এইবেলা, কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি:
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে রাস্তার পাশে ক্ষতিকর আকাশি, ম্যানজিয়ামসহ বিভিন্ন জাতের বিদেশী গাছের সামাজিক বনায়নে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষিক্ষেত। ফিবছর এসব জমিতে চাষাবাদকৃত কৃষকরা ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। দীর্ঘ সময় ধরে রাস্তার ধারে দ্রুত বৃদ্ধিকারী ও পরিবেশের ক্ষতিকর এধরণের গাছের বনায়ন চলছে। অল্প সময়ে অধিক লাভের আশায় বনবিভাগের মাধ্যমে বিদেশী গাছ দিয়ে বনায়নের হিড়িক শুরু হয়। এসব গাছের বনায়নে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
জানা যায়, বনবিভাগের মাধ্যমে গত কয়েক দশক ধরে বিদেশী প্রজাতির আকাশি, ম্যানজিয়াম, ইউক্যালিপটাস ও আকাশমনি জাতীয় গাছ দিয়ে বনায়ন শুরু হয়। অল্প সময়ে অধিক লাভের আশায় স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে নির্দিষ্ট একটি সময়ের জন্য রাস্তার ধারে এসব বনায়ন করা হচ্ছে। কৃত্রিমভাবে সামাজিক বনায়ন এবং ব্যক্তি উদ্যোগে বসত বাড়ির আশেপাশে এজাতীয় গাছের শোভা পায়। এই গাছগুলো বিদেশী প্রজাতির আগ্রাসী গাছ হিসাবে পরিচিত। এসকল গাছের ছায়ায় পড়ে ধান গাছে রোগ ও পোকার আক্রমন মারাত্মক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। গাছের পার্শ্ববর্তী এলাকায় ধানক্ষেত বিনষ্ট হয়। আকাশি গাছের পাতা সহজে পঁচে না এবং কৃষিক্ষেতে ব্যাপক ক্ষতি সৃষ্টি করে। প্রকৃতি, পরিবেশ ও কৃষিক্ষেতে ব্যাপক ক্ষতি বয়ে আনা গাছ দিয়ে বনায়ন বন্ধের দাবি তুলেছেন পরিবেশবিদ ও গবেষকরা। জেলা, উপজেলার প্রধান প্রধান সড়ক ছাড়াও গ্রামগঞ্জে রাস্তার দু’পাশে এসব গাছের সামাজিক বনায়নে ভরে উঠছে।
কমলগঞ্জের কৃষক সিদ্দিকুর রহমান, তোয়াবুর রহমান, ফটিকুল ইসলাম, মোবাশ্বির আলী বলেন, আকাশমনি, ম্যানজিয়াম এসব গাছ গাছালি চাষাবাদে কৃষিজমি বিনষ্ট, মৎস্য চাষাবাদে ব্যাপক ক্ষতির কারন হয়ে দাঁড়িয়েছে। গাছের ছায়ায় ধানী জমির জায়গা দখল করে। চাষাবাদকৃত ধান গাছ কেটে গরু মহিষকে খাওয়ানো ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না। কৃষকরা বলেন, আকাশি গাছের ছায়ায় ধান থেকে শুরু করে কোন ধরনের চাষাবাদ সম্ভব হয় না। একইভাবে মৎস্য খামারের পাশে এইসব গাছের কারনে মৎস্য চাষাবাদেও ক্ষতির কারন হয়ে দেখা দিয়েছে।
পরিবেশ কর্মী নূরুল মোহাইমীন মিল্টন বলেন, আমাদের প্রকৃতি ও পরিবেশের সাথে সামজ্ঞস্য নয় এমন প্রজাতির গাছের বনায়ন শুরু হয়ে আসছে দীর্ঘ সময় ধরে। আকাশিয়া, ম্যানজিয়াম, ইউক্যালিপটার্স জাতীয় বিদেশী প্রজাতির এ গাছগুলো স্থানীয় প্রজাতিদের জায়গা দখল করে সেগুলোকে বিপন্ন করে তোলে। এই গাছগাছালি শুধু কৃষিক্ষেতই বিনষ্ট করে না, মৎস্য চাষাবাদেও ক্ষতি করে এবং পশুপাখির খাদ্য তৈরি করে না।
তিনি আরও বলেন, যেকোনো প্রজাতি ভিন্ন পরিবেশ থেকে এনে বিস্তার ঘটাতে দিলে কালক্রমে তা হয়ে ওঠে আগ্রাসী প্রজাতি। আমাদের দেশেও এগাছগুলো আগ্রাসী হয়ে উঠছে এবং পরিবেশের ক্ষতি বয়ে আনছে। এসব গাছ দিয়ে বনায়ন সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হওয়া উচিত বলে তিনি মন্তব্য করেন।
এ ব্যাপারে কমলগঞ্জের রাজকান্দি বনরেঞ্জ কর্মকর্তা আবু তাহের বলেন, পূর্বে এক সময়ে কাঠের চাহিদা মেটাতে এসব গাছ দিয়ে বনায়ন শুরু হয়। বর্তমানে এসব গাছ রোপন এবং সরকারি নার্সারীগুলোতে আকাশমনি, ম্যানজিয়াম গাছের চারা উৎপাদন সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করা হয়েছে।#
Leave a Reply