ডা. এম সেলিম উজ্জামান::
করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রাথমিকভাবে শ্বাস-জলীয়কণার মাধ্যমে এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তিতে ছড়ায়। এ ভাইরাস চোখ, নাক বা মুখের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে। কাজেই করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধ কিছুটা আমাদের হাতেই রয়েছে।
এক্ষেত্রে ব্যক্তিগত দায়িত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা সঠিক স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে পারি, অন্যকেও নিরাপদ রাখতে পারি। জনস্বাস্থ্যবিধিগুলো খুব সহজ, আপনি যখনই বাড়ির বাইরে কোনো জায়গায় যাবেন, তখনই মাস্ক ব্যবহার করুন; ঘনঘন সাবান-পানি দিয়ে হাত ধোন অথবা হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন (কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড)। বাড়ির বাইরে সবার কাছ থেকে কমপক্ষে ৬ ফুট শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করুন।
সমস্যা হচ্ছে, এ ভাইরাস প্রতিরোধে জনসচেতনতার অভাব রয়েছে। ‘ল্যানসেটে’ মেডিকেল গবেষণা নিবন্ধে প্রকাশিত বিশ্লেষণসহ আরও অনেক গবেষণায় প্রতীয়মান, অন্যান্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার সঙ্গে মাস্কের ব্যবহার করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে সহায়তা করে। তাই জনসমাগম স্থলে প্রত্যেককে মাস্ক ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে (বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, মার্কিন সিডিসি)। এন-৯৫ (কেএন-৯৫/এফএফআর-২) এবং তিন স্তরের মেডিকেল মাস্ক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
মেডিকেল মাস্কের নমনীয় বেনডেবল প্রান্তটি উপরের দিকে, মাস্কের রঙিন দিকটি (হাইড্রোফোবিক পলিমার) সাধারণত সামনে থাকে এবং ভেতরে নরম শোষণকারী স্তর থাকে। জনগণের জন্য সাধারণ কাপড়ের মাস্ক পরিধান তাদের ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সহায়ক হবে। প্রত্যেকের জন্য মাস্ক তখনই প্রতিরোধমূলক হবে, যখন সবাই তা সঠিকভাবে ব্যবহার করবে এবং অন্যকে সঠিকভাবে ব্যবহারে উৎসাহিত করবে। মনে রাখতে হবে, মাস্ক পরার আগে সাবান পানি দিয়ে সঠিকভাবে হাত ধুয়ে ফেলতে হবে বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে হবে। মাস্কটি সঠিকভাবে অপসারণের পর আবারও হাত ধুয়ে ফেলতে হবে।
মাস্ক পরার আগে ভালো করে দেখে নিন সেটা ক্ষতিগ্রস্ত বা নোংরা কি না।মাস্কটি মুখের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পরতে হবে। মুখ, নাক ও চিবুক ঢেকে রাখতে হবে। পরার পর মাস্কটি সংক্রমিত বা দূষিত হাত দিয়ে স্পর্শ করবেন না। যদি স্পর্শ করতেই হয় তবে হাত পরিষ্কার করার পর স্পর্শ করবেন। মাস্কটি খোলার সময় কানের পেছনের স্ট্র্যাপ দিয়ে সরিয়ে ফেলুন। ব্যবহৃত কাপড়ের মাস্কটি ২০ মিনিট গরম সাবান-পানিতে ভিজিয়ে রাখার পর (অথবা ওয়াশিং মেশিনে) ধুয়ে ফেলুন। পরবর্তী সময়ে পরিষ্কার, শুকনো মাস্কটি পুনরায় ব্যবহার করুন। মাস্ক কখনোই নাকের নিচে বা চিবুকের নিচে পরা যাবে না।
নোংরা, স্যাঁতসেঁতে বা ভেজা মাস্ক পরা যাবে না। স্যাঁতসেঁতে হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মাস্কটি বদলে ফেলুন। প্রতি ৪-৬ ঘণ্টা পর পরিবর্তন করতে পারলে ভালো। দুই বছরের কম বয়সের শিশু এবং যাদের মাস্ক পরলে শ্বাসকার্যের সমস্যা হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে, তাদের মাস্কমুক্ত থাকতে হবে। মাস্কটি সঠিকভাবে পরিধান আপনার সংক্রমিত হওয়া বা অপরকে সংক্রমিত করার ঝুঁকি হ্রাস করে। সঠিকভাবে মাস্ক পরিধান লক্ষণহীন, প্রাক-লক্ষণযুক্ত এবং লক্ষণযুক্ত রোগী থেকে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকিও হ্রাস করে, যদি অন্যান্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাও নিশ্চিত করা হয়।
ডা. এম সেলিম উজ্জামান : প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, ইমারজিং-রিইমারজিং ডিজিজেস, আইইডিসিআর
Leave a Reply