এইবেলা, কুলাউড়া ::
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার দীর্ঘদিন ধরে জব্দ করা কয়েক কোটি ঘনফুট বালু এবার নিলামে তুলেছে উপজেলা প্রশাসন। বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও বালু নিলাম কমিটির আহবায়ক মো. মহিউদ্দিন স্বাক্ষরিত এক নিলাম বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্যটি নিশ্চিত করা হয়।
এলাকায় বালু নিয়ে বিবদমান দুটি পক্ষের মধ্যে দ্বন্ধের অবসান হচ্ছে। দুই বছরেরও অধিক সময় পর প্রকাশ্য ওই বালু নিলামে তোলায় এলাকার লোকদের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে । নিলামযোগ্য বালুর পরিমাণ ২ কোটি ৯৬ লক্ষ ৪১ হাজার ১৯২ ঘনফুট। যার মূল্য ধরা হয়েছে ১৩ কোটি ৩৩ লাখ ৮৫ হাজার ৩৬৪ টাকা।
এদিকে বালু নিলাম কার্য বাস্তবায়নের জন্য জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিনকে প্রধান করে চার সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করে দেয়া হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন, সহকারী কমিশনার (ভূমি), উপজেলা প্রকৌশলী ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের একজন প্রতিনিধি।
ওই বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, গত ২ জুলাই কুলাউড়া উপজেলার টিলাগাঁও ইউনিয়নের সালন, হাজীপুর ইউনিয়নের কনিমুড়া, হরিচক ও সাধনপুর নামক স্থানে ১৪৩০ বাংলা সনে মজুতকৃত মোট ২ কোটি ৯৬ লক্ষ ৪১ হাজার ১৯২ ঘনফুট অবৈধভাবে উত্তোলিত বালু জব্দ করা হয়। গত ৬ আগস্ট মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের রাজস্ব শাখা থেকে স্পট নিলামের মাধ্যমে জব্দকৃত বালু বিক্রয় করার জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হয়। বালু নিলাম ক্রয়ে আগ্রহী ব্যক্তিদের জব্দকৃত বালুর স্থান পরিদর্শন পূর্বক যথাসময়ে নিলাম কার্যে অংশগ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হয়। টিলাগাঁও ইউনিয়নের সালন এলাকায় জব্দ করা ১ কোটি ৬২ লক্ষ ১৩ হাজার ৬৮০ ঘনফুট বালুর মূল্য ধরা হয়েছে ৭ কোটি ২৯ লক্ষ ৬১ হাজার ৫৬০ টাকা। হাজীপুর ইউনিয়নের কনিমুড়া এলাকায় জব্দ করা ৭৯ হাজার ৫০ ঘনফুট বালুর মূল্য ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৫৫ হাজার ৭২৫ টাকা। হরিচক এলাকায় ১ কোটি ২৯ লক্ষ ৮৬ হাজার ৯৩২ ঘনফুট বালুর মূল্য ধরা হয়েছে ৫ কোটি ৮৪ লক্ষ ৪১ হাজার ১৯৪ টাকা। সাধনপুর এলাকায় ৩ লক্ষ ৬১ হাজার ৫৩০ ঘনফুট বালুর মূল্য ধরা হয়েছে ১৬ লক্ষ ২৬ হাজার ৮৮৫ টাকা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন বলেন, বিগত সময়ে হাজীপুর ও টিলাগাঁও ইউনিয়নের চারটি স্থানে জব্দ করা বালু অবৈধভাবে বিক্রির অভিযোগ ছিল। পরবর্তীতে সেই বালু নিলামের জন্য জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে চিঠি পাঠানো হয়। সেখান থেকে নির্দেশনা আসার পর উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জব্দ করা বালু প্রকাশ্য নিলামের বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে। এই নিলামের মাধ্যমে সরকারের কোষাগারে অনেক রাজস্ব জমা হবে। তিনি আরো বলেন, বালু নিলামের জন্য জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে চার সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করে দেয়া হয়েছে। আগামী ১৮ আগস্ট ৪টি স্থানে জব্দ করা বালু নিলাম করা হবে। নিলাম কার্য বাস্তবায়নে গঠিত কমিটির সদস্য ছাড়াও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশও উপস্থিত থাকবে।
উল্লেখ্য, মনু নদীর কটারকোনা বাজারসংলগ্ন বালুমহাল থেকে সরকার প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আয় করে। গত ১৪৩০ বাংলা সনে জেলা প্রশাসন থেকে ওই বালুমহাল ইজারা নেন পৃথিমপাশা ইউনিয়নের বাসিন্দা দীপক দে। বালু উত্তোলনের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও ফ্যাসিস্ট সরকারের সময়ে আওয়ামীলীগের জেলা ও উপজেলার শীর্ষ নেতাদের প্রভাব খাটিয়ে দিনরাত বালু উত্তোলন করে নদীর তীরবর্তী টিলাগাঁও ইউনিয়নের সালন, হাজীপুর ইউনিয়নের কনিমুড়া, হরিচক, সাধনপুরসহ বিভিন্ন স্থানে প্রায় কয়েক কোটি ঘনফুট বালু জমাট করেন দীপক দে। ওইসময় তিনি উত্তোলনকৃত বালু পুরোটা বিক্রি করেননি।
চলতি ১৪৩২ বাংলা সনে কুলাউড়ার কটারকোনা বালুমহালের ইজারা পান হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার বাসিন্দা যুবলীগ নেতা সেলিম আহমদের স্ত্রী নাজমুন নাহার লিপি। সাবেক ইজারাদার দীপক দে বর্তমান ইজারাদার না হলেও ব্যবসায়িক অংশীদার গড়ে তুলে পূর্বের জমাট করা কয়েক কোটি ঘনফুট বালু থেকে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে প্রায় এক কোটি ঘনফুট বালু অবৈধভাবে বিক্রি করেছেন বলে অভিযোগ উঠে।
স্থানীয় লোকজনের বিভিন্ন অভিযোগ ও এইবেলাসহ একাধিক গণমাধ্যমে প্রকাশের পর প্রশাসনের নির্দেশে জমাটকৃত বালুর স্তুপ চিহ্নিত করে জব্দ করার পর বালু প্রকাশ্য নিলামের বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে প্রশাসন।#
caller_get_posts is deprecated. Use ignore_sticky_posts instead. in /home/eibela12/public_html/wp-includes/functions.php on line 6121caller_get_posts is deprecated. Use ignore_sticky_posts instead. in /home/eibela12/public_html/wp-includes/functions.php on line 6121
Leave a Reply