আজিজুল ইসলাম ::
কুলাউড়ার বিএনপি যাদের রক্তে প্রতিষ্ঠিত। তাদের অন্যতম ব্যক্তি ছিলেন আমার বাবা। আজ যারা বিএনপি করেন তারা হয়তো বেমালুম ভুলে গেছেন তাদের কথা। প্রয়াত সৈয়দ আকমল হোসেন, প্রয়াত চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম, প্রয়াত শামসুল ইসলাম, সৈয়দ আজগর আলীদের কথা।
যাদের শুধু ত্যাগই নয় রক্তে প্রতিষ্ঠিত আজকের বিএনপি। এরাই ছিলেন ভাসানী ন্যাপের রাজপথের সাহসি রাজনীতিক। প্রয়াত প্রেসিডেন্ট জিযাউর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে যোগ দেন জাগদলে। জাগদল থেকে জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি।
আমি তখন ছোট্র খোকা। একদিন খবর পেলাম জাসদের সন্ত্রাসী হামলায় বাবাসহ উনার সহকর্মীরা সবাই আহত। এত ছোট ছিলাম যে বাবাকে দেখতে হাসপাতালে একা আসার সাহসও ছিলো না। যখন হাসপাতালে দেখতে এলাম, এসে খবর পেলাম ট্রেন যোগে আহতদের ওসমানী হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।
দীর্ঘ ১০-১৫দিন পর বাবা যখন ফিরে এলেন তার হাতে ছিলো বড় প্লাস্টার লাগানো। মাথার ফেটে যাওয়া ক্ষতটাও দগদগে। ছোট্র এই আমি বাবার কাছে ঘুমাতাম। শত কষ্টের মাঝেও বাবা আমাকে সেই রাতে কাছেই রেখেছিলেন। পরে কুলাউড়া হাসপাতালে সেই প্লাস্টার কাটানো হয়।
ভাঙা হাত আর মাথার সেই ক্ষতটা বাবাকে মৃত্যু পর্যন্ত বহন করেছেন। তা কেবল আমি জানি। ফাটা মাথার অংশে এবং ভাঙা হাতে যখন ব্যাথা অনুভব করতেন, তখন টিপে দিতে বলতেন। জীবনের শেষমুহুর্ত পর্যন্ত সেই ব্যাথা ছিলো।
আজকে যারা বিএনপি কিংবা সহযোগি সংগঠনের নেতা তারা সেই ব্যাথা কি করে অনুভব করবেন? তারাতো জেনেও বেমালুম ভুলে সেই সব প্রতিষ্ঠাতা সদস্যের কথা। জিজ্ঞেস করলে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি খূঁড়া অযুহাত সামনে নিয়ে আসবেন। পদ পদবীতে বাবা খুব বড় নেতা না হলেও ছোটবেলায় দেখেছি, সেই মহান নেতারা আমাদের বাড়ি ছুটে গিয়ে দোয়া চাইতেন।
দীর্ঘদিন বার্ধক্য জনিত কারণে বাবা বাড়িতে কত নি:সঙ্গ সময় পার করেছেন, একজন রাজনীতিকের জন্য সে সময়টা অনেক কঠিন। প্রথমে পত্রিকা পড়ে সময় কাটতো। কিন্তু শেষ মুহুর্তগুলো ছিলো কঠিনতর।
বাবা যখন জীবিত ছিলেন, পেশাগত কাজে বাধ্য বেরিয়ে আসতাম। ফিরতে দেরি হলেও মনে হতো বাবাতো আছেন। আর এখন রাত নামলেই একটা শূন্যতা নিজেকে ডেকে বলে, বাবা নেই। তাড়াতাড়ি বাড়ি ফেরার তাগিদটা অনুভব করি।
বাবাহীন আজ দু’টি বছর কেটে গেছে। যখন বাবা অসুস্থ ছিলেন, বাবার মুত্যুর মুহুর্তটা ভেবে আমি অস্থির হয়ে যেতাম। সে কারণেই হয়তো মহান রাব্বুল আল আমিন বাবার মৃত্যুর মুহুর্তে আমাকে উনার বাড়ির মেহমান বানিয়ে নিয়েছিলেন।
অনেক কষ্টের মাঝে একটি শান্তনা খোঁজে পাই আর সেটা হলো- বাবার জন্য আমি সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে দোয়া করতে পেরেছি, যেখান থেকে দোয়া কবুল হয়। আজও বাবার স্মৃতিগুলো কষ্ট হয়ে বুকে বিঁধে।
বাবার রক্ত আর ঘামে প্রতিষ্ঠিত বিএনপি তথাকথিত নেতারা স্মরণ না করলেও কোন আক্ষেপ নেই। মনে এই শান্তনা আছে, আজকের সেই নেতারাদের স্মরণ করার কোন প্রয়োজনীয়তা অনুভব করবে না। কারণ বিএনপির জন্য এসব তথাকথিত নেতাদের রক্ত দেয়া তো দূরের কথা সামন্যতম ত্যাগও স্বীকার করতে হচ্ছে না তাদের।
বাবা রাজনীতি করেছেন, মানুষের কল্যাণের জন্য। কোন সময় রাজনীতি থেকে ফায়দা হাসিলের কথা চিন্তা করেননি। এসময়ে নেতারা রাজনীতি থেকে শুধু টাকাই কামাই করছে না। খাটের নিচে তেলের খনি গড়ে তুলছে। নিজের স্বার্থে রাজনীতিকে ব্যবহার করে নোংরা রাজনীতির খেলায় যারা বিভোর। ইতিহাসের আস্তাকুড়ে তারাই নিক্ষিপ্ত হবে একদিন।
যার বাবা নেই, সেই জানে বাবা কি জিনিস? ফযরের নামায শেষে বাবার কোরআন তেলাওয়াতটা সত্যি খুব মিস করি। তাইতো শেষ রাতে স্বপ্নলোকে বাবাকে দেখতে পেলাম। সাদা লুঙ্গি আর পাঞ্জাবিতে বাবার হাসিমাখা মুখখানি। এভাবে যেন সদা হাস্যজ্জ্বোল মুখখানি স্বপ্নলোকে ঘুমের ঘোরে দেখতে পাই। মহান রবের দরবারে এই প্রার্থনা করি, যেন বাবাকে জান্নাতের উচ্চ মাকাম দান করেন। আমিন।#
caller_get_posts
is deprecated. Use ignore_sticky_posts
instead. in /home/eibela12/public_html/wp-includes/functions.php on line 6085caller_get_posts
is deprecated. Use ignore_sticky_posts
instead. in /home/eibela12/public_html/wp-includes/functions.php on line 6085
Leave a Reply