এইবেলা, কুলাউড়া ::
হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার সাটিয়াজুরী ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সেলিম আহমদ। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে হবিগঞ্জের মুর্তিমান আতঙ্ক পলাতক এমপি আবু জাহিরের ছত্রছায়ায় অবৈধভাবে বালুবিক্রি করে বনে যান কোটি কোটি টাকার মালিক। তার বিরুদ্ধে হবিগঞ্জের বিভিন্ন থানায় রয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মামলাসহ একাধিক মামলা। তবুও তিনি দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন হবিগঞ্জ থেকে মৌলভীবাজার। এবার তিনি থাবা বসিয়েছেন মৌলভীবাজারের মনু নদীর কুলাউড়ার বালু মহালে।
হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার সাটিয়াজুরী ইউনিয়নের সুন্দরপুর গ্রামের বাসিন্দা সেলিম আহমদ। একসময় র্যাবে চাকরি করতেন। বিগত সময়ে তিনি চাকরি বাদ দিয়ে জড়িয়ে পড়েন বালু ব্যবসায়। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে ক্ষমতার দাপটে বালু বিক্রি করে কোটিপতি হওয়া এই সেলিম আহমদ খ্যাতি লাভ করেন বালু সেলিম নামে। এই নামে হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার জেলায় পরিচিতি লাভ করেছেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলার ঘটনায় ২০২৪ সালের ১১ সেপ্টেম্বর চুনারুঘাট উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক নাছির উদ্দিন বাদী হয়ে যুবলীগ নেতা সেলিম আহমদসহ একাধিক আওয়ামী লীগ-যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে চুনারুঘাট থানায় মামলা (নং-০৮) দায়ের করেন।
ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর আওয়ামী লীগের অবৈধ এমপি আবু জাহিরের ছত্রছায়ায় একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তারকারি সন্ত্রাসী ও কালোবাজারী বালু সেলিম কিভাবে কুলাউড়ার বালুমহাল চলতি সনের ইজারা পেয়েছে সেটা নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন উঠেছে। বালু সেলিমের স্ত্রী নাজমুন নাহার লিপিকে দিয়ে ১৪৩২ বাংলা সনের জন্য কুলাউড়া উপজেলার মনু নদীর ১৬১ দশমিক ১৩ একর আয়তনের বালু মহালের ইজারা নেন। বালুমহালের দরপত্র বাতিল করে যুবলীগ নেতা সেলিম আহমদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য মৌলভীবাজার সদর উপজেলার বাহারমর্দন এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী তোফায়েল আহমদ সম্প্রতি জেলা প্রশাসক বরাবর একটি লিখিত অভিযোগও দেন।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, বালু সেলিমের স্ত্রী নাজমুন নাহারের নামে বালুমহাল দরপত্র অংশগ্রহনের জন্য তালিকাভুক্তি সনদ বাতিল করে তাদেরকে আইনের আওতায় এনে দরপত্র বাতিল করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক। অন্যথায় তার অবৈধ উপার্জিত অর্থ আবারো ফ্যাসিস্টদের পক্ষে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে ব্যবহার করে দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করবে।
