পরিবর্তনের বাঁকগুলো নিখুঁতভাবে এঁকেছেন কালজয়ী কথাশিল্পী ম্যাক্সিম গোর্কি পরিবর্তনের বাঁকগুলো নিখুঁতভাবে এঁকেছেন কালজয়ী কথাশিল্পী ম্যাক্সিম গোর্কি – এইবেলা
  1. admin@eibela.net : admin :
বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৫১ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
নিটার মিনিবার নাইট ফুটবল টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন এফসি ডার্ক নাইট একজন মেহেদী হাসান রিফাতের গল্প : স্বপ্ন থেকে সাফল্যের পথে আত্রাইয়ে আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভা অনুষ্ঠিত কুলাউড়ায় অবৈধভাবে মাটি কাটার দায়ে ১ লাখ টাকা জরিমানা : ১৪ টি যানবাহন জব্দ কমলগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় এবার খাসিয়াদের বর্ষবিদায় উৎসব “সেং কুটস্নেম” কুলাউড়া উপজেলা যুবলীগের সহ সভাপতি আটক কুলাউড়ার হাজিপুর ইউনিয়নে জিপিএ-৫ ও এ গ্রেড পাওয়া শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা রাজারহাটে ওয়ার্ল্ড ভিশনের আয়োজনে বাল্যবিবাহ বন্ধে সংলাপ কুড়িগ্রামে ডক্টরস এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’র মতবিনিময় কুলাউড়া জয়চন্ডীতে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিলেন মিলন বৈদ্য

পরিবর্তনের বাঁকগুলো নিখুঁতভাবে এঁকেছেন কালজয়ী কথাশিল্পী ম্যাক্সিম গোর্কি

  • শুক্রবার, ১৮ জুন, ২০২১

।।।। সৈয়দ আমিরুজ্জামান ।।।।

বিশ্বসাহিত্যের এক কালজয়ী কথাশিল্পী ম্যাক্সিম গোর্কির ৮৫তম মৃত্যু বার্ষিকী আজ। তাঁর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা।
কিংবদন্তি এই সাহিত্যিক পরিবর্তনের বাঁকগুলো তুলে ধরেছেন নিখুঁতভাবে।

মাত্র ১১ বছর বয়সে অনাথ হয়ে যান অ্যালেক্সি ম্যাক্সিসোভিচ পেশকভ।তিনি সেই বিখ্যাত রুশ লেখক, বিশ্বের কাছে ‍যিনি পরিচিত ‘ম্যাক্সিম গোর্কি’ নামে। এ নামটি ছিল তাঁর ছদ্মনাম। তবে ছদ্মনামেই তিনি ছিলেন বিশ্ববিখ্যাত। ‘গোর্কি’ শব্দের অর্থ হলো ‘তিক্ত’। এই নামকরণের পেছনে কারণ অবশ্য আছে- জীবনটাই ছিল তার কাছে তেতো, বিস্বাদময়। ১৮৬৮ সালের ২৮ মার্চ রাশিয়ার নিঝনি নভগোরোদে জন্ম নেওয়া এই মানুষটি ছিলেন বাবা-মায়ের প্রথম সন্তান। প্রথমে চিরতরে হারান বাবা ম্যাক্সিম পেশকভকে। বাবার মৃত্যুর পর গোর্কির আশ্রয় হয় মামার বাড়িতে। দাদির কাছেই তিনি বেড়ে ওঠেন গল্প শুনতে শুনতে। ভর্তি হন স্থানীয় স্কুলে। মা ভারভারা পেশকভা দ্বিতীয় বিয়ে করেন তাঁর চেয়ে ১০ বছরের ছোট এক অকর্মন্য ব্যক্তিকে। পরের বিয়েটা মোটেও সুখের ছিল না। এর কিছুদিন পরেই ক্ষয়রোগে মারা গেলেন মা।

