বিশেষ প্রতিনিধি :: মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার ফুলতলা ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন আগামী ২৯ ডিসেম্বর। ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বার ও সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ৪৬ প্রার্থীর নির্ঘুম প্রচার-প্রচারণায় শেষ মুহুর্তে জমে উঠেছে ভোটের মাঠ। নির্বাচনের শেষ মুহুর্তে প্রার্থীরা নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটারদের মন জয়ে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তীব্র শীতকে উপেক্ষা করে রাত অবধি ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন প্রার্থীরা। এছাড়া নির্বাচনী সভা ও উঠোন বৈঠক করে নানা উন্নয়নের ফুলঝঁড়ি দিচ্ছেন চেয়ারম্যান প্রার্থীরা। এবারের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৩ জন প্রার্থী অংশ নিয়েছেন। নির্বাচনে প্রার্থীরা হচ্ছেন-আওয়ামীলীগের মনোনীত মাসুক আহমদ (নৌকা), আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আব্দুল আলিম সেলু (ঘোড়া)। স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী মোস্তফা মিয়া (আনারস)। তিনজনের মধ্যে আব্দুল আলিম সেলু ভোটের মাঠে বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন এবং তিনি চমক দেখাতে পারেন বলে ভোটারদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে।
ইতিমধ্যেই উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোর আইনশৃংঙ্খলা নিয়ন্ত্রণসহ যাবতীয় নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এবারের নির্বাচনে ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডের মোট ভোটার সংখ্যা হলো ১৩ হাজার ৩৫৬। মোট ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা হলো ১১টি।
রোববার (২৫ ডিসেম্বর) সরেজমিনে ফুলতলা ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকাসহ চা-বাগান ঘুরে দেখা যায়, চেয়ারম্যান প্রার্থীরা তাদের নির্বাচনী ইশতেহারের নানা দিক তুলে ধরছেন ভোটারদের কাছে। তবে প্রথমবারের মতো ভোটারগণ ভোট দিবেন ইভিএম পদ্ধতিতে। কিন্তু ইভিএমে ভোট হওয়ায় ভোটাররা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ নিয়ে রয়েছেন দুঃশ্চিন্তায়। তবে চা-বাগানের শ্রমিকরা ক্ষোভ ঝাঁড়লেন নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক চা-শ্রমিক বলেন, করোনা পরিস্থিতি তথা চা-শ্রমিকদের মজুরী আন্দোলনের সময় বাগানের শ্রমিকদের পাশে ছিলেন না বর্তমান চেয়ারম্যান মাসুক আহমদ। এমনকি বাগানসহ ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় রাস্তাঘাটের তেমন উন্নয়ন করেননি। ভোট আসলে সবাই আমাদের কাছে ভোট ভিক্ষার জন্য আসেন। ভোট চলে গেলে আমাদের খবর কেউ রাখে না। দুইজন প্রার্থী আওয়ামীলীগ করেন। একজন নৌকা পেয়েছেন অন্যজন বিদ্রোহী আছেন। তাই আমরা এবার প্রতীক নয় যোগ্য প্রার্থী হিসেবে সাবেক চেয়ারম্যান ফয়াজ আলীর ছেলে সেলুকে ভোট দিব।
আব্দুল আলিম সেলুর পক্ষে রয়েছেন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগেরও বেশ কিছু নেতাকর্মী। এছাড়া চা-বাগানের সিংহভাগ ভোটার ও বিএনপি সমর্থিত ভোটাররাও রয়েছেন তাঁর পক্ষে। ফলে তিনি এবারের নির্বাচনে বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন বলে জানা গেছে। এদিক থেকে অনেকটা চাপে রয়েছেন আওয়ামীলীগের প্রার্থী মাসুক আহমদ। কারণ তাঁর নির্বাচনী প্রচারণায় উপজেলা আওয়ামীলীগ ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের দেখা যায়নি।
