আর সাম্প্রতিক সময়ে যে হারে ব্রীজ ও কালভার্টের মুখ ভরাট করা হচ্ছে তাতে আগামীতে পরিবেশ ও জনজীবন হুমকিতে পড়ার আশঙ্কার কথা জানিয়ে এখনি কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বলে মনে করছেন সচেতন মহল। দিনেদিনে জনসংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি বাড়ছে বসতভিটার চাহিদা।
আর এ চাহিদা পূরণ করতে ইচ্ছে মতো কৃষিজমি, নালা, ডোবা, খাল ও দলা জমির শ্রেণী পরিবর্তন করে গড়ে তোলা হচ্ছে ঘর-বাড়ি। জমির শ্রেণী পরিবর্তনের ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসকের অনুমতি নেয়ার বিধান থাকলেও তা জানেন না অনেকেই। আবার জানলেও তা মানছেন না কেউ কেউ। বিধানকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে জমির শ্রেণী পরিবর্তন করে বসতি নির্মাণের পাশাপাশি কেউ কেউ বসতি গড়তে ব্রীজ ও কালভার্টের মুখ ভরাট করছেন ইচ্ছে হলেই। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পানি নিস্কাসনের জন্য পাকা ও কাঁচা রাস্তায় নির্মিত অনেক ব্রীজ ও কালভার্টের মুখ ভরাট করা হয়েছে। উপজেলার শাহবাজার-গেটের বাজার সড়কের ব্রীজের মুখ ভরাট করে ইতিমধ্যেই গড়ে তোলা হয়েছে ঘর- বাড়ি।
বড়ভিটা ইউনিয়নের উত্তর বড়ভিটা গ্রামে সদ্য পুনঃনির্মিত পাশাপাশি দুটি কালভার্টের মুখ ভরাট করে বসতি গড়ে তোলার প্রস্তুতি চলছে।
কালভার্ট দুটির মুখ ভরাট করায় চলতি বোরো মৌসুমে অনেক জমির ধানক্ষেত পানিতে তলিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। ওই এলাকার কৃষক বাদল সরকার, সিরাজ আলী, আব্দুর রশিদ ও নজরুল ইসলাম বকসী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এই কালভার্ট দিয়ে আমাদের জমির পানি নেমে যেত। হঠাৎ করে কালভাট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে শুকনো মৌসুমের বৃষ্টিতেই ফসল নস্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
কালভাটের মুখ খুলে না দিলে আগামী আমন মৌসুমে আমাদের এসব জমিতে জলাবদ্ধতার কারণে চাষাবাদ করা যাবেনা। আমরা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। একই এলাকার কালি মন্দির সংলগ্ন আরেকটি কালভার্টের মুখ ভরাট করতে মাটি ফেলা হচ্ছে। ঘোগারকুটি গ্রামেই গত কয়েক বছরে আটটির মতো কালভার্টের মুখ ভরাট করা হয়েছে।
ফুলবাড়ী সদরের অদূরে ফুলবাড়ী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন একটি ব্রীজের মুখ ভরাট করে গড়ে তোলা হয়েছে ঘর-বাড়ি। এছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ব্রীজ ও কালভার্টের মুখ ভরাটের চিত্র দেখা গেছে।
ব্রীজ ও কালভার্টের মুখ ভরাট করায় বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যাওয়া ক্ষেতের ফসল বাঁচাতে জন্য গত আমন মৌসুমে উপজেলার সদর ইউনিয়নের কবির মামুদ ও চলতি বোরো মৌসুমে বড়ভিটা ইউনিয়নের বড়লই গ্রামের কৃষকরা ব্রীজ ও কালভার্টের মুখ ভরাটকারীর বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ করার ঘটনাও ঘটেছে।
অভিযোগ প্রাপ্তির সাথে সাথে উপজেলা প্রশাসন পদক্ষেপ নেয়ায় রক্ষা পায় ওই দুই এলাকার ক্ষেতের ফসল। পানি নিস্কাসনের জন্য নির্মিত এসব ব্রীজ ও কালভার্টের মুখ ভরাটে ফসলি জমিতে বাড়ছে জলাবদ্ধতা। সামান্য বৃষ্টিতেই হুমকিতে পড়ছে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার শতশত একর কৃষি জমির ফসল। এসব এলাকার ভুক্তভোগী কৃষক ও সচেতন অনেকের মতে, ভরাট হয়ে যাওয়া ব্রীজ ও কালভার্টের মুখ খুলে দিয়ে পানি নিস্কাসনের দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে আগামীদিনে কৃষিতে জলাবদ্ধতার বিরূপ প্রভাব পড়বে। পাশাপাশি আইন অমান্য করে আর কেউ যেন ব্রীজ-কালভার্টের মুখ ভরাট করতে না পারে সেজন্য কার্যকর ব্যবস্থা নিতে ও পানি নিস্কাসনের জন্য ব্রীজ ও কালভার্টের সংস্কারের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি দাবিও জানান।#
Leave a Reply