বড়লেখা প্রতিনিধি:
হাকালুকি হাওর সুরক্ষা আদেশ বাস্তবায়নে পানি সম্পদ পরিকল্পনা সংস্থার কারিগরি কমিটি কর্তৃক প্রণীত ১৯টি বিধি-নিষেধ কার্যকরে পূর্ণ সম্মতি প্রকাশ করেছেন অংশীজনরা।
টাঙ্গুয়ার ও হাকালুকি হাওর সুরক্ষা আদেশ বাস্তবায়নে কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন বিষয়ক অংশীজন কর্মশালা সোমবার (১ ডিসেম্বর) দুপুরে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। হাওর ও জলাভুমি উন্নয়ন অধিদপ্তরের সহযোগিতায় জেলা প্রশাসন এই কর্মশালার আয়োজন করে।
মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক তৌহিদুজ্জামান পাভেলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বাংলাদেশ হাওর ও জলাভুমি উন্নয়ন অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) ড. মোহাম্মদ মাহে আলম (যুগ্ম সচিব)। হাওর ও জলাভুমি উন্নয়ন অধিদপ্তরের পরিচালক ফয়জুল ইসলামের সঞ্চালনায় মুল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পরিচালক (পরিকল্পনা, আইসিটি) রোকনুল হাসান। কর্মশালায় আরো বক্তব্য দেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাজস্ব মোছা. শাহিনা আক্তার, কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মঈন উদ্দিন, জুড়ী সহকারি কমিশনার (ভূমি) সাবরিনা আক্তার, জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আশরাফুল আলম খান, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আরিফ হোসেন, মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবের আহ্বায়ক বকসী ইকবাল, পরিবেশ সচেতন ব্যক্তিত্ব বড়লেখা নারীশিক্ষা একাডেমি ডিগ্রি কলেজের সহকারি অধ্যাপক মোশারফ হোসেন সবুজ, পরিবেশকর্মী আসম সালেহ সোহেল, মৌলভীবাজার সদর উপজেলা জনস্বাস্থ্য সহকারি প্রকৌশলী মো. মহসিন, বড়লেখা উপজেলা জনস্বাস্থ্য সহকারি প্রকৌশলী মঈন উদ্দিন, কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা এসএম রাশেদুজ্জামান বিন হাফিজ, ভুকশিমইল ইউপি চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান মনির, হাওর রক্ষা আন্দোলনের সদস্য সচিব এম খছরু চৌধুরী, বড়লেখা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রব প্রমুখ।
কর্মশালায় অংশীজনরা বলেন, হাকালুকি হাওর এশিয়ার অন্যতম ও বাংলাদেশের প্রধান গুরুত্বপূর্ণ জলাভূমি। এটি শুধু জীববৈচিত্র সংরক্ষণেই নয়, প্রাকৃতিক মাছের উৎপাদন, অতিথি ও দেশিয় পাখির নিরাপদ আশ্রস্থল এবং স্থানীয় মানুষের জীবন-জীবিকার ওপরও গভীর প্রভাব ফেলে। পাশাপাশি, দেশের পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের অভিঘাত কমাতে এই হাওর একটি কার্যকর প্রাকৃতিক বাফার হিসেবে কাজ করে।
বক্তারা বলেন, হাওর সুরক্ষা আদেশ বাস্তবায়ন প্রাণি, উদ্ভিদ, মাছ ও জলবায়ুর জন্য এখন সময়ের দাবি। কারণ, অবৈধভাবে মাছ আহরণ, পাখি নিধন, জলাশয় ভরাট, দখল, দূষণ এবং প্রাকৃতিক সম্পদের নির্বিচার ব্যবহারের কারণে হাওরের স্বাভাবিক প্রতিবেশ মারাত্মক ঝুঁকির দিকে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে সুরক্ষা আদেশ কঠোরভাবে বাস্তবায়নের মাধ্যমে হাওরের জীববৈচিত্র রক্ষা, প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখা এবং টেকসই ব্যবস্থাপনার কোনো বিকল্প নেই।
হাকালুকি হাওরের প্রধান পানিপ্রবাহ জুড়ী নদী ও কন্ঠিনালা নদীর মাধ্যমে হাওরে যুক্ত হয়। তাই হাকালুকি হাওরের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে এসব নদীর স্বাভাবিক ও বাধাহীন পানিপ্রবাহ বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি। পানির প্রবাহ সঠিকভাবে অব্যাহত থাকলে হাওরের স্বাভাবিক পরিবেশ ও জীববৈচিত্র অক্ষুন্ন থাকবে। এছাড়া হাওরের জলধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি ও অকাল বন্যা থেকে বাঁচতে হাকালুকি হাওরসহ সংশ্লিষ্ট জুড়ী নদী ও কন্ঠিনালা নদীর খনন ও সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নদী ও হাওরের জলাশয়ের বর্জ্য ও পলিমাটি অপসারণের মাধ্যমে পানির প্রবাহ নির্বিঘ্ন করা গেলে হাওরের জলধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে এবং এর প্রাকৃতিক প্রতিবেশ আরো সুসংহত হবে।
বক্তারা বলেন, দেশের বৃহত্তম মিঠাপানির জলাধারগুলোর অন্যতম হাকালুকি হাওর জীববৈচিত্র, মৎস্যসম্পদ, পরিবেশ ও স্থানীয় জনসাধারণের জীবিকার জন্য অপরিসীম গুরুত্ব বহন করে। এই হাওরকে টেকসইভাবে রক্ষা করতে হলে আইনি সুরক্ষা, সঠিক ব্যবস্থাপনা এবং সব পক্ষের সমন্বিত প্রচেষ্টা অপরিহার্য। হাকালুকি হাওরকে পরিবেশগত হুমকি থেকে রক্ষা করলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি ইকোসিস্টেম নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
caller_get_posts is deprecated. Use ignore_sticky_posts instead. in /home/eibela12/public_html/wp-includes/functions.php on line 6121caller_get_posts is deprecated. Use ignore_sticky_posts instead. in /home/eibela12/public_html/wp-includes/functions.php on line 6121
Leave a Reply