বিশেষ প্রতিনিধি, শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) ;: সংঘাত নয়, ঐক্যের বাংলাদেশ গড়ি এই শ্লোগান ও প্রতিপাদ্য নিয়ে অন্তর্জাতিক অহিংস দিবস উপলক্ষে শ্রীমঙ্গলে পিএফজির মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।
বুধবার 0২ অক্টোবর শ্রীমঙ্গল চৌমুহনায় পিস ফ্যাসিলিটেটর গ্রুপ (পিএফজি) শ্রীমঙ্গল-এর উদ্যোগে ও দি হাঙ্গার প্রজেক্ট বাংলাদেশ-এর সহযোগিতায় এ মানববন্ধন কর্মসুচি পালন করা হয়।
শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবের সাবেক কোষাধ্যক্ষ ও পিএফজির সমন্বয়কারী সাংবাদিক সৈয়দ ছায়েদ আহমেদের সঞ্চালনায় এবং উপজেলা পরিষদের সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান হেলেনা চৌধুরীর সভাপতিত্বে মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক, ‘৯০-এর গণঅভ্যুত্থানের সংগঠক, বাংলাদেশ ছাত্রমৈত্রীর সাবেক কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, জাতীয় কৃষক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির মৌলভীবাজার জেলা সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য, সাপ্তাহিক নতুন কথা’র বিশেষ প্রতিনিধি, আরপি নিউজের সম্পাদক ও বিশিষ্ট কলামিস্ট কমরেড সৈয়দ আমিরুজ্জামান।
এ মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন শ্রীমঙ্গল উপজেলা পরিষদের সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মিতালী দত্ত, মির্জাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিছলু আহমেদ চৌধুরী, শ্রীমঙ্গল ব্যবসায়ী সমিতির সহসভাপতি ও উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি শামীম আহমেদ, ফারিয়ার সভাপতি দেবব্রত দত্ত হাবুল, অ্যাম্বাসেডর কাজী আসমা, পিএফজি সদস্য আনহারুল ইসলাম, জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের সভাপতি ও আশীদ্রোন ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মকসুদুর রহমান এবং পিএফজি সদস্য এম এ রহিম নোমানি প্রমুখ।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সংবাদিক ঝলক দত্ত, সাংবাদিক নান্টু রায়, পিএফজির অ্যাম্বাসেডর জহির আহমদ শামীম, পিএফজির সদস্য ছায়ফুর রহমান, শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবের কার্যকরী কমিটির সদস্য নূর মোহাম্মদ সাগর, পিএফজি সদস্য জুয়েল আহমদ, ইয়ুথ পিস অ্যাম্বাসেডর গ্রুপের সহসমন্বয়কারী চৌধুরী সিরাজাম মনিরা, সদস্য প্রবীর সিংহ, টিআইবির ইয়েস সদস্য মো: তোফায়েল আহমেদসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষক, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার প্রতিনিধিরা।
অন্তর্জাতিক অহিংস দিবস পালনের গুরুত্ব ও এর তাৎপর্য সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক, জাতীয় কৃষক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির মৌলভীবাজার জেলা সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য, সিনিয়র সাংবাদিক ও বিশিষ্ট কলামিস্ট কমরেড সৈয়দ আমিরুজ্জামান বলেন, “সংঘাত নয়, ঐক্যের বাংলাদেশ গড়ি এই শ্লোগান এবং “অহিংসার প্রথম নীতিই হলো সকল অমর্যাদাকে প্রত্যাখ্যান করা। নিস্ক্রিয় থেকে অহিংসা প্রতিষ্ঠা করা যায় না।”- মহাত্মা গান্ধীর বাণীকে প্রতিপাদ্য করে আন্তর্জাতিক অহিংস দিবস পালন করা হচ্ছে। বিশ্ব থেকে হিংসা, বিদ্বেষ, হানাহানি, মারামারি, অসহিষ্ণুতা ও রক্তপাত বন্ধে বিশ্ববাসীকে সচেতন করতে প্রতিবছর ২রা অক্টোবর বিশ্ব অহিংস দিবসটি পালন করা হয়।
মোহন দাস করমচাঁদ গান্ধী ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ। ২০০৭ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ অধিবেশনে ভারতের আনীত প্রস্তাবে সর্বসম্মতিক্রমে মহাত্মা গান্ধীর জন্মদিবস ২ অক্টোবরকে `আন্তর্জাতিক অহিংস দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