ইউনিয়নের ভোটারদের কাছে আব্দুল আলিম সেলু একজন সৎ ও যোগ্য ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। কারণ তাঁর পিতা এই ফুলতলা ইউনিয়ন পরিষদের পাঁচ বারের ইউপি সদস্য ছাড়াও চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে মানুষের মন জয় করেছিলেন। বাবার দেখানো পথে হাটার জন্য ঘোড়া প্রতীক নিয়ে বাবার জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে ইতোমধ্যে সেলু প্রচার-প্রচারণায় ব্যাপক সাড়া ফেলে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। ইউনিয়নের প্রতিটি পাড়া মহল্লায় ঘোড়া প্রতীকে ভোট দেয়ার জন্য ভোটারদের মন জয় করে তাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। বিশেষ করে চা বাগানের সিংহভাগ ভোটারদের সমর্থন পাচ্ছেন তিনি।
ভোটারদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, এ ইউনিয়নে আব্দুল আলিম সেলুর বিশাল ভোট ব্যাংক রয়েছে। চা-বাগান অধ্যুষিত ফুলতলা ইউনিয়নে মোট ভোটের মধ্যে চা-শ্রমিকদের ত্রিশ শতাংশ ভোটের মধ্যে সিংহভাগ ভোট তিনি ভাগিয়ে নিবেন। কারণ চা-শ্রমিকদের কল্যাণে সেলুর পিতা মরহুম ফয়াজ আলী আমৃত্যু কাজ করে গেছেন।
চেয়ারম্যান প্রার্থী আব্দুল আলিম সেলু এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, একমাত্র মানুষের ভালোবাসার টানে এবং পিতার হারানো মসনদটি ফিরে পেতেই ২৩ বছরের প্রবাস জীবন ফেলে এসে এবারের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন। প্রবাসে তিনি ভালো বেতনে চাকুরী করতেন। সেই চাকুরী ফেলে এসে দেশে মানুষের কল্যাণে কাজ করতে চান। ফুলতলা ইউনিয়নের অনেক দূরদর্শার চিত্র তুলে এই তরুণ প্রার্থী বলেন, ফুলতলা ইউনিয়নবাসী সরকারী পরিসেবা নিতে এসে নানারকম হয়রানীর শিকার হন। চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরের জন্য ইউনিয়নের জনগণ দিনের পর দিন অপেক্ষা করতে হয়। তিনি নির্বাচিত হলে এসব হয়রানী বন্ধসহ স্বল্প সময়ে জন্ম-নিবন্ধন সনদ প্রদান, বাল্য বিবাহ প্রতিরোধ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য খাত, চা-শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নসহ অবহেলিত এই ইউনিয়নের সাধারণ জনগণকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সকল সমস্যা সমাধানে কার্যত উদ্যোগ নিবেন। এছাড়া রাস্তা-ঘাট নির্মাণ, চা শ্রমিকদের গবাদিপশু চুরি ইত্যাদি বন্ধে দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বললেন তিনি। আব্দুল আলিম সেলু আরো জানান, এবার বাগানের চা-শ্রমিকদের কাছ থেকে ব্যাপক সমর্থন পাচ্ছেন। কারণ তাঁর বাবা চা-শ্রমিকদের কল্যাণে আমৃত্যু কাজ করে গেছেন। বিজয়ী হলে তাঁর পিতার অসমাপ্ত কাজ বাস্তবায়ন ও নির্বাচিত ইউপি সদস্যদের নিয়ে ফুলতলা ইউনিয়নকে একটি মডেল ইউনিয়নে রূপান্তর করতে তিনি দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। তিনি ইউনিয়নবাসীর সেবায় তার পিতার ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বারটি সচল করে নিয়েছেন। রাজকী ফাঁড়ির সাড়ে ৩ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ করবেন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে। এছাড়া প্রবাসীদের নিয়ে গঠিত ফুলতলা প্রবাসী কল্যাণ পরিষদের প্রধান উপদেষ্টা আব্দুল আলিম সেলু বলেন, প্রবাসীদের অর্থায়নে ইতিমধ্যেই অনেক কাজ করেছি আমরা। নির্বাচিত হলে আরো বেশি পরিসরে কাজ করবেন বলে জানান। তিনি অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানান।#
Leave a Reply