বড়লেখা প্রতিনিধি::
তাদের সবার পরনে নীল রঙের টি-শার্ট। তাদের কেউ কুড়াচ্ছিলেন চিপস-চানাচুরের খালি প্যাকেট। কেউ বা পলিথিন ও পানির খালি বোতল। কেউ আবার সেগুলো একস্থানে জমা করছিলেন। মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল) বেলা একটায় মৌলভীবাজারের বড়লেখার মাধবকুণ্ড পর্যটন এলাকায় হঠাৎ এই দৃশ্য দেখা গেল।
এভাবে একদল তরুণ মাধবকুণ্ড এলাকায় ঘুরতে আসা পর্যটকদের ফেলা যাওয়া পলিথিন, চিপস-চানাচুরের খালি প্যাকেট ও পানির খালি বোতল কুড়িয়ে সেগুলো সেখানে পুড়িয়ে ফেলেন। পরে সেখানে তারা একটি প্লাস্টিকের ডাস্টবিন দেন।
এসব তরুণরা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বড়লেখার কাঠালতলী সমাজ কল্যাণ পরিষদের সদস্য। সংগঠনের সদস্যরা মঙ্গলবার মাধবকুণ্ড প্রধান ফটকের ভেতর ও আশপাশের এক কিলোমিটার এলাকা পরিস্কার করেছেন। পরিছন্নতা অভিযানে তাঁদের সঙ্গে এসে যোগ দেন জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। তাদের এমন কাজের প্রশংসা করেছেন স্থানীয়রা।
সংগঠনের সদস্যরা জানান, মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতে বছরে বিভিন্ন উৎসবের পাশাপাশি প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটকরা ঘুরতে আসেন। এসব পর্যটকরা পলিথিন, চিপস-চানাচুর ও পানির বোতল সঙ্গে এনে খাওয়ার পর ডাস্টবিনে না ফেলে যত্রতত্র স্থানে ফেলে যান। এতে মাধবকুণ্ডের পরিবেশের ক্ষতির পাশাপাশি সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে। সম্প্রতি মাধবকুণ্ডে ঘুরতে গিয়ে বিষয়টি নজরে আসে কাঠালতলী সমাজ কল্যাণ পরিষদের চেয়ারম্যান শিক্ষক দেলওয়ার হোসেন চৌধুরীর। এরপর তিনি মাধবকুণ্ড এলাকায় পরিছন্নতা অভিযান পরিচালনার কথা চিন্তা করেন। বিষয়টি তিনি তার সংগঠনের সদস্যদের জানান। এরপর মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল) বেলা একটায় মাধবকুণ্ড এলাকায় সংগঠনের সদস্যরা পরিস্কার অভিযান শুরু করেন। পরিছন্নতা অভিযানে তাঁদের সঙ্গে এসে যোগ দেন উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান তাজ উদ্দিন ও দক্ষিণভাগ উত্তর ইউপির চেয়ারম্যান এনাম উদ্দিন ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।
স্থানীয় ব্যবসায়ী বেলাল আহমদ বলেন, পর্যটকরা মাধবকুণ্ডে ঘুরতে এসে খাওয়ার পলিথিন, চিপস-চানাচুর খেয়ে খালি প্যাকেট ও পানির বোতল যেখানে-সেখানে ফেলে যান। আমাদেরর এলাকার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কয়েকজন সদস্য সেগুলো কুড়িয়ে পরে পুড়িয়ে দিয়েছেন। তারা ভালো কাজ করছেন। আমরাও তাদের সহযোগিতা করেছি।
পরিষদের চেয়ারম্যান শিক্ষক দেলওয়ার হোসেন চৌধুরী মঙ্গলবার বলেন, মাধবকুণ্ড আমাদের ইউনিয়নের মধ্যে পড়েছে। প্রায় সেখানে যাওয়া হয়। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখি যেখানে-সেখানে পলিথিন, চিপস-চানাচুর খালি প্যাকেট ও পানির খালি বোতল পড়ে আছে। পর্যটকরা ঘুরতে এসে খাওয়ার পর সেগুলো ফেলে যান। ডাস্টবিন থাকলেও তারা সেগুলো সেখানে ফেলেন না। এতে মাধবকুণ্ডের পরিবেশের ক্ষতির পাশাপাশি সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে। বিষয়টি দেখে খারাপ লেগেছে। ভাবলাম একদিন পরিস্কার করা যায় কিনা। পরে বিষয়টি আমার সংগঠনের সদস্যদের সঙ্গে শেয়ার করি। তারা সাড়া দেওয়ায় আজকে পরিছন্নতা অভিযান পরিচালনা করেছি। আমাদের জনপ্রতিনিধি ও ব্যবসায়ীরা সহযোগিতা করেছেন।
পরিষদের সভাপতি আব্দুল্লাহ আল সাজু ও সাধারণ সম্পাদক কাওসার আহমেদ রনি বলেন, মাধবকুণ্ডে আমরা প্রায় এক কিলোমিটার এলাকা পরিস্কার করেছি। পলিথিন, চিপস-চানাচুরের প্যাকেটগুলো কুড়ানোর পর সেখানে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। সেখানে একটি ডাস্টবিনও দিয়েছি।
উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান তাজ উদ্দিন বলেন, মাধবকুণ্ডে পরিছন্নতা অভিযান পরিচালনা করেছে কাঠালতলী সমাজ কল্যাণ পরিষদের সদস্যরা। খবর পেয়ে আমিও তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছি। আমাদের সবার উচিত তাদের মতো নিজের আশপাশের এলাকা পরিস্কার করা। এতে পরিবেশ সুন্দর থাকবে। দূষণমুক্ত থাকবে।
পরিছন্নতা অভিযানে পরিবেশ বিষয়ক স¤পাদক জাহিদ হাসানের নেতৃত্বে ছিলেন পরিষদের চেয়ারম্যান শিক্ষক দেলওয়ার হোসেন চৌধুরী, পরিষদের সভাপতি আব্দুল্লাহ আল সাজু, সাধারণ স¤পাদক কাওসার আহমেদ রনি, সহসভাপতি সাব্বির আবির, অর্থ স¤পাদক মো. আব্দুল গাফফার, যুগ্ম সাধারণ স¤পাদক হামিদ হোসেন আজাদ, সাংগঠনিক স¤পাদক মো. মোর্শেদ আলম, কামরান হোসেন, আলী হায়দার মুন্না, মুহিবুর রহমান, মারওয়ান হোসেন, ক্রীড়া সম্পাদক শাহজাহান চৌধুরী, সহশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক জিয়াউর রহমান, প্রচার সম্পাদক ইকবাল হোসেন, মর্তুজ আলী, পাঠাগার সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদ শাম্মু, সহ স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক রুম্মান আহমদ, সহ সমাজ কল্যাণ সম্পাদক জামিল আহমদ, সদস্য আইনুল ইসলাম।
Leave a Reply