এইবেলা ডেস্ক ::
২০০১ সালে প্রতিষ্ঠিত বড়লেখা পৌরসভা প্রায় সাড়ে ১১ বর্গ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে বিস্তৃত। পৌরসভাটি ‘ক’ শ্রেণিতে উন্নীত হতে চলেছে। বর্তমান মেয়র আবুল ইমাম মো. কামরান চৌধুরী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। তিনি দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব পালন করছেন। পরপর দুই মেয়াদের দায়িত্বকালে পৌরসভায় যেমন ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন, তেমনি অনেক ক্ষেত্রে পৌরবাসী দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
আজও পৌরসভার ময়লা আবর্জনা ফেলার (ভাগাড়) নিজস্ব কোন জায়গা নির্ধারণ করতে পারেননি দুই মেয়াদের মেয়র কামরান। বর্তমানে পৌরসভার শেষ প্রান্ত কুলাউড়া-চান্দগ্রাম আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে আইলাপুর নামক স্থানে বর্জ্য ফেলছেন। আন্তঃজেলা রাস্তার পাশের ময়লার ভাগাড় দুর্গন্ধ ছড়িয়ে মারাত্মক পরিবেশ দূষণ করছে। উপজেলার দাসেরবাজার, নিজ বাহাদুরপুর, তালিমপুর ও বর্ণি ইউনিয়নের সাধারণ মানুষের বড়লেখা শহরের সঙ্গে যোগাযোগের এই সড়কের পাশেই ময়লার ভাগাড়টি গড়ে ওঠেছে। প্রতিনিয়ত ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। ফলে ভুক্তভোগিরা নাক-মুখ চেপে চলাফেরা করছেন। এনিয়ে সাধারণ মানুষ মেয়রের উপর বেশ ক্ষুব্দ। তারা পৌর কর্তৃপক্ষের সৃষ্ট পরিবেশ দূষণের অত্যাচার থেকে মুক্তি চান। এছাড়া বর্ষায় ভারী বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে যায় পৌরশহরের কিছু আবাসিক ও বাণিজ্যিক এলাকা। দোকান পাটে পানি ঢুকায় ব্যবসায়ীরা মারাত্মক আর্থিক ক্ষতির সম্মুখিন হন। জলাবদ্ধতার শিকার কয়েক হাজার মানুষ অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়েন। পৌরমেয়র জলাবদ্ধতা নিরসনে কয়েকটি এলাকার ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন করলেও উত্তর চৌমুহনি হতে কলেজ রোডের পূর্ব ও পশ্চিম পাশ দিয়ে ষাটমাছড়া পর্যন্ত বয়ে যাওয়া নালা দখলমুক্ত ও সংস্কার না করায় ওই এলাকার বাসিন্দাদের দুর্ভোগ পিছু ছাড়েনি। জলাবব্ধতা নিরসনে মেয়রের সাম্প্রতিক লংলীছড়া, দিনেশ্বরী, নিখড়িছড়া, চাঁদনিছড়াসহ কয়েকটি খাল খনন প্রশংসিত হলেও উপজেলা চত্তর হয়ে টিটিডিসি প্রাইমারি স্কুল সংলগ্ন খালটি অপরিকল্পিত ও অতি গভীর খননে জনসাধারণের চলাচলে ঝুঁকি ও সংলগ্ন রাস্তাটি হুমকির মুখে পড়েছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করছেন।
পৌর শহরের তীব্র যানজটের ভোগান্তি থেকে কোনমতেই রেহাই পাচ্ছেন না পৌরবাসী। সড়কের দুইপাশের ফুটপাত দখল করে যত্রতত্র অবৈধ স্থাপনা, ভাসমান দোকান ও সড়কের ওপর গাড়ি পার্কিংয়ের কারণে এই অবস্থার সৃষ্টি বলে ভুক্তভোগিরা মনে করছেন। সম্প্রতি উপজেলা প্রশাসন, থানা প্রশাসন ও মেয়রের যৌথ উদ্যোগে সড়কের পাশের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করায় পৌরবাসির মধ্যে স্বস্তি ফিরে। কিন্তু উচ্ছেদের পর থেকেই পুণরায় অবৈধ স্থাপনা বসানো শুরু হওয়ায় পৌরবাসি উদ্বিগ্ন। ভুক্তভোগীরা নজরদারি জোরদারের দাবি জানান।