মায়ের হঠাৎ মৃত্যুর পর গোর্কির ভরণপোষণের দায়িত্ব এসে পড়ে দাদার ওপর। দাদা আর গোর্কির দায়িত্বভার নিতে চাইলেন না। মায়ের শেষকৃত্যের কয়েকদিন পরেই গোর্কিকে ডেকে স্পষ্ট বলে দেন, ‘তোমাকে এভাবে গলায় মেডেলের মতো ঝুলিয়ে রাখব তা তো চলতে পারে না। এখানে আর তোমার জায়গা হবে না। এবার তোমার দুনিয়ার পথে-প্রান্তরে বেরুনোর সময় হয়েছে।’

দাদার বাড়ি থেকে বিতাড়িত হওয়ার পর সেই শিশু বয়সেই গোর্কিকে চাকরি নিতে হয় একটি জুতার দোকানে। শহরের সদর রাস্তার ওপর এক শৌখিন জুতার দোকানের কর্মচারী হন তিনি। সারা দিন হাড়ভাঙা পরিশ্রম। পরিশ্রমকে তিনি মনে করতেন পুরুষের অলংকার স্বরূপ। একদিন দোকানের চাকরি ছেড়ে দিলেন তিনি। সে সময় জারের আমলে যাদের নির্বাসন দেওয়া হতো, তাদের নিয়ে যাওয়া হতো জাহাজে করে। সেই জাহাজের কর্মচারীদের বাসন ধোয়ার কাজ নেন গোর্কি। ভোর ৬টা থেকে মাঝরাত অবধি কাজ। তারই ফাঁকে ফাঁকে দুই চোখ ভরে দেখতেন নদীর অপরূপ দৃশ্য। দুই পারের গ্রামের ছবি। হিসাবপত্র মিটিয়ে হাতে আট রুবল নিয়ে ফিরে এলেন নিজের শহর নিঝনি নভগোরোদে। অবশেষে প্রিয়তম দাদির মৃত্যু গোর্কিকে করে তোলে চরম শোকবিহ্বল।

মাত্র ১২ বছর বয়সে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান নিরুদ্দেশে। জীবনের এক পর্যায়ে হতাশ হয়ে ব্যর্থ চেষ্টা করেন আত্মহত্যার। ১৯ বছর বয়সে নদীর তীরে গিয়ে গুলি করেন নিজের বুকে। ঘটনাচক্রে বেঁচে যান তিনি। ঘটনাটি একটু বিস্তারিত জানা যাক, বিশ্ব যখন অস্থির সময় পার করছিল, ঠিক তখন রাশিয়ায় চলছিল জারের রাজত্বকাল। দেশজুড়ে চলছিল শাসনের নামে শোষণ অত্যাচার। বিপ্লবী দলের সঙ্গে যুক্ত হয়েই গোর্কি পরিচিত হলেন কার্ল মার্কসের রচনাবলির সঙ্গে। অর্থনীতি, ইতিহাস, সমাজনীতি, দর্শন, আরো নানা বিষয়ের বই পড়তে আরম্ভ করলেন তিনি। দারিদ্র্য ছিল তাঁর নিত্যসঙ্গী। কিছুদিন পর একটি রুটির দোকানে কাজ পেলেন। সন্ধ্যা থেকে পরদিন দুপুর অবধি একটানা কাজ করতে হতো তাকে। তারই ফাঁকে যেটুকু সময় পেতেন, বই পড়তেন।

