ইবি ডেস্ক ::
ইতা যে বান দিরা, এখন বৃষ্টি দিলে আবার যেগাত যাইবো গিয়া। (যে বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে, তা বৃষ্টি হলেই যেখান থেকে মাঠি উঠানো হচ্ছে সেখানেই মিশে যাবে।) আমার আর ত্রাণ চাই না, সঠিকভাবে বাঁধটা মেরামত করি দেউক্কা (দেন)। পানি উন্নয়ন বোর্ড ও প্রতিরক্ষা বাঁধ মেরামতের সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের দায়িত্বহীনতা ও লাঘামহীন দুর্নীতির কারণে মনু নদীর বর্তমান এই অবস্থা। বাঁধ ভাঙলে পানি উন্নয়ন বোর্ড কিংবা ঠিকাদারের ক্ষতি নাই, তারা যথাসময়ে কাজ করে হোক কিংবা না করে হোক বিল সঠিক সময়ে উত্তোলন করতে ভুল করেন না। এভাবে ক্ষোভের সাথে কথাগুলো বলেছেন মিয়ার পাড়া গ্রামের মনু নদীর ভাঙনে সর্বস্ব হারানো মখলিছ মিয়া, আসুক মিয়া, সুজন মিয়া, সুফিয়ান মিয়া, ছুরুক আলী, সুফি মিয়া, শাহাব উদ্দিন, রুহুল মিয়া, সুলতান মিয়া, ইব্রাহিম আলী, সুলতান মিয়া, মনির মিয়া, খালিক মিয়া ও মিরজান আলী প্রমুখ।
মৌলভীবাজারে মনু নদীর ভাঙন কবলিত ৮ স্থানে চলছে রিং (বিকল্প) বাঁধ নির্মাণের কাজ। নির্মাণাধীন বাঁধ দিয়ে ভাঙন কবলিত এলাকার মানুষ খুশি নয় বরং চরম ক্ষুব্ধ। বাঁধের একশ গজের ভেতর থেকে মাটি কাটার ভেকু (এক্সেভেটর) মেশিন দিয়ে তোলা হচ্ছে মাঠি। যেখান থেকে মাঠি তোলা হচ্ছে সেখানটায় ২ থেকে ৩শ ফুট গভীর পুকুর হয়ে যাচ্ছে। ফলে বৃষ্টি হলেই রিংবাঁধটি পুকুরে মিশে যাবে। বাঁধে যে দেয়া হচ্ছে তাতে ব্যবহৃত হচ্ছে শুধু পলি আর বালি। তারপরও যদি বস্তা ভর্তি করে দেয়া হতো তাহলে বাঁধ টেকার সম্ভাবনা ছিলো। ০৮ সেপ্টেম্বর রোববার সরেজমিন মনু নদীর মিয়ার পাড়া ভাঙন এলাকায় রিংবাঁধ নির্মাণ কাজ পরিদর্শণে গেলে মানুষ তাদের উদ্বেগ উৎক›ঠার কথা জানান।
মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড সুত্রে জানা যায়, আগস্ট মাসের বন্যায় মনু নদীর যে ৮টি স্থানে ভাঙ্গন সৃষ্টি হয়েছিলো সেখানে দ্রুততম সময়ে রিংবাঁধ নির্মাণ কাজ চলছে। এরমধ্যে কুলাউড়া উপজেলার মিয়ারপাড়া ও দক্ষিণ ভাগ এলাকায় দু’টি। এছাড়া রাজনগর উপজেলায় উজিরপুর, একামধু, কান্দিরপুলসহ ৬টি ভাঙ্গন এলাকায় রিং বাঁধ নির্মাণের কাজ চলছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সুত্র আরও জানায়, শনিবার ০৭ সেপ্টেম্বর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ উপদেষ্টা ফারুকী আযম ও সচিব মো: কামরুল হাসান সরেজমিন মনু নদীর ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শণ করেন।
এব্যাপারে মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জাবেদ ইকবাল জানান, যেভাবে কাজ হচ্ছে তাতে আমাদের কিছু করার নাই। ঠিকাদারকে এই বাঁধ নির্মাণে কোন টাকা দেয়া হবে না। রিংবাঁধ নির্মাণের জন্য আলাদা কোন বরাদ্ধ আসেনি। মানবিক কারণে ঠিকাদাররা রিং বাঁধগুলো করে দিচ্ছে। স্থানীয় লোকজন তাদের জমি থেকে মাটি দিচ্ছে না। তাছাড়া মাটি দুর থেকে আনাও সম্ভব না। দুর থেকে মাটি আনতে বললে ঠিকাদাররা আর কাজই করবে না।
তিনি আরও জানান, মনু নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের কাজ বিলম্ব হওয়ার কারণেই মুলত এসব ভাঙ্গনের সৃষ্টি হয়েছে। বিলম্বের অন্যতম প্রধান কারণ হলো জমি অধিগ্রহণ জটিলতা। জমি অধিগ্রহণ না করায় ঠিকাদারকে জমি বুঝিয়ে দেয়া সম্ভব হয়নি। রোববার রাজনগর উপজেলার লোকজন পানি উন্নয়ন বোর্ডে এসে দাবি করে, বাঁধের দরকার নেই তাদের। তারা জমি অধিগ্রহনের টাকা চায়। জমি অধিগ্রহণ না করে কাজ করায় কুলাউড়া উপজেলার দত্তগ্রাম থেকে, সদর উপজেলার চাঁদনী ঘাট ও রাজনগর উপজেলা থেকে তার (নির্বাহী প্রকৌশলীর) বিরুদ্ধে ৩টি পৃথক মামলা দায়ের করা হয়েছে। ফলে তাকে জমি অধিগ্রহণ জটিলতায় পড়তে হয়েছে। ##
Leave a Reply