এদিকে বর্তমান ইজারাদার নাজমুন নাহার বালু মহাল রক্ষণাবেক্ষণসহ বালু উত্তোলন, পরিবহন, বিপনন সরবরাহের কার্যাদি গত ০৮ মে থেকে কুলাউড়ার লস্করপুর গ্রামের বাসিন্দা ব্যবসায়ী আব্দুল হাছিবকে আমমোক্তার (রেজি নং ১৯৮৭) নিয়োগ করেন। পরে নাজমুন নাহার, তাঁর স্বামী সেলিম আহমদ, সহযোগী দীপক দে গং সন্ত্রাসী লোকের প্ররোচনায় সরেজমিনে ভয়ভীতি প্রদর্শন করলে ব্যবসায়ী আব্দুল হাছিব কুলাউড়া সিনিয়র সহকারি জজ আদালতে স্বত্ব মামলা (১৭৯/২০২৫) দায়ের করেন। মামলায় ১নং বিবাদি নাজমুন নাহার ও তার স্বামী ২ নং বিবাদি সেলিম আহমদের বিরুদ্ধে সিনিয়র সহকারি জজ (কুলাউড়া) ইসরাত জাহান অন্তবর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞার আদেশ দেন। তাছাড়া ৩নং বিবাদি জামিল ইকবাল ৪নং বিবাদি আব্দুল মুকিত ও ৫নং বিবাদি দীপক দে বালুমহাল সংক্রান্ত কার্য্যাদি বাঁধা প্রদানের পাঁয়তারায় থাকায় তাদেরকেও পক্ষভুক্ত করে নিষেধাজ্ঞা আদেশ দ্বারা বাদীপক্ষের দখলে বিঘœ সৃষ্টি না করার মর্মেও নিষেধাজ্ঞা প্রদান করেন।
এদিকে আদালত থেকে নির্দেশনা পাওয়ার পর আব্দুল হাছিব বালুমহালের বিভিন্ন স্থানে আদালতের নির্দেশনা সম্বলিত সাইনবোর্ড টাঙিয়ে রাখেন। ওই সাইনবোর্ডটি সাবেক ইজারাদার দীপক দে, হাজীপুরের বাসিন্দা সুমন আহমদসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি চক্র তাদের ভাড়াটে বাহিনী দিয়ে উপড়ে ফেলে। প্রশাসন বালু জব্দ করলেও সেই বালু বিক্রির চেষ্ঠা চালিয়ে যাচ্ছে বর্তমান ইজারাদারের লাঠিয়াল বাহিনী। এতে স্থানীয় লোকজন প্রতিবাদী হলে তাদেরকে মামলা-হামলার ভয় দেখানো হচ্ছে। যেকোন সময় আইনশৃঙ্খলার অবনতির আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক ইজারাদার কুলাউড়ার দীপক দে ও বর্তমান ইজারাদার নাজমুন নাহার লিপি পূর্বেও অবৈধভাবে জমাট করা প্রায় ৫ কোটি ৫০ লাখ ঘনফুট বালু থেকে ইতিমধ্যে প্রায় ১ কোটি ঘনফুট বালু অবৈধভাবে বিক্রি করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় লোকদের অভিযোগের ভিত্তিতে প্রশাসন হাজীপুর ও টিলাগাঁও ইউনিয়নের বিভিন্নস্থানে জমাটকৃত বালুর স্তুপ চিহ্নিত করে লাল ঝান্ডা দিয়ে জব্দ করা হয়েছে। বালু পরিবহনে আদালত থেকে নাজমুন নাহার লিপির বিরুদ্ধে আদেশ আসায় এবং উপজেলা প্রশাসন প্রায় ২৭ কোটি টাকার বালু জব্দ করায় ক্ষিপ্ত হয়ে আব্দুল হাছিবের লোজকনকে হয়রানি করার জন্য যুবলীগ নেতা সেলিম আহমদের স্ত্রী নাজমুন নাহার লিপি বাদী হয়ে ১২ জনের বিরুদ্ধে গত ১ জুলাই কুলাউড়া থানায় চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে মামলা (নং-১) দায়ের করেন।
মামলায় আসামী করা হয়েছে পৌরসভার লস্করপুর গ্রামের বাসিন্দা ব্যবসায়ী আব্দুল হাছিব, জয়পাশা গ্রামের বাসিন্দা ব্যবসায়ী ফয়জুর রহমান লিটন, শিহাব উদ্দিন, পৃথিমপাশার পুরশাই এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী কিবরিয়া হোসেন খোকন, রিজন মিয়া, টিলাগাঁওয়ের আমানীপুর এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী ময়না মিয়া, আশ্রয়গ্রামের বাসিন্দা ও টিলাগাঁও ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মুক্তাদির চৌধুরী, চক সালন গ্রামের বাসিন্দা ও জেলা ছাত্রদলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক গৌরাঙ্গ দে, হাজীপুর ইউনিয়নের কটারকোনা এলাকার বাসিন্দা