বাবুল আহমদ ::
চাত্ করে উঠে হৃদয় কপাটে, এ কেমন বিদায় সাকিরের! টগবগে প্রাণোচ্ছ্বল যুবক, হাসিমাখা অমায়িক ব্যবহার আর ফেইসবুকে গুঞ্জরময় লেখনী মুগ্ধ করতে সকলকে। তার আবেগ উচ্ছ্বাসগাঁথা ছন্দময় এবং প্রতিবাদী লেখনীতে ঝড় উঠতো সোস্যাল জগতে। সোস্যাল মিডিয়া, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিকস মিডিয়ায় সরব সোচ্ছার সুবোধ বালক অল্পদিনেই যেন মনকাড়ে সকলের। তার সৃষ্ঠিতে যেন দৃষ্ঠি আকৃষ্ঠ হয় অগনন মানুষের। সব জায়গাতেই তার সরব উপস্থিতি ছিলো চোখে পড়ার মতো।
অল্প সময়েই সুপরিচিত হয় কুলাউড়ার সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে, প্রিয় হয়ে উঠে সাংবাদিক মহলে,আস্থা লাভে সমর্থ হয় মাঠ প্রশাসনে,তুমুল জনপ্রিয়তা পায় তৃণমূলে। ছাত্রদলে দায়িত্বশীল থাকলেও ডানবাম সকল দলের মানুষজনের সাথে তার মোটামুটি সখ্যতা ছিলো। সুষম সম্পর্ক স্থাপনে তার কার্পণ্য ছিলোনা। শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার সম্পর্ক ছিলো ছোটবড় সকলের সাথে।নিকটজনের চেয়েও আপনজন হয়ে যায় তার সোস্যাল ভক্তকূল। দ্রুত সময়ে সম্পর্ক বিনির্মানে যেন বিধাতা প্রদত্ত অনন্য ক্যারিশমা লালন করতো সে।
বরমচালে জন্ম ও বেড়ে উঠা হলেও খ্যাতনামা স্ট্যাম্পফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে পড়ালেখার সুযোগে দীর্ঘদিন রাজধানীতে থাকায় তার বাচনভঙ্গি ও ভাষাচর্চা ছিলো সুনিপুন এবং নিখুঁত। অধ্যয়নের পাঠ চুকিয়ে এইতো মাত্র কয়েক বছর আগে মাতৃভূমে ফিরে স্বপ্নের সংসার গড়ে সহধর্মিণী সোনিয়াকে নিয়ে।শহরের প্রাণকেন্দ্রে নিবাস নিয়ে বসবাস করতো সে।
স্থানীয় পত্রিকায় পেশাগত সাংবাদিকতায় কর্মজীবন শুরু করলেও ট্রাভেলস্ ব্যবসায় সহযোগী হিসেবে কাজ করত কুলাউড়ায়। বলছিলাম সদালাপী,সুঠাম দেহী, সদ্য প্রয়াত সাংবাদিক প্রিয় সাকিরের কথা। ৭ আগষ্ঠ শুক্রবার সারাদিন কর্মব্যস্ত সময় পার করে মিডিয়ার সহযোদ্ধাদের সাথে কর্মস্থলে থাকা অবস্থায় আকস্মিক বুকে ব্যথা অনুভব, ডাক্তার, ইসিজি,এ্যাম্বুলেন্স, সিলেটযাত্রা অতঃপর চিরবিদায়।
পূর্বাপর কোনো অসুখ নেই,অসুবিধা নেই,যেটুকু আক্রান্ত তারও চিকিৎসার জন্য কোনো সুযোগ মিললো না। মাত্র বত্রিশেই দূর্বার ছুটেচলা দুরন্ত ছেলে এপার ছেড়ে হয়ে গেলো পরপারী। বাবার কবরের পাশে চির নিদ্রায় ঘুমিয়ে গুঞ্জর পিতা।নেই গুঞ্জরময় গুনগুনানি,নেই খবরের অনুসন্ধানে অবিরাম ছুটে চলার তাড়া। নেই বন্ধু সহযোদ্ধাদের সাথে আড্ডা আর মান-অভিমান খোশ গল্পের আসর,ল্যাপটপের কী পেডে আঙ্গুল চাপানো আর শব্দ সাজানোর মগ্নতা। দুর্বার তারুণ্য আজ নিস্তব্ধ কবরে! আজ বড় নির্মম বাস্তবতায় আমরা চিরতরে হারালাম প্রিয় সাকিরকে। খুব সহজেই যেন সে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে নিলো।চাত্ করে উঠে হৃদয় কপাটে,এ কী হলো, হুট করেই চলে গেলো সাকির!
এ বিয়োগব্যথা সহিতে পারা আমাদের জন্য অনেক কঠিন,পরিবারের জন্য তো বিষ বাষ্পের মতোই-বজ্রকঠিন। আল্লাহ মহান তুমি মহীয়ান সবই তোমার সিদ্ধান্ত। কাকে কোথায় কোন সময়ে ডাক দেবে কেউ জানে না। প্রস্তুত অপ্রস্তুত বলতে কিছু নেই। শিশু যুবা তরুন কিংবা বৃদ্ধা নেই। সুস্থ কিংবা অসুস্থতা নেই। যখনই পয়গাম পাঠাবে তখনই জীবনাবসান ঘটবে। আমাদের আকুল আবেদন সকল ভূলত্রুটি ক্ষমা করে প্রিয় ভাইটিকে জান্নাতী মেহমান হিসেবে কবুল করো। আপনজদের শোক সইবার শক্তি দান করো। গুঞ্জর যেন বুঝে নেয় পিতার সাথে ইহকালীন খুনসুটির আর কোনো সুযোগ নেই। বুকে বসিয়ে ললাটে আদর করতে আর আসবেনা বাবা। অনন্ত জান্নাতে কোনোকালে সাক্ষাৎ হবে হয়তোবা। গভীর শোক ও সমবেদনা ।
Leave a Reply