বড়লেখা প্রতিনিধি :
বড়লেখায় ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত চা শ্রমিক গোপাল বাক্তির ময়না তদন্ত শেষে সোমবার বিকেলে স্বজনদের নিকট লাশ হস্তান্তর করেছে থানা পুলিশ। বিকেল পাঁচটায় পাথারিয়া চা বাগান সার্বজনিন শ্মশানঘাটে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে।
নিহত গোপাল বাক্তির বাবা, স্ত্রী, সন্তানসহ শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের শান্তনা দিতে বাড়িতে ছুটে যান ইউএনও তাহমিনা আক্তার। তিনি সৎকারে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আর্থিক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। এদিকে সীমান্ত হত্যায় তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন, প্রতিবাদ সভা ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বিএনপি, জামায়াতসহ বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন।
জীবিকার তাগিদে সীমান্তের জঙ্গলে বাঁশ কেটে আনতে গেলে নিরীহ চা শ্রমিক গোপাল বাক্তিতে বিএসএফ নির্মমভাবে গুলি করে হত্যার প্রতিবাদে প্রতিবাদে রোববার রাতে বড়লেখা পৌরশহরে বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদল ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে। পরে তারা শহরে বিক্ষোভ মিছিল করেন।
সীমান্তের জিরো লাইনের ২০০ গজ অভ্যন্তর থেকে রোববার সন্ধ্যায় বিজিবি, পুলিশ ও স্বজনরা গোপাল বাক্তির লাশ উদ্ধার করেন। সে উপজেলার দক্ষিণভাগ দক্ষিন ইউনিয়নের নিউ সমনবাগ চা বাগানের মোকাম সেকশনের সাবেক ইউপি সদস্য অকিল বাক্তির ছেলে।
প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য দেন মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সাবেক উপদেষ্টা কাতার বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শরীফুল হক সাজু, উপজেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি নছিব আলী, পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি আনোয়ারুল ইসলাম, উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক আব্দুস শহীদ খান, উপজলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল আলম খোকন, সাবেক প্রচার সম্পাদক আব্দুল কুদ্দুস স্বপন, পৌর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক মুহাচ্ছিনুর রহমান বাদল, বিএনপির নেতা মীর মখলিছুর রহমান, আব্দুল মালিক, আব্দুল জব্বার, উপজেলা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল কাদির পলাশ, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক রায়হান মুজিব, উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব আরিফুল ইসলাম, পৌর ছাত্রদলের আহ্বায়ক শাহরিয়ার ফাহিম, পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব ইমন আহমদ, বড়লেখা সরকারি কলেজ ছাত্রদলের আহ্বায়ক জাফর আহমদ প্রমুখ।
প্রতিবাদ সভায় বিএনপি নেতা শরীফুল হক সাজু বলেন, বিএসএফ একের পর এক সীমান্তে নিরীহ বাংলাদেশি নাগরিকদের গুলি করে হত্যা করেছে। গত আগস্টে তারা স্কুলছাত্রী স্বর্ণা দাসকে পাখির মত গুলি করে হত্যা করে লাশ ফেলে যায়। এই হত্যার বিচার না হলে বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে।
অন্যদিকে বিএসএফের গুলিতে চা শ্রমিক গোপাল বাক্তির মৃত্যুর ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে মৌলভীবাজার জেলা জামায়াত। রোববার (২২ ডিসেম্বর) রাতে এক বিবৃতিতে জেলা জামায়াতের আমীর প্রকৌশলী মো. শাহেদ আলী ও সেক্রেটারি মো. ইয়ামীর আলী এই হত্যাকাণ্ডের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশ সীমান্তে এভাবে নিরীহ মানুষ হত্যা কাঙ্খিত নয়। অবিলম্বে এ ধরনের হত্যা বন্ধ এবং গোপাল হত্যাকারীদের আইনের আওতায় এনে দ্রুত শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
এর আগে রোববার বিকেলে নিহত গোপালের পরিবারকে তাৎক্ষণিক দেখতে যান জামায়াতে ইসলামীর জেলা নায়েবে আমীর মাওলানা আব্দুর রহমান ও বড়লেখা-জুড়ী সংসদীয় আসনের জামায়াত মনোনীত প্রার্থী মাওলানা আমিনুল ইসলাম।
বড়লেখা থানার ওসি মো. আব্দুল কাইয়ুম জানান, সোমবার বিকেলে ময়না তদন্ত শেষে নিহতের লাশ তার স্বজনদের নিকট হস্তান্তর করেছে পুলিশ। ময়ন্ত তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর নিহত গোপাল বাক্তির মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে।
Leave a Reply