আব্দুর রব ::
বড়লেখার হাকালুকি হাওরপাড়ে প্রতিপক্ষের হামলায় হতদরিদ্র গুরুতর জখমি ৫ জন কৃষককে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের ডাক্তাররা সঠিক চিকিৎসা না দিয়েই জোরপূর্বক ছাড়পত্র প্রদান করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অবশেষে ভুক্তভোগীরা রাগিব রাবেয়া মেডিকেলে ও পুনরায় বড়লেখা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছেন। ওসমানী মেডিকেলের এমন অমানবিক আচরণে বিভিন্ন মহলে ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে।
এদিকে নিরীহ কৃষকদের উপর হামলার ঘটনায় গুরুতর আহত ফয়জুর রহমানের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম ঘটনার রাতেই হামলাকারী ১২ ব্যক্তির বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেন। ঘটনার ৭ দিন অতিবাহিত হলেও পুলিশ কোনো আসামীকে গ্রেফতার করতে না পারায় বাদী পক্ষে চরম হতাশা বিরাজ করছে। থানার ওসি বলেছেন আসামীদের গ্রেফতারের জন্য পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
জানা গেছে, বড়লেখা উপজেলার গগড়া গ্রামের হতদরিদ্র কৃষক জাহাঙ্গীর আলম তার বাবা, ভাই ও চাচাদের নিয়ে গত ২১ ডিসেম্বর বসতবাড়ির পাশের ক্ষেতে বোরো ধানের চারা রোপন করছিলেন। পূর্ব বিরোধের জেরে বর্ণি নোয়াগাওয়ের গৌছ উদ্দিন, জসিম উদ্দিন, আব্দুল বাছিত, মনোহর আলী, মাতাব মিয়া, আতিক মিয়া প্রমুখ দা, লাঠি, লোহার রডসহ দেশিয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে তাদের উপর অতর্কিত হামলা চালায়। এতে জাহাঙ্গীর আলমের বাবা ফয়জুর রহমান, চাচা মুহিবুর রহমান, আব্দুর রহমান, ভাই সিপার আহমদ, চাচাত ভাই আব্দুর রাজ্জাক, মিজানুর রহমানের মাথায়, হাতে, পায়ে, ঘাড়ে, পিঠে মারাত্মক জখম হয়। ফয়জুর রহমানের হাতের কয়েক স্থান ভেঙ্গে যায় এবং কিছু অংশ ধারালো অস্ত্রের কোপে উড়ে যায়। রক্তাক্ত অবস্থায় আহতদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হলে কর্তব্যরত ডাক্তাররা তাদেরকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন।
আহতদের স্বজন আলতাফ হোসেন অভিযোগ করেন, বড়লেখা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে রেফার্ড করার পর ২১ ডিসেম্বর রাতে জখমীদের তিনি সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। হাসপাতালের তৃতীয় তলার এমএনএস বিভাগের ১১ নম্বর ওয়ার্ডে তাদের ভর্তি করা হয়। সরকারি এ হাসপাতালে স্যালাইন ছাড়া এসব মারাত্মক জখমী রোগীদের রহস্যজনকভাবে কোনো ওষুধই দেওয়া হয়নি। মাথা, হাত-পা সহ শরীরের বিভিন্ন স্থানের সেলাইয়ের জন্য বাহির থেকে সাড়ে ১৪ হাজার টাকার সুতা কিনে দিতে হয়েছে। মাথা ফাটা, হাত-পা ভাঙ্গা, শরীরের বিভিন্ন স্থানে মারাত্মক জখম থাকা রোগিরা যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে, কিন্তু কোন এক অদৃশ্য ইশারায় কর্তব্যরত ডাক্তাররা চিকিৎসা না দিয়েই ২৩ ডিসেম্বর আহত মুহিবুর রহমান, আব্দুর রহমান ও মিজানুর রহমানকে জোরপূর্বক সিট কেটে ছাড়পত্র দিয়ে হাসপাতাল থেকে বিদায় করেন। তাদের শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ, চিকিৎসা সমাপ্ত করে ছাড়পত্র দেওয়ার অনুনয় বিনয় করলেও সংশ্লিষ্টদের মন গলেনি। উল্টো ডাক্তাররা আমাদের অসহায়ত্ব নিয়ে উপহাস করেছেন। নিরুপায় হয়ে তাদের বাড়ি নিয়ে যাই। অবস্থার অবনতি ঘটায় ২৫ ডিসেম্বর পুনরায় তাদেরকে বড়লেখা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করি। এদিকে হাতভাঙ্গা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে মারাত্মক জখম থাকা রোগি ফয়জুর রহমান ও সিপার আহমদকেও চিকিৎসা না দিয়েই ডাক্তাররা রোববার দুপুরে জোরপূর্বক ছাড়পত্র দিয়ে বের করে দিয়েছে। পরে বাধ্য হয়ে তাদেরকে সিলেট রাগিব রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেছেন। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ হামলাকারীদের কেউ হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের প্রভাবিত করে উদ্দেশ্যমুলকভাবে তাদের চিকিৎসা প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত করেছে।
এব্যাপারে জানতে সোমবার বিকেলে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ব্রায়ান বঙ্কিম হালদারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘হাসপাতালে এরকম কোন ঘটনা ঘটেছে বলে আমার জানা নেই, আপনার মাধ্যমে জানতে পারলাম। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’#
Leave a Reply