প্রনীত রঞ্জন দেবনাথ, কমলগঞ্জ :: চলিত বছরের মার্চ মাসে বাংলাদেশে প্রাণঘাতি নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দেয়। এরপর থেকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে জনসমাগম ও চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এতে কর্মহীন হয়ে পড়ে সারাদেশের মত মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ পৌর এলাকার শত শত কর্মজীবী মানুষ। বিশেষ করে কাজ হারিয়ে চরম বিপাকে পড়েন দিনমজুর, শ্রমজীবীসহ নিম্ন আয়ের মানুষজন। সংসার চালাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয়েছে তাদের। তাদের কাছে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধের চেয়ে পেট চালানোই ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। এই অবস্থায় জনপ্রতিনিধি ও বিত্তশালীরা দুস্থ মানুষজনদের পাশে দাঁড়ানোর কথা ছিল।
সেখানে মানুষের সংস্পর্শে আসলে করোনা ভাইরাসে সংক্রামিত হওয়ার আশংকায় অনেক জনপ্রতিনিধিই মাঠছাড়া ছিলেন। সেই জায়গায় ব্যতিক্রমভাবে ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করে জনসমাগম ও চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পরের দিন থেকে কমলগঞ্জ পৌর এলাকার গুরুত্বপূর্ণ স্থান সমূহে স্ব-শরীরে অবস্থান করে জীবাণুনাশক ঔষধ ছিটানো, রাস্তার মোড়ে মোড়ে সাবান ও পানীয়জলের ব্যবস্থা, বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করছেন কমলগঞ্জ পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক মোঃ জুয়েল আহমেদ।
এছাড়া পৌর এলাকার দুঃস্থ, নিম্ন আয়ের মানুষ ও ভাসমান মানুষদের মধ্যে ব্যক্তিগত তহবিল, সরকারি সাহায্য, এবং বিভিন্ন সমাজসেবী প্রতিষ্ঠান ও বিত্তশালীদের থেকে নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী সংগ্রহ করে রাস্তায় মানুষজনদের মাস্ক, জীবাণুনাশক ঔষধ, সাবান, নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্র সামগ্রী স্ব-শরীরের উপস্থিত হয়ে ঘরে ঘরে গিয়ে পৌঁছে দেয়া চেষ্টা করছেন। যদিও তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল ছিল। তবুও থেমে থাকেননি তিনি। কখনও পায়ে হেঁটে, কখনও রিক্সায় চড়ে আবার কখনও সাইকেলযোগে এসব নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি পৌঁছে দিয়েছেন মানুষের বাড়ি বাড়ি। কখনও নিজ কাঁধে মেশিন নিয়ে জীবানুনাশক স্প্রে করছেন রাস্তায় রাস্তায়। এ যেন মানবতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত। জনসমাগম ও চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর থেকেই মানুষের পাশে রয়েছেন তিনি। করোনাকালীন সময়ে তার এই মানবতাময় কাজকর্মের জন্য কমলগঞ্জ পৌরবাসীসহ উপজেলাবাসীর কাছে ‘মানবতার ফেরিওয়ালা’ নামে বেশ পরিচিতি লাভ করেছেন।
কমলগঞ্জ পৌরসভায় কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাব প্রতিরোধ করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ অনুযায়ী সরকারি সহায়তা ও মেয়র মো: জুয়েল আহমেদের ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে পৌর এলাকার ১০ হাজার কর্মহীন অসহায় ও হতদরিদ্র পরিবারের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী ও ৩ হাজার পরিবারকে নগদ ২০০ টাকা করে অর্থ বিতরণ করেন। তিনি নিজ এলাকার অসহায় ও হতদরিদ্র মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পৌঁছে দিয়েছেন খাদ্যসামগ্রী ও নগদ অর্থ। বিতরণ করেছেন মাতৃত্বকালীন, বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধি ভাতা।
করোনা শুরু হওয়ার পর থেকে পৌর এলাকার বিভিন্ন ওয়ার্ডে মাস্ক, সাবান, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, স্বাস্থ্য সুরক্ষার সামগ্রী ও লিফলেট বিতরণ করেন। করোনা আক্রান্তদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ফলমূল ও খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেন। প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের মাথাগোঁজার ঠাঁই করে দিয়েছেন। ৫০০ পরিবারের মধ্যে বাড়ি বাড়ি গিয়ে পৌঁছে দিয়েছেন শিশু খাদ্য। দিয়েছেন চাল ও ঘর নির্মাণের জন্য নগদ টাকা। পৌর এলাকার ১ হাজার মানুষের মধ্যে বিতরণ করেছেন ২ হাজার গাছের চারা। দুই ঈদে পৌর এলাকার ৪২টি মসজিদের ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের দিয়েছেন ঈদ উপহার।
এ ব্যাপারে কথা হয় পৌর এলাকার বয়োবৃদ্ধ মহিলা করিমন বেগম, জোয়াদ আলী, রুমন মিয়া, রহমত আলী, নূর আলী, রুশন আরা বেগম জানান, করোনার লকডাউনের সময় আমরা সরকারি নির্দেশমতে ঘরেই ছিলাম। কাজকর্ম না থাকায় ঘরে খাবার সংকট ছিল। এই দুর্দিনে মেয়র জুয়েল সাহের ঘরো আনিয়া খাদ্যসামগ্রী দিছেন। আমরারে নগদ টাকা, ব্যক্তিগত ও সরকারি-বেসরকারি অনেক সহায়তা করেছেন। সব সময় খোঁজ থবর নিয়েছেন।
আলাপকালে কমলগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মোঃ জুয়েল আহমেদ জানান, জনগণ আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে। তাদের সুখে-দু:খে পাশে থাকাটা আমার দায়িত্ব। করোনার এই সংকটময় সময়ে জনগণের পাশে থাকা, সচেতন করা, তাদের নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে চলাফেরা করা এবং সরকারী সহায়তাও আমাদের ব্যক্তিগত সহায়তা যদি মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পারি, সেটাই হবে আমাদের স্বার্থকতা। আমি সকলের সহযোগিতা চাই। নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে সকলকে পাশে নিয়ে কাজ করতে চাই। মহান সৃষ্টিকর্তা সকলের সহায় হোন।
এইবেলা/জেএইচজে
Leave a Reply