এইবেলা, বড়লেখা::
বড়লেখা উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী বড়াইল গ্রামের চিহ্নিত মানব পাচারকারির বাড়িতে বৃহস্পতিবার রাতে বিজিবি অভিযান চালিয়েছে। মানবপাচারকারি হোসেন আলীর মাধ্যমে ভারত থেকে অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারি দুই ব্যক্তিকে আটক করেছে বিজিবি।
এসময় মানবপাচারকারী হোসেন আলী পালিয়ে যায়। বিজিবি আটককৃতদের তল্লাশি চালিয়ে ভারতীয় সীমসহ দুইটি মোবাইল ফোনসেট ও ৫০০ রুপির ১৮টি নোটে ৯ হাজার ভারতীয় রুপি উদ্ধার এবং মানবপাচারের কাজে ব্যবহৃত দালাল হোসেন আলীর রেজিষ্ট্রেশন বিহীন গ্লামার মোটরসাইকেল জব্দ করেছে।
এব্যাপারে বৃহস্পতিবার রাতেই বিজিবি লাতু বিওপির নায়েক মো. আলমগীর হোসেন পলাতক দালাল হোসেন আলীসহ তিন জনের বিরুদ্ধে অবৈধ সীমান্ত অতিক্রম ও অভিবাসি আইনে থানায় মামলা করেছেন।
আটককৃতরা হচ্ছে- কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদি উপজেলার চরিয়াকনা গ্রামের শংকর সূত্রধরের ছেলে টিটু সূত্রধর ও হরিধন সূত্রধরের ছেলে পিন্টু সূত্রধর। মানব পাচারকারি হোসেন আলী চুক্তির মাধ্যমে তাদেরকে ভারতে পাঠিয়েছিল। তার মাধ্যমেই পুনরায় সীমান্ত অতিক্রম করে নিজ বাড়িতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে তারা হোসেন আলীর বাড়িতে অবস্থান করছিল।
হোসেন আলী সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দা হওয়ায় দেশের বিভিন্ন এলাকার লোকজনকে বিরাট অঙ্কের টাকার বিনিময়ে নিজের বাড়িতে রেখে ভারতীয় দালালদের মাধ্যমে সুবিধাজনক সময়ে সীমান্তের জিরো লাইন অতিক্রম করে অবৈধভাবে ভারতে ও বাংলাদেশে পারাপারের কাজ করে আসছে। অভিযোগ রয়েছে, শুধু মানবপাচার নয়, সে সীমান্ত চোরাচালানেরও মুলহোতা। হোসেন আলী উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের বড়াইল গ্রামের বেল্লাল হোসেনের ছেলে।
সীমান্তবর্তী একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ভারত-বাংলাদেশে মানব পাচারে বড়লেখা সীমান্তে একাধিক দালাল সক্রিয় রয়েছে। এদের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন এলাকার আওয়ামী লীগের অনেক শীর্ষ নেতা ইতমধ্যে ভারতে পালিয়েছে। জনশ্রুতি রয়েছে, সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসেনসহ অনেকে এই সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাড়ি জমান।
বিজিবি-৫২ ব্যাটালিয়নের আওতাধীন লাতু বিওপি সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বড়াইল সীমান্ত দিয়ে দুই ব্যক্তি ভারত থেকে অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। তারা চিহ্নিত মানবপাচারকারি হোসেন আলীর বাড়িত ঢুকে পড়লে বিজিবি লাতু বিওপির বিশেষ টহল কমান্ডার নায়েক মো. আলমগীর হোসেনের নেতৃত্বে বিজিবির টহল দল হোসেন আলীর বাড়িতে অভিযান চালায়। এসময় হোসেন আলী পালিয়ে গেলেও তার মাধ্যমে ভারতে যাওয়া এবং পুনরায় বাংলাদেশে ফেরা দুই ব্যক্তিকে বিজিবি আটক করে। এসময় তাদের কাছ দুইটি ভারতীয় সীম ভর্তি মোবাইল ফোন ও ৯ হাজার ভারতীয় রুপি উদ্ধার করে বিজিবি। এছাড়া পলাতক হোসেন আলীর মানবপাচার কাজে ব্যবহৃত রেজিষ্ট্রেশন বিহীন একটি মোটরসাইকেলও জব্দ করে বিজিবি।
বিজিবি-৫২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্ণেল মোহাম্মদ আরিফুল হক চৌধুরী জানান, বড়াইল গ্রামের হোসেন আলীর বিরুদ্ধে ভারতে মানবপাচারের অভিযোগ রয়েছে। ভারতের দালাল চক্রের সাথে সিন্ডিকেট করে সে মানব পাচার করছে। বৃহস্পতিবার রাতে তার মাধ্যমে অবৈধভাবে ভারতে যাওয়া দুই ব্যক্তি তার মাধ্যমেই একই সীমান্ত দিয়ে পূণরায় অবৈধভাবে বাংলাদেশে ফিরে তার বাড়িতে অবস্থান নেয়। এসময় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে বিজিবি দুইটি ভারতীয় সীমসহ মোবাইল ফোন ও ভারতীয় রুপিসহ তাদের আটক করেছে। এছাড়া মানবপাচার কাজে হোসেন আলীর ব্যবহৃত রেজিষ্ট্রেশন বিহীন একটি মোটরসাইকেলও জব্দ করা হয়। এব্যাপারে বিজিবি লাতু বিওপির নায়েক মো. আলমগীর হোসেন থানায় মামলা করেছেন।
বড়লেখা থানার ওসি (তদন্ত) হাবিবুর রহমান জানান, বিজিবির অভিবাসী আইনের মামলায় গ্রেফতার দুই আসামীকে শুক্রবার বিকেলে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। পলাতক আসামি হোসেন আলীকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
Leave a Reply