বড়লেখা প্রতিনিধি
বাবা-মায়ের কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি, মৌলভীবাজার-১ (বড়লেখা-জুড়ী) আসনের সাবেক চারবারের সংসদ সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী আইনজীবী এবাদুর রহমান চৌধুরী। বৃহস্পতিবার বেলা দুইটায় বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণভাগ ইউপির গাংকুল গ্রামে চতুর্থ জানাজা শেষে তাঁকে গ্রামের সার্বজনিন কবরস্থানে বাবা-মায়ের কবরের পাশে দাফন করা হয়েছে।
এর আগে ওইদিন সকাল ৮টায় মৌলভীবাজার জেলা জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে দ্বিতীয় জানাজা ও সকাল ১১টায় বড়লেখা পিসি মডেল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে তাঁর তৃতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় রাজনীতিবিদ, সমাজসেবী, শিক্ষক, শিক্ষানুরাগী, দলীয় নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ অংশ নেন। পিসি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জানাজায় অংশ নেন সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, সাবেক এমপি নওয়াব আলী আব্বাস, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি নাসির উদ্দিন আহমদ মিঠু, বড়লেখা উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল হাফিজ, সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান খসরু, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম সুন্দর, পৌরসভার মেয়র আবুল ইমাম মো. কামরান চৌধুরী, সাবেক মেয়র ফখরুল ইসলাম প্রমুখ। জানাজার আগে স্মৃতিচারণমূলক বক্তব্যে এবাদুর রহমান চৌধুরীর বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন বক্তারা।
বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ আইনজীবী এবাদুর রহমান চৌধুরী গত বুধবার (৬ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৩টায় ঢাকা ইবনে সিনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবসস্থায় ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর। তিনি দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন। তিনি চার মেয়ে, আত্মীয়-স্বজনসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। ওইদিন (বুধবার) বাদ মাগরিব ঢাকার লালমাটিয়া ‘সি’ ব্লক জামে মসজিদে মরহুমের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে স্বজনরা তাঁর লাশ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যান।
অ্যাডভোকেট এবাদুর রহমান চৌধুরী ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান থেকে সক্রিয় রাজনীতির শুরু করেন। পেশায় তিনি সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ছিলেন। আইনজীবী হিসেবে তাঁর ব্যাপক খ্যাতি ছিল। রাজনৈতিক জীবনে একসময় ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। পরে তিনি জাতীয় পার্টি ও বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত হন। তিনি ১৯৮৮ সালে চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মৌলভীবাজার-১ আসন থেকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। একই আসন থেকে তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রার্থী হিসেবে ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের ষষ্ঠ ও ২০০১ সালের সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি চারদলীয় জোট সরকারের আমলে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় তিনি তাঁর নির্বাচনী এলাকায় শিক্ষা, যোগাযোগসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন করেন। বিশেষ করে নির্বাচনী এলাকায় শিক্ষার আলো বিস্তারে তিনি ব্যাপক অবদান রেখেছেন। ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী দলের দলীয় মনোনয়ন পেলেও বার্ধক্যজনিত কারণে তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। এতে দলের কর্মী ও সমর্থকরা হতাশ হয়ে পড়েন।
এদিকে বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ এবাদুর রহমান চৌধুরীর মৃত্যুতে পরিবেশ মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য এম. নাসের রহমান, বড়লেখার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মুহাম্মদ সিরাজ উদ্দিন, বড়লেখা উপজেলা চেয়ারম্যান সোয়েব আহমদ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম সুন্দর, জেলা বিএনপির উপদেষ্ঠা ও কাতার বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শরীফুল হক সাজু, সহ-সভাপতি নাসির উদ্দিন আহমদ মিঠু, বড়লেখা প্রেসক্লাবের সভাপতি অসিত রঞ্জন দাস, সাধারণ সম্পাদক আইনজীবী গোপাল দত্ত, বড়লেখা সাংবাদিক সমিতির সভাপতি ইকবাল হোসেন স্বপন, সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রব, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী বড়লেখা উপজেলা শাখার ভারপ্রাপ্ত আমীর ফয়ছল আহমদ ও সেক্রেটারি আব্দুল্লাহ আল মাহফুজ সুমন, উপজেলা আল-ইসলাহর সভাপতি মাওলানা আব্দুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ নাজিম উদ্দনি প্রমুখ গভীর শোক ও শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।
Leave a Reply