বর্ষা মৌসুম আসলেই পৌরশহরে চোখ রাঙায় মশা। বিভিন্ন নালা ম্যানহোলের ঢাকনা খুলা থাকায় সেখানে অপ্রতিরোধ্যভাবে মশার প্রজনন হচ্ছে। পৌরকর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় শহরের প্রত্যেকটি বাসা বাড়িতে মশার উপদ্রব বৃদ্ধি পায়। ব্যবসায়ীরা দোকানপাটে মশার কয়েল জ্বালিয়েও বসতে পারেন না। এছাড়া আরও নানা সমস্যায় জর্জরিত বড়লেখা পৌরসভা। দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব পালন করলেও এখনও পৌরসভার নিজস্ব ঠিকানা হয়নি।
পৌরমেয়র আবুল ইমাম মো. কামরান চৌধুরী জানান, পৌরবাসীর জন্য জিওবি ও বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে প্রায় ১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করছেন। দেশের ৩০ টি পৌরসভার সাথে সুপেয় পানি প্রকল্পে বড়লেখা পৌরসভাকে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। বিটুমিনের তৈরি রাস্তা অল্পদিনে নষ্ট হওয়ায় পৌরসভার প্রত্যেকটি রাস্তা উন্নতমানের আরসিসি ঢালাইয়ের মাধ্যমে পাকাকরণের উদ্যোগ নিয়েছেন। ইতিমধ্যে প্রায় ৫০ ভাগ রাস্তা এর আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে এবং বাকি রাস্তার কাজ প্রক্রিয়াধিন। এছাড়া বড়লেখা পৌরসভা ‘খ’ শ্রেণি থেকে ‘ক’ শ্রেনিতে উন্নীত করার কাঙ্খিত রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেছে। ‘খ’ শ্রেণি থেকে ‘ক’ শ্রেণিতে উন্নীতকরণ কার্যক্রম মন্ত্রনালয়ে প্রক্রিয়াধীন। বড়লেখা পৌরশহরে অন্যতম সমস্যা যানজট। এই যানজট নিরসনে পৌরশহর থেকে কাঁচা বাজার সরিয়ে নেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। নির্দিষ্ট একটি স্থানে কাঁচা বাজার সরিয়ে নেয়া হবে, যাতে ব্যবসায়ীরা ফুটপাত দখল করে বসতে না পারেন এবং যানজট সৃষ্টি না হয়। শহরের সৌন্দর্য বর্ধনে পৌরসভার প্রতিটি রাস্তার পাশে পরিবেশ বান্ধব কৃষ্ণচূড়া, শিমুল ও সোনালী গাছ লাগিয়েছেন। এসব গাছে যখন ফুল ফুটবে তখন পৌরসভার সৌন্দর্য বহুগুন বাড়িয়ে দিবে। এছাড়া করোনাকালে পৌরসভা এবং মেয়রের ব্যক্তিগত উদ্যোগে অসংখ্য মানুষকে ত্রাণ সহযোগিতা করেছেন। মেয়র ও কাউন্সিলরদের তিন মাসের সম্মানি ভাতা একত্রিত করে ত্রাণ সহযোগিতা ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। একটি সবুজ ও আধুনিক বসবাস উপযোগী পৌরসভা নির্মাণে তিনিসহ কাউন্সিলররা কাজ করছেন।
মেয়র বলেন, আমাদের অনেক ব্যর্থতা রয়েছে সাথে সীমাবদ্ধতাও। আমরা পৌরবাসীকে সর্বোচ্চ নাগরিক সুযোগ সুবিধা দেয়ার চেষ্টা করছি। তারপরও কাঙ্খিত কিছু সুবিধা দিতে পারছি না। এটা আমাদের ব্যর্থতা। বর্তমানে পৌরসভার যেসব সমস্যা রয়েছে অচিরেই তা সমাধান করতে সক্ষম হবেন বলে আশা প্রকাশ করেন।
Leave a Reply