কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি :: তখনো চারদিক অন্ধকারে ঢাকা। কনকনে হিম বাতাস আর কুয়াশা মোড়ানো একটি ফুটবল মাঠ। সেই মাঠে জড়ো হয়েছেন দেশ-বিদেশের একঝাঁক দৌড় পাগল নারী-পুরুষ। কেউ বয়সে তরুণ-তরুণী। অনেকেই আবার বয়স্ক। তবে উচ্ছ্বাসে সবাই সমানে সমান। পাহাড়ি পথে দৌড়ানোর জন্য এসেছেন তাঁরা।
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগর চা বাগান ফুটবল মাঠ থেকে চা বাগানের আঁকা বাঁকা পথ ও পাহাড়ি এলাকায় শুক্রবার (০২ ডিসেম্বর) ভোর সাড়ে ৬টা থেকেই শুরু হয় আল্ট্রা ট্রেইল ম্যারাথন। ভারত, আমেরিকা, ইংল্যান্ড, চেক প্রজাতন্ত্র, রাশিয়াসহ বিভিন্ন দেশের ১৮ জন রানারসহ ৩০০ রানার এ ম্যারাথনে অংশ নেন। শমশেরনগর রানার্স কমিউনিটির আয়োজনে এবার চতুর্থবারের মত আয়োজন করা হয় এ আল্ট্রা ট্রেইল ম্যারাথন এর।
শমশেরনগর চা-বাগান মাঠে ভোরের আগেই উৎসাহী মানুষের ভিড়ে জমে। কেউ মাঠে তাঁবু গেড়ে রাত্রিবাস করেছেন। কেউবা আশপাশের হোটেল বা স্বজনের বাড়িতে আগের রাতেই এসে উঠেছিলেন। দৌড়ানোর জন্য সিলেট থেকে এসেছেন এইচএসসি ফাহিম আহমদ ফারহান। তিনি বলেন, চা-বাগানের ভেতর দিয়ে দৌড়ানোর মজাটাই অন্য রকম। শিশির কণা ঝরছে। মাথায় মুক্তার দানার মতো জমছে, দারুণ অভিজ্ঞতা। শমশেরনগর চা বাগান ফুটবল মাঠ থেকে রওনা দিয়েই চা-বাগানের উঁচু–নিচু পাহাড়ি পথে ছড়িয়ে পড়েন দৌড় প্রতিযোগীরা। নির্দেশিত পথে যাঁর যাঁর দুরত্ব অনুযায়ী, তাঁরা ছুটে চলেন।
শুক্রবার বিকাল ৪টায় অধ্যক্ষ মুজিবুর রহমান রঞ্জুর সভাপতিত্বে সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বিজয়ীদের মধ্যে ক্রেস্ট ও মেডেল বিতরন করেন কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিফাত উদ্দিন। শমশেরনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জুয়েল আহমেদের সঞ্চালনায় অনুুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান বিলকিস বেগম, বিশিষ্ট কন্ঠশিল্পী সেলিম চৌধুরী, সাবেক অধ্যক্ষ নুরুল ইসলাম।
আয়োজক ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দুই পর্যায়ের দুরত্বে এই ম্যারাথন দৌড় হয়। এর মধ্যে ছিল ২১ কিলোমিটার ও ৫০ কিলোমিটার চা বাগানের পাহাড়ি রাস্তায় দিয়ে দৌড়ে বিকাল ৪টায় আবার শমশেরনগর চা বাগান ফুটবল মাঠে শেষ হয় এ ম্যারাথনের দৌড়। বিকেল সাড়ে ৪টায় দুই বিভাগের বিজয়ীদের মাঝে সনদ, ক্রেস্ট ও মেডেল বিতরণ করে শেষ হয় এ ম্যারাথনের আসর।
পাহাড়ি পথে ধীর ও শান্ত গতির দৌড় আশপাশের চা-বাগানের মানুষসহ পথচারীরা আনন্দের সঙ্গে উপভোগ করেন। বিভিন্ন স্থানে পথের পাশের মানুষ দৌড়ে অংশগ্রহণকারীদের হাততালি দিয়ে শুভেচ্ছা ও স্বাগত জানান। শমশেরনগর, আলীনগর, কানিহাটি ও বাঘিছড়া চা-বাগানের পথে পথে নানা রঙের টি-শার্ট পরা নারী-পুরুষ ও শিশুর দৌড় সবুজ চাগাছের ফাঁকে ফাঁকে অপরূপ সৌন্দর্য ফুটিয়েছে। সিলেট থেকে অংশ নেওয়া আমিনুল হকের ভাষ্য, ট্রেলের আরও চার-পাঁচটা পয়েন্টে স্বেচ্ছাসেবক থাকলে ভালো হতো। অংশগ্রহণকারীরা সবাই নতুন। চিহ্নগুলো নিচু থাকায় অনেকের বুঝতে অসুবিধা হয়েছে। এ ছাড়া সবকিছু এক্সাইটিং ও প্রাকৃতিক ভিউ অসাধারণ। ম্যারাথনে অংশ নেওয়ার জন্য রাতে অনেকে তাবু বাস করেছেন।
ম্যারাথনে ২১ কিলোমিটার দুরত্বে ১ম স্থান অধিকার করেন সিলেট সেন্ট্রাল কলেজের এইচএচসি পরীক্ষার্থী ফাহিম আহমদ ফারহান এবং ৫০ কিলোমিটার দুরত্বে যৌথভাবে প্রথম স্থান অধিকার করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের প্রভাষক আব্দুল আহাদ ও রতন মিয়া। বিজয়ীদেরকে সম্মাননা ক্রেস্ট, মেডেল ও সনদ প্রদান করা হয়। এ ছাড়া অংশগ্রহনকারী ৩ শতাধিক নারী পুুষকে মেডেল ও সনদ প্রদান করা হয়। শমশেরনগর আল্ট্রা ট্র্রেইল ম্যারাথনে ৫০ কিলোমিটার দুরত্ব সম্পন্নকারীদেরকে বিশেষ সম্মাননা ক্রেস্ট ও সনদ প্রদান করা হয়।
শমশেরনগর রানার্স কমিউনিটির প্রশাসক (এডমিন) নবীল শমশেরী জানান, এবার শুক্রবার ভোরে ২১ কি:মি: ও ৫০ কি:মি: এই দুই ধাপে দৌড়ান রানাররা। শুক্রবার ভোর সাড়ে ৬টায় শমশেরনগর চা বাগান ফুটবল মাঠ থেকে এ দৌড় শুরু হয়। ম্যারাথন আয়োজনে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়। #
Leave a Reply