এইবেলা, কমলগঞ্জ, ০৭ জুন ::
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ, কুলাউড়া ও রাজনগর উপজেলায় চর্মরোগ জাতীয় গুটি, খোঁড়া, ফুলাসহ একটি ভাইরাস রোগে গবাদি পশু আক্রান্ত হচ্ছে। এ রোগে আক্রান্ত হয়ে তিন উপজেলায় প্রায় তিন সহস্রাধিক গবাদি পশু আক্রান্ত ও একটি মহিষসহ ৩টি গরু মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
কৃষকদের অভিযোগে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এসব চিত্র পাওয়া গেছে। তবে কমলগঞ্জ উপজেলা প্রাণি সম্পদ বিভাগ করোনা ভাইরাসের মধ্যেও চিকিৎসা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে বলে দাবি করেছে। প্রতিষেধক না থাকায় এ রোগ ছড়িয়ে পড়ছে বলে জানিয়েছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর।
সরেজমিনে ঘুরে জানা যায়, লাম্পিং স্কিন ডিজিজ নামে চর্মরোগ জাতীয় একটি ভাইরাস রোগে গবাদি পশুর মধ্যে মারাত্মক হারে সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার আলীনগর, শমশেরনগর, পতনউষার, মাধবপুর, আদমপুর, মুন্সীবাজার ইউনিয়নসহ বিভিন্ন গ্রাম ও চা বাগান এলাকা, কুলাউড়া উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়ন ও রাজনগর উপজেলার কামারচাক, মরিচা এসব এলাকায় গবাদি পশুর গুটি বসন্তসহ ভাইরাস রোগের সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রায় দেড় মাস সময় ধরে বিভিন্ন এলাকায় এ রোগের সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। গলাসহ গরুর সারাদেহে গুটি, খোঁড়া, ফুলা রোগ দেখা দিচ্ছে। এসব রোগে আক্রান্ত হয়ে বিশ দিন আগে পতনঊষারের শ্রীসূর্য্য এলাকার অসিত শীল এর একটি, পনের দিন আগে আলীনগর ইউনিয়নের কামদপুর গ্রামের মনাফ মিয়ার একটি, মাধবপুর ইউনিয়নের নোওয়াগাঁও গ্রামের সাবাজ মিয়া দুইটি গরু, দশ দিন আগে মুন্সীবাজার ইউনিয়নের বাসুদেবপুর এলাকায় একটিসহ ৫টি গরু এবং সপ্তাহ দিন আগে রাজনগর উপজেলার মরিচা গ্রামে শামীম মিয়ার লক্ষাধিক টাকা মূল্যের একটি মহিষ মারা গেছে।
পতনউষারের তোয়াবুর রহমান, আক্তার মিয়া, মরিচা গ্রামের শামীম মিয়া, শমশেরনগর সতিঝির গ্রামের সিদ্দিকুর রহমান, আলীনগরের মনাফ মিয়া, মুন্সীবাজার ইউনয়িনের আশরাফুল ইসলামসহ কৃষকরা অভিযোগ করে বলেন, তাদের এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে এসব রোগে গবাদি পশু আক্রান্ত হচ্ছে। সব মিলিয়ে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে আক্রান্ত হবে প্রায় ৫ হাজার গবাদি পশু বলে তারা দাবি করেন। তারা আরও অভিযোগ করেন, আক্রান্ত পশুর জন্য সরকারিভাবে ভালো কোন চিকিৎসা সুবিধাও পাওয়া যাচ্ছে না। প্রাইভেট চিকিৎসকদের অধিক মূল্য দিয়ে চিকিৎসা প্রদান করতে হচ্ছে। ফলে করোনা ভাইরাসের এই সময়কালে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হতে হচ্ছে।