ও ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক সভাপতি, বিএনপি নেতা খসরু মিয়া, ব্যবসায়ী আবু মিয়া, বিএনপি নেতা মসকন মিয়া, ব্যবসায়ী আব্দুর রাজ্জাক, খালেদ মিয়া। এরমধ্যে হাজীপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ব্যবসায়ী মসকন মিয়াকে গ্রেপ্তার করে। হয়রানিমূলক মামলায় বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত নেতাকর্মীদের আসামী করায় জনমনে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, গত ২৭ জুন বিকেলে হাজীপুর ইউনিয়নের মনু নদীর বালু মহাল কটারকোনা কাউকাপন ও কনিমোড়া এলাকায় বেআইনী জনতায় অনধিকার প্রবেশ করে তিন লক্ষ সতের হাজার টাকা চুরি, চাঁদা দাবি ও হত্যার হুমকি প্রদানের অপরাধ সংগঠিত হয়েছে। অথচও যেই স্থানের কথা এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে সেই স্থানে বর্তমান নাজমুন নাহার লিপির কোন দখল বা স্বত্ত্ব নেই। ওই জায়গায় পূর্বের ইজারাদার দিপক দের বালু জব্দ করা আছে। সেটিও বর্তমানে প্রশাসনের জিম্মায় আছে।
ব্যবসায়ী আব্দুল হাছিব ও ফয়জুর রহমান লিটন বলেন, বর্তমান ইজারাদারের বিরুদ্ধে আদালত অন্তবর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকার বালু বিক্রি করে সাবেক ও বর্তমান ইজারাদার। বিষয়টি জানতে পেরে ওই বালু জব্দ করে প্রশাসন। সেই ক্ষোভে নদী থেকে বালু উত্তোলন ও জব্দ করা বালু বিক্রি করতে না পারায় সম্পূর্ণ উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে আমাদের হয়রানি করার জন্য যুবলীগ নেতা সেলিম তার স্ত্রীকে দিয়ে চাঁদাবাজির মামলা করেছে পুলিশকে ম্যানেজ করে।
এ বিষয়ে যুবলীগ নেতা সেলিম আহমদে ও স্ত্রী নাজমুন নাহার লিপির মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। তাই তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
সহকারি কমিশনার (ভূমি) শাহ জহুরুল হোসেন জানান, ইজারার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে সেই বালু নেয়ার কোনো আইনী বিধান নেই। তবে বৈধ ইজারাদার নদী থেকে বালু তুলতে কোন আপত্তি নেই। কিছুদিন আগে অবৈধভাবে বালু বিক্রির খবর পেয়ে সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে বালু চুরি ও লুটপাটের প্রমাণ পেয়েছি। সেই বালু জব্দ করে প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে।
কুলাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. গোলাম আপছার বলেন, বাদীর অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা রুজু করা হয়েছে। বাদীর স্বামীর রাজনৈতিক কর্মকান্ডের বিষয়টি জানা নেই। তদন্ত ছাড়া কিভাবে চাঁদাবাজির মামলা দায়ের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এজাহারে অভিযুক্ত আসামীরা যদি ঘটনার সাথে জড়িত না থাকেন তাহলে চূড়ান্ত প্রতিবেদনে তাদেরকে অব্যাহতি দেয়া হবে। #
caller_get_posts
is deprecated. Use ignore_sticky_posts
instead. in /home/eibela12/public_html/wp-includes/functions.php on line 6085caller_get_posts
is deprecated. Use ignore_sticky_posts
instead. in /home/eibela12/public_html/wp-includes/functions.php on line 6085
Leave a Reply