এইবেলা, কমলগঞ্জ ::
এক সময়ের বৃহত্তর সিলেটের শস্যভান্ডার খ্যাত মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার প্রতিটি গ্রামে গ্রামে চলছে এখন আউশ ধান কাটা ও মাড়াইয়ের উৎসব। চলতি বছরে করোনা দুর্যোগকে সঙ্গে নিয়ে আউশের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে কৃষি পরিবার। করোনার সঙ্কটকালে আউশ ধান কাটা ও মাড়াইয়ে এবং আমন ধান রোপনে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন উপজেলার কৃষকরা। দিগন্ত বিস্তৃত মাঠ জুড়ে এখন দোলা দিচ্ছে পাকা সোনালী ধান। বিস্তৃত সোনালী ফসলের মাঠ এখন যেনো প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে আরো বিকশিত করে তুলছে। মাঠের পর মাঠ ছড়ানো পাকা ধানের সোনালী আভা ও মন মাতানো গন্ধে যেন দিগন্ত ছেঁয়ে গেছে।
কমলগঞ্জ উপজেলার পতনঊষার, মুন্সীবাজার, শমশেরনগর, রহিমপুর, আলীনগর, কমলগঞ্জ পৌর এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, চলতি মৌসুমে আউশ ধান কাটা ও মাড়াইয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন কমলগঞ্জের প্রত্যন্ত এলাকার কৃষকরা। করোনার প্রাদুর্ভাবে শ্রমিক সঙ্কটের কারণে ঘরের নারী-পুরুষ একত্রে যোগ দিয়েছেন কৃষিকাজে। ভালো ফসল উৎপাদন হওয়ায় হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করছেন তারা। করোনা পরিস্থিতিতে আউশের ভালো ফলন হওয়ায় কৃষকদের মুখে ফুটেছে হাসির ঝিলিক। এদিকে, আউশ ধান কাটা ও মাড়াইয়ের সাথে চলতি মৌসুমে আমন ধানের চারা রোপণের কাজ করছেন কৃষকরা। জমিতে পানি সেচ দিয়ে জমি প্রস্তুত করে বীজতলা থেকে চারা তুলে রোপণ করছেন তারা। ভালো ফসল উৎপাদনের স্বপ্ন নিয়ে কাজ করছেন তারা। করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতে শ্রমিক সঙ্কটের কারণে আউশ ধান কাটা ও আমন চারা রোপণে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে তাদের। এরপরও থেমে নেই তারা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় এবার আউশ ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা মিলিয়ে এবার আউশ ধান চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্র ধরা হয়েছিলো ১২ হাজার ৮৮ হেক্টর। তবে তা অর্জিত হয়েছে ১২ হাজার ৯৪৫ হেক্টর। এ বছর চালের লক্ষ্যমাত্রা ২.৬৩ মেট্রিক টন ধরা হলেও অর্জিত হয়েছে ২.৮৫ মেট্রিক টন। যা বিগত ৩বছরের তুলনায় বেশি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেছে। কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের পাশাপাশি মাঠপর্যায়ের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে চলতি মৌসুমে আউশ ধান আবাদে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এ উপজেলার কৃষকদের সার্বিক পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। অনুকূল আবহাওয়া, সঠিক সময়ে বৃষ্টিপাত হওয়ায় এবার আউশের বাম্পার ফলন হয়েছে। ধানের উৎপাদন ভালো হওয়াতে একদিকে যেমন কৃষক পরিবারও খুশি, অন্যদিকে বিভিন্ন এলাকায় দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারাও আউশ ধান উৎপাদনে বেশ মুগ্ধ।
কৃষক তোয়াবুর রহমান, সুনীল দেবনাথ, রামানন্দ মালাকার, মনির মিয়া, গৌরাঙ্গ দেব, জাফর আলী, কাজল মল্লিকসহ কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিগত কয়েক বছরের তুলনায় এ বছর ফলন ভাল হয়েছে। তাছাড়া বাজারে ধানের দামও ভালো। এবার ৬৪০টাকা-৭০০টাকা দরে ধান বিক্রি হচ্ছে। যা গত বছরের তুলনায় বেশি। তবে করোনাভাইরাসের কারণে প্রয়োজনীয় শ্রমিক সঙ্কট রয়েছে। এছাড়া যে পরিমাণ শ্রমিক রয়েছে তাদের মজুরির পরিমাণও বেশি। তবে ধানের বাজার দর বাড়তি থাকলে এবারের আউশ আবাদে কৃষকদের লস হবে না বলে কৃষকরা আশাবাদী।
কৃষকরা আরো জানান, আউশ ধান কাটা ও মারাইয়ের পাশাপাশি চলছে আমন ধান রোপনের ব্যস্তস্থা। বীজতলা থেকে চারা উত্তোলন, বীজ বপনের উপযোগী করে জমি তৈরি ও চারা গাছ রোপণসহ চাষের জন্য প্রয়োজনীয় নানা কাজ চলছে জমিতে। চাষের জন্য তৈরি হওয়া জমিতে দ্রুত চলছে রোপণের কাজ। তাদের প্রত্যাশা আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আউশের মতো আমনের বাম্পার ফলন হবে। আবার অনেক কৃষক প্রায় সপ্তাহ দিন আগেই রোপণের কাজ শেষ করেছেন। তবে সব চাষিই ভালো ফলনের আশায় ফসলের যতœ নিতে খেতের জমিতে সময় দিচ্ছেন। লাগানো চারা ধানগুলোর নানাভাবে পরিচর্যা করছেন।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আশরাফুল আলম জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর আউশের বাম্পার ফলন হয়েছে। চলতি বছরে আউশের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১২ হাজার ৮শ’ ৮৮ হেক্টর। আর অর্জিত হয়েছে ১২ হাজার ৯শ’ ৪৫ হেক্টর। যা গত বছরের তুলনায় বেশি। বাজারে ধানের দাম ভাল। এভাবে ধানের দাম থাকলে কমলগঞ্জের কৃষকগণ লাভবান হবে। তিনি আরো জানান, কৃষি বিভাগের লোকজন সার্বক্ষণিক মাঠে কাজ করছেন। এ বছর আমন ধান চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৭হাজার ৩শ’ হেক্টর।#
Leave a Reply