বাসুদেবপুর এলাকার আশরাফুল ইসলাম বলেন, প্রাথমকিভাবে বেশীরভাগ গরুর গায়ে গুটি গুটি উঠা, গলা ও পা ফুলে যাওয়া, গরুর গায়ে অতিরিক্ত জ্বর হয়। এসময় গরু কিছুই খেতে চায় না। এক পর্যায়ে গরু হাটতে পারে না আর গরুর গায়ের উঠা গুটির স্থান ঘাঁ হয়ে যায়। তবে নাম প্রকাশ না করে প্রাণি সম্পদ বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা জানান আসলে এ রোগ প্রতিরোধের সঠিক কোন ঔষধ এ জেলায় পাওয়া যাচ্ছে না।
কমলগঞ্জ পৌরসভার গোপালনগর গ্রামের সুয়েব আহমেদ, মাধবপুর ইউনিয়নের নোওয়াগাঁও গ্রামের কামাল বক্স, মঈনুল ইসলাম, সোহেল মিয়া, পারুয়াবিল গ্রামের মাসুক মিয়া, মাঝেরগাঁও গ্রামের রাধাকান্ত সিংহ, মদনমোহন পুর চা বাগানের আমজাদ হোসেন জানিয়েছেন, এ রোগে তাদের আক্রান্ত গবাদি গরুর গায়ে প্রথমে বসন্তের মতো গুটি দেখা যায়। দু-এক দিনের মধ্যেই গরুর পুরো শরীরে থাকা গুটিগুলো ক্ষতে পরিণত হয়। এ সময় গরুর শরীরে অতিরিক্ত তাপমাত্রা দেখা দেয় এবং গরু খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দেয়। অনেক সময় গরুর বুকের নিচে পানি জমে ক্ষত সৃষ্টি হয়। ক্ষতস্থান পঁচে গিয়ে সেখান থেকে মাংস খসে খসে পড়ে। বদলেরগাঁও গ্রামের নিশিকান্ত সিংহ, নোওয়াগাঁও গ্রামের সাবাজ মিয়া জানান, এ রোগে আক্রান্ত হয়ে তাদের দুটি গরু মারা গেছে। সঠিক সময়ে উপযুক্ত চিকিৎসা কিংবা রোগের লক্ষণ জানা না থাকায় বেশ কিছু গরু ইতিমধ্যে মারা যাচ্ছে। উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কোন সহযোগিতা মিলেনি, তাই গ্রাম্য পশু চিকিৎসক দিয়ে চিকিৎসা করেও গরুগুলোকে বাঁচানো যাচ্ছেনা।
এ ব্যাপারে কমলগঞ্জ উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. হেদায়েত আলী সত্যতা স্বীকার করে বলেন, গবাদি পশুর এটি লাম্পিং স্কিন ডিজিজ জাতীয় একটি ভাইরাস রোগ। বর্তমানে সবদিকে কমবেশি এ রোগে আক্রান্ত গবাদি পশু দেখা যাচ্ছে। এটি মশা, মাছি থেকে সংক্রমিত হচ্ছে। তবে প্রাণি সম্পদ বিভাগের পক্ষ থেকে করোনার মধ্যেও যথাসাধ্য চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে। এসব রোগে আক্রান্ত পশু সুস্থ হতে কিছুটা সময় লাগে বলে তিনি দাবি করেন।
তবে মারা যাওয়া গরুগুলো সম্পর্কে তিনি বলেন, এগুলো হয়তো ভ‚ল চিকিৎসার কারণে মারা যেতে পারে। তিনি আরো বলেন, উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের হিসাব অনুযায়ী কমলগঞ্জ উপজেলায় ল্যাম্পি স্কিন রোগে এ পর্যন্ত ৪ শতাধিক গরু আক্রান্ত হয়েছে। তবে এ রোগে কোথাও গরু মারা যাওয়ার খবর তাঁদের জানা নেই।
তিনি আরো জানান, এ রোগের ভ্যাকসিন না থাকায় রোগটির প্রকোপ দ্রুত বিস্তার লাভ করছিল। তবে এখন অনেকটা কমে এসেছে। তারপরও এলাকার মানুষকে সচেতন করতে ইতিমধ্যে প্রচারপত্র বিতরণ করা হচ্ছে। কিন্তু চলমান করনো পরিস্থিতির মধ্যে সভা-সেমিনারের ব্যবস্থা করা যাচ্ছে না।#
Leave a Reply