বড়লেখা প্রতিনিধি :
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ও ‘আমরা বিএনপি পরিবার’ এর উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘ফেসিস্ট সরকারের দোসররা বসে নেই। তারা নানা ধরণের চক্রান্ত করছে। তাই ড. মোহাম্মদ ইউনুসের অর্ন্তবর্তীকালিন সরকার ব্যর্থ হলে গণঅভ্যুত্থানে আত্মত্যাগকারী আবু সাঈদ, মুগ্ধ, ফায়াজের আত্মা কষ্ট পাবে, তাদের আত্মত্যাগ কলঙ্কিত হবে। গণতন্ত্রের পক্ষে যারা জীবন দিয়েছেন, স্বর্ণা দাসের মতো স্বার্বভৌমত্তের পক্ষে যারা জীবন দিয়েছেন তাদের স্মরণ রাখতে হবে। তাহলে এই দেশ বাঁচবে। স্বার্বভৌমত্ত¡ বাঁচবে। স্বাধীন জাতি হিসেবে আমরা মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারব। আর যদি সরকারের ব্যর্থতায় জুলাই গণহত্যায় জড়িতরা মাথাছাড়া দিয়ে উঠে তবে, এটা হবে জাতির জন্য দুর্ভাগ্য।’
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে নিহত কিশোরী স্বর্ণা দাসের পরিবারের সদস্যদের সাথে স্বাক্ষাৎ উপলক্ষে বড়লেখা ও জুড়ী উপজেলা বিএনপি আয়োজিত মৌলভীবাজারের জুড়ীর খাগটেকা বাজারে রোববার (৬ অক্টোবর) দুপুরে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী উপরোক্ত কথাগুলো বলেন। অনুষ্ঠান শেষে স্বর্ণার পরিবারকে ‘আমার বিএনপি পরিবার’-এর পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তা তোলে দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির উপদেষ্টা ও কাতার বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শরিফুল হক সাজু। বড়লেখা উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব ইকবাল হোসেন ও সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল কাদির পলাশের যৌথ সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর উপদেষ্টা আলমগীর কবীর, আহবায়ক আতিকুর রহমান রুমন, সদস্য সচিব কৃষিবিদ মো. মোকছেদুল মোমিন মিথুন, সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরী, মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সহ সভাপতি নাসির উদ্দিন আহমদ মিঠু, বড়লেখা উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি আলাল উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান খছরু, জুড়ী উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান আজগর, মৌলভীবাজার জেলা ছাত্রদলের রুয়েল আহমদ, সিলেট জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন দিনার প্রমুখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘আগস্টের ৫ তারিখে জনগণের যে বিপ্লব হয়েছে, সেই বিপ্লবের প্রেক্ষিতে গঠিত অর্ন্তবর্তী সরকারের প্রতি এই দেশের জনগণের বিশ^াস এবং আস্থা রয়েছে। আমরা এখনও তাদের উপর থেকে আস্থা হারাইনি। কিন্তু তারা কেমন যেন একটু গাছাড়া ভাব নিয়ে দেশ চালাচ্ছেন। এই যে সীমান্তে হত্যাকাÐ, এ হত্যা নিয়ে অর্ন্তবর্তী সরকার নির্লিপ্ত কেন? উদাসীন কেন? আপনাদেরতো তা হওয়ার কথা না, জনগণ তো আপনাদের সমর্থন করেছে। কেন আপনাদের কণ্ঠে জোরালো আওয়াজ বের হল না, এই নৃশসংতার জন্য একটা কড়া নিন্দা অর্šÍবর্তী সরকারের পক্ষ থেকে হল না এই প্রশ্ন মানুষের মুখে মুখে।’
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘স্বাধীনতার পর থেকে দেশে অনেক সীমান্ত হত্যা হয়েছে। যে সরকার এসেছে, তারা প্রতিবাদ করেছে। শুধু শেখ হাসিনার সরকার ছাড়া। শেখ হাসিনার সরকার কোন প্রতিবাদ করেনি। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তকে শান্তিপূর্ণ সীমান্ত করা নিয়ে অনেক কথা হয়েছে, আহ্বান জানানো হয়েছে। কিন্তু সীমান্ত হত্যা বন্ধ হয়নি। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তকে পৃথিবীর সব চাইতে রক্তাক্ত সীমান্ত, সহিংস সীমান্ত এবং সব চাইতে মৃত্যু আর লাশের সারিতে পরিণত করেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘শেখ হাসিনার জোর জবরদস্তির ১৬-১৭ বছরে এতো সীমান্ত হত্যা হয়েছে, কিন্তু তিনি (হাসিনা) নিস্ক্রীয় ছিলেন। শেখ হাসিনার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সীমান্ত হত্যা নিয়ে একদিনও কোনো বিবৃতি দেওয়া হয়নি। এতই নতজানু ছিলেন যে দেশের অখন্ড, স্বীধীনতা ও সার্বভৌমত্তের পক্ষে কথা বলার সাহস রাখেননি। কারণ তিনি ছিলেন জনবিচ্ছিন্ন। তিনি ছিলেন ঘাতক, শিশুদের রক্ত পান করতে দ্বিধা করতেন না। শুধুমাত্র ক্ষমতায় থাকার জন্য অনেক হত্যা করেছেন, তার সিংহাসন ঠিকিয়ে রাখার জন্য গ্যারান্টি ছিল পাশর্^বর্তী দেশ। এ জন্য তারা (ভারত) গণতান্ত্রিক দেশ হওয়ার পরও শেখ হাসিনার মতো জনগণ ও স্বার্বভৌমত্ব বিরোধি সরকারেকে তারা সমর্থন করেছে, এটা এ দেশের মানুষ কোনোদিন ভুলেনি, ভুলবেও না।’
রিজভী আরও বলেন, ‘শেখ হাসিনার পতনের পর তারা (ভারত) আরও আগ্রাসী হয়ে গেছে। তারা মনে করছে তাদের হাতের পুতুল, হাতছাড়া হয়ে গেল। এ বেদনায় বাংলাদেশ সীমান্ত আরও রক্তাক্ত হয়েছে। আরও বেশি বিপজ্জনক হয়েছে, আরও বেশি সহিংস হয়েছে, লাশের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে, সীমান্ত অঞ্চলগুলোতে।’
প্রসঙ্গত, গত ১ সেপ্টেম্বর রাতে কুলাউড়া উপজেলার শরীফপুর ইউনিয়নের লালারচক সীমান্ত দিয়ে মায়ের সঙ্গে অবৈধভাবে ভারতে যাওয়ার পথে বিএসএফের গুলিতে মারা যায় স্বর্ণা দাস। স্বর্ণা জুড়ী উপজেলার পশ্চিমজুড়ী ইউনিয়নের কালনীগড় গ্রামের বাসিন্দা পরেন্দ্র দাসের মেয়ে। সে স্থানীয় নিরোধ বিহারী উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী ছিল।
Leave a Reply