অন্যায়ের বিরুদ্ধে গান্ধীজীর অস্ত্র ছিল অসহযোগ এবং শান্তিপূর্ণ প্রতিরোধ। তিনি অহিংস ও সত্যাগ্রহ আন্দোলনের দ্বারা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী শক্তিকে পরাজিত করতে সমর্থ হয়েছিলেন।
তাঁর বিভিন্ন আন্দোলনের ভিত্তি ছিল অহিংসা। তাঁর রাজনৈতিক দর্শন, তাঁর আত্মত্যাগ, তাঁর সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির প্রতি অঙ্গীকার এই যুগেও অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক।
তিনি বলে গেছেন, “Be the change you want to see in the world” অর্থাৎ আপনি নিজের সেই পরিবর্তন হোন যা আপনি সারাবিশ্বের সবার মধ্যে দেখতে চান।
অনেক মহান নেতা যেমন নেলসন ম্যান্ডেলা, মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র ও আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের প্রথম প্রেসিডেন্ট আলবার্ট লুসিলি স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচারের জন্য তাদের আন্দোলনকে পরিচালনা করতে অহিংস দর্শন দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন।
ইতিহাসের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামে চট্টগ্রামের অগ্রণী ভূমিকায় অভিভূত হয়ে মহাত্মা গান্ধী লিখেছিলেন ‘Chittagong to the fore’ অর্থাৎ সবার আগে চট্টগ্রাম। গান্ধীজী দুইবার চট্টগ্রাম আগমন করেন–৩১ আগস্ট, ১৯২১ ও ১২ মে ১৯২৫ সালে।
গান্ধীজী নোয়াখালিতে এসে প্রায় চার মাস অবস্থান করেন। তিনি সেখানে অসংখ্য গ্রাম সফর করেন।
তাঁর উপস্থিতি, শান্তির প্রচেষ্টা এবং উভয় সম্প্রদায়ের জন্য তাঁর সম্প্রীতির বাণী বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বিশাল প্রভাব ফেলেছিল। নোয়াখালীতে অবস্থিত গান্ধী আশ্রমের কথা সকলে অবশ্যই জেনে থাকবেন।
১৯৪৮ সালের ৩০ জানুয়ারি দিল্লীতে আততায়ীর গুলিতে গান্ধীজি মৃত্যবরণ করেন। গান্ধীজীর মৃত্যুর পর বিশ্বখ্যাত বৈজ্ঞানিক অ্যালবার্ট আইনস্টাইন বলেছেন, “Generations to come, it may well be, will scarce believe that such a man as this one ever in flesh and blood walked upon this Earth.” গান্ধীজি অদ্বিতীয়, অপ্রতিরোধ্য এবং পথপ্রদর্শক। সমাজের দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য কাজ করার জন্য গান্ধীবাদী দর্শন আজকের দিনেও খুবই প্রাসঙ্গিক।”
তিনি আরও বলেন, “বাঙালি জাতি ও জনগণের বড় ও শ্রেষ্ঠ অর্জন এই স্বাধীনতা। বাংলাদেশের ইতিহাস হলো স্বাধীনতা ও মুক্তির জন্য কোটি কোটি খেটে খাওয়া মানুষের সুদীর্ঘ লড়াইয়ের ইতিহাস। এ দেশের মানুষ লড়াই করেছে বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে, পাকিস্তানী শাসক গোষ্ঠীর শ্রেণি শোষণ ও জাতিগত নিপীড়নের বিরুদ্ধে।
মানুষ প্রথম থেকেই জাতিগত শাসন-শোষণ-বঞ্চণা-অনুন্নয়ন ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে এসেছে- যার চূড়ান্ত রূপ লাভ করল ’৭১-এর সুমহান সশস্ত্র স্বাধীনতা ও মুক্তি সংগ্রামের ভিতর দিয়ে। এদেশের নিরস্ত্র বাঙালি শ্রমিক কৃষক সাধারণ মানুষ অহিংসবাদী ছিল, কিন্তু ‘৭১-এ সহিংসতার শিকার হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে, দেশ স্বাধীন হয়েছে। আমরা পেয়েছি ‘৭২-এর সংবিধান। সেই সংবিধানে জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের কথা বলা হয়েছে। এর মর্মবস্তু হলো অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা ও বাসস্থানের নিশ্চয়তার জন্য পরিকল্পিত অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হয়।
আর তাই সমাজতন্ত্র অভিমুখী অসাম্প্রদায়িক জনগণতান্ত্রিক ও বৈষম্যহীন ব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রত্যয়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে নেওয়ার প্রয়োজনেই জনগণের নতুন ধারার এক আর্থসামাজিক বৈপ্লবিক ব্যবস্থা প্রবর্তনে সমতা-ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠায় জনগণতান্ত্রিক পরিকল্পিত অর্থনীতি চাই।”#
Leave a Reply