নিটার প্রতিবেদন :: সাভারের নয়ারহাটে অবস্থিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ও উপাদান প্রকল্প প্রতিষ্ঠান জাতীয় বস্ত্র প্রকৌশল ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (নিটার) -এ দিন দিন বাড়ছে চুরির ঘটনা। ১৩ একরের সবুজ-শ্যামল এই ক্যাম্পাসে বর্তমানে প্রায় ২ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছেন। শিক্ষার্থীদের আবাসনের জন্য রয়েছে তিনটি আবাসিক হল—দুটি ছাত্রদের জন্য এবং একটি ছাত্রীদের জন্য।
নিটারে বর্তমানে ২০টির মতো একাডেমিক ক্লাসরুম রয়েছে, যার বেশ কয়েকটি প্রজেক্টর, এসি ও আধুনিক শিক্ষাসামগ্রী দিয়ে সজ্জিত করা হয়েছে। তবে সম্প্রতি এই ক্লাসরুমগুলোতেই ঘটেছে একাধিক চুরির ঘটনা। চুরির পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসন বাধ্য হয়ে বেশিরভাগ কক্ষ থেকে প্রজেক্টর সরিয়ে নিয়েছে। এতে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনায় মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছেন। প্রকৌশলভিত্তিক পাঠ্যক্রমে যেখানে প্রজেক্টর অপরিহার্য, সেখানে এই সংকট শিক্ষকদের জন্যও কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছে।
বিশেষ করে ভিডিও উপস্থাপনা ও প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষাদানে প্রজেক্টরের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। যদিও বিকল্প হিসেবে কম্পিউটার ল্যাব ও আইটি অফিস থেকে কিছু প্রজেক্টর সংগ্রহ করা যায়, তবে সেগুলো এক ক্লাস থেকে অন্য ক্লাসে বারবার আনা-নেওয়াকে শিক্ষার্থীরা দুর্ভোগ হিসেবেই দেখছেন। শুধু প্রজেক্টর নয়, ক্লাসরুম থেকে চেয়ার এবং সিসি ক্যামেরা চুরির ঘটনাও ঘটেছে বেশ কয়েকবার।
আরও উদ্বেগজনক তথ্য পাওয়া গেছে ছাত্র হলের বর্ধিত ভবন-১ এ অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে। দিনের আলোতেও রুম থেকে জুতা, পড়ার টিশার্ট, মানিব্যাগসহ বিভিন্ন ব্যক্তিগত জিনিস চুরি হয়ে যাচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে চোর শুধু টাকা নিয়ে মানিব্যাগ ফেলে রেখে যাচ্ছে, আবার কখনো সম্পূর্ণ মানিব্যাগই নিখোঁজ হচ্ছে।
শিক্ষার্থীদের অনেকেই মনে করেন, এসব চুরির পেছনে বহিরাগতদের পাশাপাশি শিক্ষার্থীরাই জড়িত থাকতে পারেন। কেউ কেউ ধারণা করছেন, নেশাগ্রস্ত কিছু শিক্ষার্থী মাদক কেনার অর্থ জোগাড় করতেই এসব চুরির আশ্রয় নিচ্ছে। কিছুদিন আগেই এক হলের ডাস্টবিনে পাওয়া গেছে মাদকসেবনের সরঞ্জাম, যা নিটারের মতো একটি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, নিটারের মূল ফটক ছাড়াও অভ্যন্তরে এমন কিছু প্রবেশপথ রয়েছে, যেগুলো দিয়ে সহজেই বহিরাগতরা প্রবেশ করতে পারে। তারা এসব প্রবেশপথ স্থায়ীভাবে বন্ধের দাবি জানিয়েছেন।
চুরি ঠেকাতে বর্তমানে প্রশাসনের পক্ষ থেকে রাতে একাডেমিক ভবন এলাকায় নিরাপত্তাকর্মীদের টহল জোরদার করা হয়েছে। তবে শিক্ষার্থীদের দাবি, ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে আরও বেশি সংখ্যক সিসি ক্যামেরা স্থাপন, নিয়মিত নজরদারি এবং অন্ধকার জায়গাগুলোতে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করা হোক।
নিরাপত্তাহীনতার এই পরিস্থিতি দূর না হলে নিটারের একাডেমিক পরিবেশ ও শিক্ষার্থীদের মনোভাব মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে—এমনটাই বলছেন সংশ্লিষ্টরা।#
Leave a Reply