এইবেলা ডেস্ক :: সম্পূর্ন এক ভিন্ন পেশা। পুরুষের পেশা হিসেবে পরিচিত। বিপরীত স্রোতে ভিন্ন পরিবেশে কাজ করে সফল হয়েছেন এক নারী। তার নাম লুবনা ইয়াসমিন।
নারী আবার ঠিকাদার হয় নাকি? এটা তো পুরুষের পেশা। শুরুতে এ ধরনের নানা টিপ্পনির মুখে পড়তে হয়েছে। এসব বাধা ঠেলে পুরুষদের সঙ্গে পাল্লা দিয়েই ঠিকাদারির কাজ করছেন লুবনা ইয়াসমিন। সিলেটের একজন প্রথম শ্রেণির ঠিকাদার। হয়েছেন শ্রেষ্ঠ করদাতা।
২০০৯ সালে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে ঠিকাদারি পেশায় কাজ শুরু করেন লুবানা। মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলার একটি রাস্তা ও সেতুর কাজ দিয়ে তাঁর ঠিকাদারি পেশায় যাত্রা শুরু। ওই প্রকল্পের ব্যয় ছিল প্রায় ৭০ লাখ টাকা। কুলাউড়া পৌরসভার বাসিন্দা হলেও থাকেন সিলেট সদরে।
সিলেট নগরে তার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের করা অনেক কাজের একটি সোবহানীঘাট-মেন্দিবাগ সড়কে সৌন্দর্য্য বর্ধন প্রকল্প। ধীরে ধীরে কাজের সুনামের সাথে পরিধিও বাড়ে। নগরীর সুবিদবাজারে ‘মুমু এন্টারপ্রাইজ’ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
স্বামী পেশায় একজন ঠিকাদার। লুবনারও আগ্রহ তৈরি হয় ঠিকাদারি কাজে। ঠিকাদারি কাজে গিয়ে এটা-ওটা জিজ্ঞেস করতেন। আস্তে আস্তে তার মনেও ঠিকাদার হওয়ার বাসনা জাগে। অবশ্য স্বামীও তাকে নিরুৎসাহিত করেন, লুবনার মনে জেদ চাপে। জেদ থেকেই ঠিকাদারি পেশায় যুক্ত হন লুবনা। কঠিন কাজ বলে প্রথমে মানা করলেও শেষতক ঠিকই সহায়তা করেন স্বামী মামুনুর রশীদ।
প্রতিবছর গড়ে সাত থেকে আটটি কাজ করেন লুবনা ইয়াসমিন। এসব কাজের অর্থমূল্য কয়েক কোটি টাকা। ব্রিজ, কালভার্ট, ইউনিয়ন পরিষদ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো, রাস্তাঘাট নির্মাণসহ নানা ধরনের কাজ তিনি করছেন। বর্তমানে প্রায় ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে সিলেট সিটি করপোরেশনের ২৭টি ওয়ার্ডে পানির সংযোগ লাইনের সংস্কারকাজ করছে তার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
লুবনা ইয়াসমিন জানান, নিজে দাঁড়িয়ে থেকে নিয়মিত কাজ তদারকি করতে হয় তাকে। ঠিকাদারি কাজ করতে গিয়ে মাঝে মধ্যে উটকো ঝামেলায়ও পড়তে হয়। স্থানীয় প্রভাবশালীরা অযথাই ভোগান্তিতে ফেলতে চান। তবে সবখানেই আমি কাজের গুণগত মান ধরে রাখার চেষ্টা করি। ফলে কাজে কোনো অনিয়ম পায় না বলে নিজ থেকেই এসব প্রভাবশালীরা একসময় সরে যান।
লুবনা জানান, কাজে সব সময়ই নারীদের প্রধান্য দেন তিনি। তার নিয়োজিত শ্রমিকদের অর্ধেকেরও বেশি থাকে নারী। ঠিকাদার হিসেবে আমার প্রতিষ্ঠানের একটা সুনাম আছে। দরপত্র অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়েই কাজ শেষ করার চেষ্টা করি।
অন্য নারীদের কাছেও এখন তিনি আদর্শ। সহ সভাপতি পদে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সিলেট উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির। অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জন করায় ২০২১ সালে সিলেট জেলার শ্রেষ্ঠ জয়িতা পুরস্কার পেয়েছেন লুবনা।
তিনি বলেন, যখন ঠিকাদারি শুরু করি, তখন আমার আত্মীয়স্বজন সবাই বলেছিলেন, বেশি দূর এগোতে পারব না। কিন্তু নারীরা যে চ্যালেঞ্জিং পেশায়ও সফল হতে পারেন, সেটা নিজেকে দিয়েই বুঝতে পারছি।
লুবনা ইয়াসমিন বলেন, আমি চাই, কাজের ক্ষেত্রে পুরুষদের চেয়ে নারীদের স্পৃহা ও ইতিবাচক মানসিকতা বেশি। নারীরা যেকোনো কাজই যতেœর সঙ্গে করে। ফলে চ্যালেঞ্জ নিলে সাফল্য আসবেই।
২০০৪ সালে মামুনুর রশীদ বকসের সঙ্গে লুবনা ইয়াসমিনের যখন বিয়ে হয়, তখন তিনি উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্রী। বিয়ের পর পড়াশোনা আর এগোয়নি। তার স্বামী একজন প্রতিষ্ঠিত ঠিকাদার। মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া পৌরসভার জয়পাশা গ্রামে তাদের মুল বাড়ি। সন্তানদের আরও ভালো পরিবেশে পড়াশোনার জন্য ২০১১ সালে সিলেট শহরে চলে যান। স্বামীর উৎসাহে আবার পড়াশোনা শুরু করেন লুবনা। প্রাইভেটে উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতক পাস করেন।#
(প্রথম আলোর নারী পাতা অবলম্বনে)
Leave a Reply