কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি :: এক সময়ের বৃহত্তর সিলেটের শস্যা ভান্ডার হিসাবে খ্যাত মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলা। কিন্তু সবজি সংরক্ষণের জন্য কোন হিমাগার না থাকায় কৃষকের মুখের হাসি মাঠেই মলিন হচ্ছে। প্রতিটি সরকারের আমলে হিমাগার স্থাপনের আশ্বাস পাওয়া গেলেও বাস্তবে কোন কাজ হয়নি। ফলে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার কারণে ফসল উৎপাদনে উৎসাহ হারিয়ে ফেলছেন কৃষকরা। কারণ সবজি তোলার সাথে সাথেই বাধ্য হয়ে ‘পানির দরে’ বিক্রি করতে হচ্ছে তাদের কষ্টার্জিত ফসল। না হলে পঁচে নষ্ট হয়ে যাবে এই ভয়ে। বর্তমানে টমেটোর চাষের বাজারজাত করনের শেষ সময় চলছে। বাজারে মূল্যও কমে গেছে। মজুরী ও পরিবহন খরচ না উঠায় চাষিরা ক্ষেত থেকে টমেটো তুলছেন না। ফলে ক্ষেতেই টমেটো বিনষ্ট হচ্ছে। অথচ আগামী মাসখানেক পরই টমেটো ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হবে।
কমলগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার আলীনগর, আদমপুর, মাধবপুর, ইসলামপুর, কমলগঞ্জ সদর ইউনিয়ন ও পৌর এলাকার তিলকপুর, জামিরকোনা, হোমেরজান, পাত্রখোলা, কাটাবিল, নাজাতকোনা, ধলাইর পার, নরেন্দ্রপুর, ছয়ছিড়িসহ বিভিন্ন গ্রামে প্রায় ৩৫ হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষাবাদ হয়েছে। তবে গ্রাফটিং পদ্ধতিতে কেউ কেউ বারো মাসও টমেটো চাষাবাদ করেন।
মাধবপুর ইউনিয়নের কাটাবিল গ্রামের সবজি চাষী জয়নাল মিয়া, ভাসানীগাঁও গ্রামের মতিন মিয়া, ছয়ছিড়ি গ্রামের আবুল কালাম, শুকুরউল্লাহ গ্রামের আব্দুল মন্নান জানান, ‘স্থানীয় বেপারীরা এলাকা থেকে স্বল্প দামে কৃষকের শস্য কিনে ট্রাকে করে দেশের অন্যান্য এলাকায় নিয়ে বেশি দামে বিক্রি করছে। এতে স্থানীয় কৃষকরা লাভবান হচ্ছে না। কৃষকের ভাগ্যের উন্নয়নে স্থানীয়ভাবে এখানে একটি হিমাগার স্থাপন করার জন্য দীর্ঘদিন থেকে আমরা প্রশাসনের কাছে জোর দাবী জানিয়ে আসছি। প্রতিটি সরকারের আমলে জনপ্রতিনিধিরা হিমাগার স্থাপনের আশ্বাস দিলেও কিন্তুু কেউ কথা রাখেননি। তারা আরো বলেন, বাজার দর পড়ে যাওয়ায় বর্তমানে ফসলের মাঠেই অনেক ফসল রয়ে গেছে। টমেটো তোলার মজুরী ও পরিবহন ব্যয় না উঠার কারনে মাঠেই কষ্টের ফসল পঁচে বিনষ্ট হচ্ছে। আগে বিভিন্ন এলাকার পাইকাররা টমেটো নিতে ক্ষেতে আসলেও এখন কোন পাইকার আসছেন না। আগের মতো টমেটোর চাহিদা এখন নাই। টমেটো তোলা, গাড়ীভাড়া দিয়ে বাজারে নিয়ে ৩-৪ টাকা কেজি বিক্রি করতে হয়। এক্ষেত্রে দেখা যায় বিক্রির চেয়ে খরচ বেশি, তাই আর ক্ষেতে থাকা টমেটো তুলিনা, ক্ষেতেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে সব।
মাধবপুর বাজারের টমেটোর আড়ৎদার মো. শাহজান মিয়া, আব্দুর রাজ্জাক জানান, ‘গত একমাস ধরে আড়তে টমেটো বিক্রি হচ্ছে কেজি ৮-১০ টাকা ধরে। গত সপ্তাহ থেকে বিক্রি করছি ৩-৪ টাকায়। বাজারে টমেটোর দাম এতটাই কমে গেছে যার কারণে কৃষক টমেটো তুলতে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছেন। তবে যারা আগাম টমেটো চাষ করেছিলেন তারা লাভবান হলেও বাকিরা হয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত।’ এদিকে হতাশা ব্যক্ত করে কৃষক মোস্তফা কামাল জানান, বিক্রির চেয়ে খরচ বেশি হওয়ায় টমেটো ক্ষেতে তুলার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছি।
কমলগঞ্জ উপজেলা কৃষি র্কমর্কতা জয়ন্ত কুমার রায় বলেন, টমেটো একটি পচনশীল ফসল, তাছাড়া এখন অন্যান্য সবজিও বাজারে থাকায় এবং এবছর উৎপাদন বেশি হওয়ায় কৃষকরা দাম পাচ্ছেনা। তবে যারা আগাম টমেটো চাষ করেছেন তারা ভালো দাম পেয়েছেন। এছাড়া এখন যারা টমেটো লাগাবেন আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে তারাও ভালো দাম পাবেন।
কমলগঞ্জ উপজেলায় হিমাগার স্থাপনের বিষয়টি জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী র্কমর্কতা মাখন চন্দ্র সূত্রধর জানান, এ উপজেলার কৃষকের কষ্টের ফসল সংরক্ষণের জন্য সিলেটের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মহোদয়কে অবগত করা হয়েছে। এছাড়া মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নজরে রয়েছে। আশাকরি দ্রুত হিমাগার স্থাপন করা সম্ভব হবে।#
caller_get_posts is deprecated. Use ignore_sticky_posts instead. in /home/eibela12/public_html/wp-includes/functions.php on line 6121caller_get_posts is deprecated. Use ignore_sticky_posts instead. in /home/eibela12/public_html/wp-includes/functions.php on line 6121
Leave a Reply