মিঠুন দাস ::: পড়াশোনার বিষয়বস্তু যেন আর পেশার পথচলায় বাধা হয়ে দাঁড়ায় না —এই ধারণার এক জীবন্ত উদাহরণ মেহেদী হাসান মেহেদী। তিনি একজন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার, কিন্তু তার স্বপ্ন সবসময় ছিল প্রচলিত পেশার বাইরে কিছু করে দেখানোর। ২৬ বছর বয়সেই তিনি হয়ে উঠেছেন একজন সফল ডিজিটাল মার্কেটিং এনালিস্ট, এআই গ্রোথ মার্কেটার, এবং “MarkTech Global” নামক নিজের ডিজিটাল কনসালটেন্সি এজেন্সির প্রতিষ্ঠাতা।
শুরুর দিনগুলোর গল্প: মেহেদীর গল্প শুরু হয় ছোট একটি শহর থেকে, যেখানে বড় স্বপ্ন দেখাটা অনেক সময় সাহসিকতার সমান। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সময়ই তিনি বুঝতে পারেন যে তার আসল আগ্রহ টেকনোলজি এবং ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে। এই আগ্রহ তাকে নিয়ে আসে “The Marvel-Be You” নামক বিখ্যাত ইনফ্লুয়েন্সার ম্যানেজমেন্ট এজেন্সিতে, যেখানে তিনি ডিজিটাল গ্রোথ ম্যানেজার হিসেবে কাজ শুরু করেন। কিন্তু এখানেই থেমে থাকার মানুষ নন মেহেদী। তিনি বুঝতে পারেন, শুধুমাত্র নিজের কাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে কখনোই সত্যিকারের সাফল্য ধরা দেবে না। তাই তিনি একের পর এক নতুন দক্ষতা অর্জনে মনোনিবেশ করেন।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় (AI) অনুপ্রেরণা: ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে কাজ করতে করতে যখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) বিপ্লব শুরু হয়, মেহেদী তখন থেকেই এই বিষয়ে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। তার শেখার অভিজ্ঞতাগুলো তিনি একটি নোটবুকে লিখে রাখতে শুরু করেন। তার অর্জিত জ্ঞান তিনি চেয়েছেন সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে। তারই ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালের অমর একুশে বইমেলাতে প্রকাশিত হয় তার প্রথম বই। বইটির নাম “ChatGPT & AI Millionaire”।
এই বইটি এআই নিয়ে লেখা বাংলা ভাষায় প্রথম মৌলিক বই, যা শুধু বইমেলার সেরা বিক্রিত বই হিসেবে নয়, বরং দেশের শীর্ষ অনলাইন বই বিক্রয় প্ল্যাটফর্ম রকমারিতেও সেরা বিক্রিত বইয়ের তকমা অর্জন করে।
বাংলাদেশের প্রথম এআই ইনফ্লুয়েন্সার: মেহেদীর আরেকটি ব্যতিক্রমী অবদান হলো বাংলাদেশের প্রথম এআই ইনফ্লুয়েন্সার “Marvella”-এর উদ্ভাবনে তার ভূমিকা। এটি তার এক অনন্য মস্তিষ্কপ্রসূত ধারণা, যা তিনি বাস্তবায়িত করেছেন। তিনি এখন মার্ভেলাকে আরও মানবিক করে তোলার জন্য কাজ করছেন এবং তার সোশ্যাল মিডিয়া পরিচালনার দায়িত্বও পালন করছেন।
শিক্ষক এবং প্রশিক্ষক হিসেবে মেহেদী: কর্মক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনের পাশাপাশি মেহেদী তার জ্ঞান অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রতিও মনোযোগী। তিনি এখন লিঙ্কডইন এবং ডিজিটাল মার্কেটিংসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করছেন।
অনুপ্রেরণার উৎস: মেহেদীর মেশিন লার্নিংয়ের অনুপ্রেরণা এসেছে একটি সায়েন্স ফিকশন চরিত্র থেকে। মার্ভেলের “আয়রন ম্যান”-এর ব্যক্তিগত সহকারী “ফ্রাইডে”-র কার্যক্রম দেখে তিনি প্রযুক্তি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রতি আগ্রহী হন। আর সেই অনুপ্রেরণার ফলেই তিনি আজ বাস্তব জীবনে অসংখ্য মানুষের অনুপ্রেরণার প্রতীক হয়ে উঠেছেন।
পাঠকের জন্য বার্তা : মেহেদী হাসান রিফাতের গল্পটি আমাদের শেখায় যে জীবনে সাফল্য অর্জনের জন্য নিজের স্বপ্নকে অনুসরণ করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। পড়াশোনার বিষয় বা শুরুর জায়গা কখনোই বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না, যদি ইচ্ছাশক্তি ও পরিশ্রমের মিশ্রণ থাকে। রিফাতের পথচলা শুধু তার ব্যক্তিগত সাফল্যের গল্প নয়, এটি তরুণ প্রজন্মের জন্য একটি অনুপ্রেরণার উৎস।
সত্যিকারের স্বপ্নবাজদের জন্য রিফাতের এই গল্পটি একটি বার্তা: “তোমার স্বপ্ন পূরণের পথে শুধু সাহস এবং কঠোর পরিশ্রমই যথেষ্ট। শুরু করো, বাকিটা নিজেই তৈরি হয়ে যাবে।”#
Leave a Reply