বাংলাদেশের উন্নতি ও অগ্রগতির প্রধান সোপান রেমিট্যান্স। প্রবাসীদের কষ্টার্জিত রেমিট্যান্সে গড়ে ওঠা স্তম্ভে মজবুত হয়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতির ভিত। দেশের বর্তমান জিডিপিতে প্রায় ১২ শতাংশ অবদান রেখে চলা রেমিট্যান্স হয়ে উঠেছে দেশের উন্নয়ন ও মুদ্রার রিজার্ভ স্ফীতির উল্লেখযোগ্য অংশীদার। দেশব্যাপী মহামারি আকার ধারণ করেছে করোনাভাইরাস। এর ফলে লণ্ডভণ্ড দেশের অর্থনীতি। মোটামুটি রেমিট্যান্স ছাড়া অর্থনীতির সব সূচকেই ধস নেমেছে। বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথমার্ধে দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে ৩৭ দশমিক ৫৯ শতাংশ বা ৩ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলার। রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের দেশপ্রেম বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভে এমন গতি এসেছে। এ বছর দেশে মার্চ মাসে আসা রেমিট্যান্স গেল বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫০ শতাংশ বেড়েছে। এ সময়ে প্রবাসীরা দেশে পাঠিয়েছেন ১৯২ কোটি ডলার। যা ২০২০ সালের মার্চ মাসে ছিল ১২৮ কোটি ডলার। এই নিয়ে চলতি অর্থবছরের ৯ মাসে রেমিটেন্স এসেছে ১৮৬০ কোটি ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৫ শতাংশ বেশি।
এ বছর আসছে ৬ লাখ কোটি টাকার বাজেট। ভয়াবহ এই চ্যালেঞ্জের মধ্যেই মাননীয় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল আগামী ৩ জুন জাতীয় সংসদে ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট পেশ করবেন। অন্যান্য বছরের চেয়ে এবারের বাজেটে সারাবিশ্বে কর্মরত দেড় কোটি রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের প্রত্যাশা বেশি।
প্রথমত, এবারের বাজেটে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের নিয়ন্ত্রণের ওপর বিশেষ ফোকাস দিতে হবে। দ্বিতীয়ত, সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বাড়তি নজরদারি করতে হবে। তৃতীয়ত, এ খাতে প্রণোদনা ২% থেকে বৃদ্ধি করে ৫% এ আনতে হবে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে এ খাতে প্রণোদনা ছিল তিন হাজার কোটি টাকা। এ প্রণোদনার কারণে রেমিট্যান্স খাতে অভূতপূর্ব সাড়া পাওয়া গেছে। চতুর্থত, প্রবাসীদের রিজার্ভ বন্ডে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করতে হবে এবং ৩রা ডিসেম্বর ২০২০ এর বাংলাদেশ ব্যাংক এর সার্কুলার পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হবে। তবে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে প্রয়োজন মনে করলে ভবিষ্যতে খরিদ করা বন্ডের সুদের হার কমিয়ে দেয়া যেতে পারে। অর্থাৎ বন্ড সীমিত না করার দিকে নজরদারি রাখতে হবে। পঞ্চমত, কোভিড-১৯ মোকাবেলায় বাংলাদেশ সরকার ঘোষিত আর্থিক প্রণোদনা এবং বাংলাদেশ ব্যাংক এর নিয়ন্ত্রণাধীন সিডিউল ব্যাংকগুলোর প্রতিটি শাখাকে “বাংলাদেশ ব্যাংক এর প্রণোদনার সার্কুলার” পালন করার জন্য কঠোর নির্দেশ দিতে হবে। কারণ বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংক এর সার্কুলার কিছু শাখা ব্যাংক পালন করছে না।
এছাড়া, সারাবিশে^র বিভিন্ন দেশে কর্মরত কৃতি রেমিট্যান্স যোদ্বাদেরকে প্রতি বছর সম্মাননা স্মারক প্রদান করতে হবে। যা বাংলাদেশ ব্যাংক ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় (সি আই পি ) এর মাধ্যমে প্রদান করতে হবে। তাছাড়া, রিজার্ভ এর যোগানদাতা দেড় কোটি প্রবাসীদের মধ্য থেকে অন্তত একজন কৃতি প্রবাসীকে “জাতীয় পুরষ্কার” প্রদানের সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে হবে। যা সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় দ্বারা নির্ধারিত হবে। এতে করে সকল রেমিট্যান্স যোদ্বারা নিজেদেরকে সম্মানীত মনে করবে। পাশাপাশি সরকার যদি প্রবাসীদের নিকট হতে ৩৫ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স টার্গেট করে বাজেটে পেশ করে তাহলে প্রবাসীরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে এ টার্গেট পূরণ করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে। প্রবাসীদের পক্ষ হতে এই প্রস্তাবসমূহ প্রেরণের একমাত্র উদ্দেশ্যই হলো কোনো প্রতিবেশী দেশ যেনো মাথাপিছু আয়ে (ডলার) বাংলাদেশকে পরাজিত করতে না পারে।
এছাড়া বর্তমানে অভিবাসী শ্রমিকদের বেতন খূবই কম। এমতাবস্থায় অভিবাসন খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধিকরণে শ্রমিকের স্বার্থ ও অধিকারে সরকার, নিয়োগকর্তা, হাইকমিশন, এনজিও ও অভিবাসন শ্রমিকের মধ্যে সমন্বয় ঘটাতে সবাই একযোগে কাজ করবে আমাদের সেই প্রত্যাশা থাকবে। পাশাপাশি বাংলাদেশি শ্রমিকদের অভিবাসন ব্যয় সবচেয়ে বেশি এবং অনেক ক্ষেত্রে তারা বিভিন্নভাবে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। যেমন, অল্প পারিশ্রমিক, কারণ ছাড়া নোটিশে চাকরি থেকে প্রত্যাহার, সময়মতো বেতন না দেয়া, পরিমিত খাবার না দেয়া, স্বল্পস্থানে অনেক শ্রমিকের আবাস ও জোরপূর্বক চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়া।
সর্বশেষ সরকারের কাছে আমার শেষ প্রত্যাশা থাকবে, আসন্ন বাজেটে আমাদের সকল অব্যবস্থাপনা দূর করার বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে। রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের দুর্দশা লাঘব ও স্বার্থ সংরক্ষণকে অগ্রাধিকার দিয়ে আসন্ন বাজেটকে সাজানো হবে সরকারের প্রতি আমাদের এই প্রত্যাশাই থাকবে। #
লেখক: সভাপতি, প্রবাসী সাংবাদিক সমিতি (প্রসাস), সংযুক্ত আরব আমিরাত।
Leave a Reply