১৯-’২০) জুন মাসে কাজটি সম্পন্ন হওয়ার কথা। কিন্তু, বিভিন্ন সমস্যার কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না। কাজের মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এ পর্যন্ত প্রায় ২০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। গত ২৩ জুন সকাল ৯ টার দিকে প্রতিষ্ঠানের একাডেমিক ভবনের দ্বিতীয় তলার পাঁচ হাজার ৭০০ বর্গফুট আয়তনের ছাদের ঢালাইকাজ শুরু হয়।
এলাকাবাসী জানায়, ঢালাইকাজের জন্য আনা নির্ধারিত আকারের পাথরে প্রচুর পরিমাণে কাদাঁ মেশানো ছিল। অথচ, পাথর না ধুয়ে তা সিমেন্ট ও বালুর সঙ্গে মিশ্রণযন্ত্রে ফেলা হচ্ছিল। এভাবেই ঢালাইকাজ চলছিল। স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে খবর পেয়ে বেলা ১২টার দিকে স্থানীয় জায়ফরনগর ইউপির চেয়ারম্যান দুই জন ইউপি সদস্য ও গ্রাম পুলিশের কয়েক জন সদস্যকে সেখানে পাঠান। এ সময় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান লোকজন কাদামিশ্রিত পাথর ব্যবহারে কোনো সমস্যা হবে না বলে দাবি করেন। এ নিয়ে দুই পক্ষের তর্কাতর্কি হলে কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়।
ইউপি সদস্যরা কাদামিশ্রিত পাথর ব্যবহারের বিষয়টি মুঠোফোনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) জানান। পরে তাঁরা কিছু পাথরের নমুনা ইউএনও’র কার্যালয়ে নিয়ে যান। এ সময় ইউএনও কাজ তদারকির দায়িত্বে থাকা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীদের ভালোভাবে পাথর পরিস্কার করার পর ঢালাইকাজ শুরু করতে বলেন। কিন্তু, তা না করে পুনরায় ঢালাইকাজ শুরু হয়। বিকেল চারটার দিকে জায়ফরনগর ইউপির চেয়ারম্যান মাছুম রেজা ঘটনাস্থলে গিয়ে এ অবস্থা দেখে পুনরায় কাজ বন্ধ করে দেন।
ইউপি চেয়ারম্যান মাছুম রেজা বিকেল সাড়ে চারটার দিকে মুঠোফোনে বলেন, ‘পাথরে প্রচুর মাটি মেশানো। দায়সারাভাবে সেগুলো ধোয়া হচ্ছিল। এসব পাথর ব্যবহারের কারণে ঢালাই দুর্বল হবে। ভবিষ্যতে ছাদের ক্ষতি হতে পারে। ইউএনও’র নির্দেশনাকেও গুরুত্ব দেয়া হয়নি। তাই, কাজ বন্ধ রাখতে বলেছি।’
কাজ তদারকির দায়িত্বে থাকা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের জুড়ী কার্যালয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আবু সাঈদ রাহী বলেন, ‘পাথর ধোয়ার কাজটি সংশিøষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লোকজনের। তাঁরা এ কাজটি ঠিকভাবে করেননি। এলাকাবাসী আপত্তি জানানোয় কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ছাদের এক হাজার ৮০০ বর্গফুট জায়গায় ঢালাই হয়ে গেছে। আজ (বৃহস্পতিবার) পাথর ধোয়ার পর তারা কাজ শুরু করেছে।’
ইউএনও অসীম চন্দ্র বণিক বলেন, ‘মানুষ এখন অনেক সচেতন। তাঁদের চোখ ফাঁকি দেয়ার সুযোগ নেই। পাথর ধোয়ার পর তা দেখে কাজ শুরু করতে বলা হবে।’#
Leave a Reply