কত রাত আমি নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারিনা!
চেষ্টা করেও চোখের পাতা
একসাথে বন্ধ রাখতে পারিনা অনেকক্ষণ ধরে ;
বলা যায়, নির্ঘুম রাত কাটে আমার।
দখিনা খোলা বাতায়ন,
স্নিগ্ধ সমীরণ,
রূপালি চাঁদের ঝলকে
আলোকিত বিছানা ও কক্ষ।
সাথে আকাশের মিটিমিটি তারাগুলোর
রোমাঞ্চকর অনুভূতির সৃষ্টি!
কত মনোরম সব-ই।
কিন্তু;
আমার নিদ্রাহীনতার কারণ
জোৎস্নালোকিত রাত উপভোগ করা নয়।
বুকের পাঁজরে জমে থাকা কষ্টগুলো
আমাকে জাগিয়ে রাখে সারারাত।
যদিও এই কষ্ট শুধু আমার একার নয়;
বিশ্বজুড়ে অগুনিত প্রাণের কষ্ট একই।
যদি বলি;
এই আমি নিজ দেশে আজ পরবাসী হয়ে আছি।
তাহলে কী খুব বেশি বলা হবে?
কত মাস হয়ে গেলো
কর্মস্থল ছেড়ে জন্মস্থানে যেতে পারি না।
বৈশ্বিক মহামারির কবলে পড়ে
বন্দী আমি কর্মস্থলে।
দায়িত্ব পালন ও দায়বদ্ধতার শিকলে আবদ্ধ-
সম্মুখ যোদ্ধাদের একজন আমি।
আজ কত মাস হয়ে গেলো
মায়ের কবরটা দেখিনা।
কত মাস হয়ে গেছে
বাবা আমাকে বুকে জড়িয়ে নিতে পারেননা।
ভাই-বোন, স্বজন-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব,
হিতাকাঙ্ক্ষী কারো সাথে দেখা নেই।
অথচ;
ওদের সাথেই আমার নাড়ির টান,
রক্তের বাঁধন।
উৎসবে, ইদে, পৌষ-পার্বণে,
বর্ষবরণে আছি আমি দূরে, বহুদূরে!!
ভয়াবহ এক অনুজীব এসে
সব যেন লন্ডভন্ড করে দিয়েছে।
আমার যাওয়ার ভিসা,
পাসপোর্ট কোনটারই প্রয়োজন নেই।
দেশেই তো আছি, তবুও যেন পরবাসী।
কত মাস হয়ে গেলো
আমি যেতে পারছি না।
এ কথাটা ভাবলেই
বুকটা ভেঙে চুরমার হয়ে যেতে চায়।
কষ্টটা জগদ্দল পাথরের মতো চেপে ধরে
বুকের পাঁজরের হাড়গুলোকে।
আর এ কষ্টকে তাড়ানোর জন্য,
নতুন করে কষ্ট ভোগ করতে গিয়ে,
নিদ্রাদেবী যেন আমাকে ছেড়ে পালিয়ে বেড়ায়।
ইদানিং আমার নির্ঘুম রাত কাটে,
কষ্টরা চেপে ধরে।
আমি ভাবি……
মহামারি কবে কাটবে?
জীবানুরা কবে হটবে?
কবে বিষমুক্ত হবে চারিপাশ?
কবে নির্বিঘ্নে চলবে শ্বাস-প্রশ্বাস?
কবে প্রাণগুলো জেগে উঠবে আগের মতো?
দূর হয়ে যাবে, যতসব মহামারিকালের তেতো!
কোনো প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজে পাইনা!
অনিশ্চিত আগামী, নতুন ভোরের আলো ফোটে;
আবার ঘুরাই জীবনচাকা, ভিড়াতে প্রাচীন ঘাটে!
Leave a Reply