বাস্তব জীবনের পরতে পরতে তিনি কষ্টকে, পরিশ্রমকে বন্ধুর মতোই দেখেছেন নিত্যসঙ্গী হিসেবেই। তাঁর এই সময়কার জীবনে অভিজ্ঞতার কাহিনী অবলম্বনে পরবর্তীকালে লিখেছিলেন বিখ্যাত গল্প ‘ছাবিবশজন লোক আর একটি রুটি’। সেই রুটির কারখানায় কাজ করার সময় পুলিশের দৃষ্টি পড়েছিল তাঁর ওপর। সুকৌশলে নিজেকে বাঁচিয়ে চলতেন গোর্কি। হাড়ভাঙা পরিশ্রম করতে করতে মনের সব শক্তি হারিয়ে ফেলেছিলেন তিনি। তার ওপর যখন সন্দেহ-অবিশ্বাস; নিজের ওপরেই সব বিশ্বাসটুকু হারিয়ে ফেলতেন। মনে হতো এই জীবন মূল্যহীন, বেঁচে থাকার কোনো অর্থ নেই। এই মনে করেই তিনি বাজার থেকে কিনলেন একটি পিস্তল। ১৮৮৭ সালের ১৪ ডিসেম্বর নদীর তীরে গিয়ে নিজের বুকে গুলি করলেন। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। চিকিৎসকরা জীবনের আশা ত্যাগ করলেও অদম্য প্রাণশক্তির জোরে বেঁচে যান গোর্কি।

এদিকে এক বৃদ্ধ বিপ্লবী মাঝেমধ্যে আসতেন সেই রুটির কারখানায়। সুস্থ হয়ে উঠতেই গোর্কিকে তিনি নিয়ে গেলেন নিজের গ্রামের বাড়িতে। ঘুরতে ঘুরতে এলেন নিজের ক্যাসপিয়ান সাগরের তীরে এক ছোট্ট শহরে। কোথাও বেশিদিন থাকতে মন চায় না। রেলে পাহারাদারির কাজ নিয়ে এলেন নিজের পুরোনো শহর নিঝনি নভগোরোদে। এই সময়ে কিছু কবিতা রচনা করেছিলেন গোর্কি। নাম দেন ‘পুরোনো ওকের গান’। দুজন বিপ্লবীর সঙ্গে পরিচয় ছিল তাঁর। সে জন্য পুলিশ তাঁকে বন্দি করল। কিন্তু যথাযথ প্রমাণের অভাবে কিছুদিন পর ছেড়ে দিল তাঁকে। প্রায় দুই বছর সেখানে রয়ে গেলেন তিনি।

ফিরে যাই, সেই শৈশবে। মাত্র ১২ বছর বয়সে পাঁচ বছর তিনি পায়ে হেঁটে ভ্রমণ করেন রাশিয়ার বিভিন্ন জায়গা। বহু চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে বড় হয়েছেন তিনি। এ সময় বিভিন্ন চাকরির অভিজ্ঞতা ও নানা ঘটনার স্মৃতি তাঁর পরবর্তী সময়ের লেখালেখিতে প্রভাব ফেলে। জীবনে বহু তিক্ত অভিজ্ঞতার অধিকারী গোর্কি চাকরি করতে গিয়ে কখনো হয়েছেন প্রহৃত, লাঞ্ছিত। অনেক সময় খাবারও জুটত না তার। এ তিক্ত অভিজ্ঞতার আলোকেই এমন ছদ্মনাম রাখা।

আগেই বলেছি, ম্যাক্সিম গোর্কির ছিল বই পড়ার প্রচুর নেশা। রাজনীতি, অর্থনীতি, ইতিহাস, সমাজনীতি, দর্শন প্রভৃতি বিষয়ে তার আগ্রহ ছিল বেশ। একদিন হাতে এল রুশ কবি পুশকিনের একটি কবিতার বই। একনিষ্ঠভাবে পড়লেন সেটি। পড়তে পড়তে বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে গেলেন তিনি। রাজনৈতিক কারণে তাঁকে কারাবরণ করতে হয় একাধিকবার। কাটাতে হয় নির্বাসিত জীবনও। সেই গোর্কির সঙ্গে ১৯০২ সালে ভ্লাদিমির ইলিচ উলিয়ানভ, যার ছদ্মনাম লেনিন, তার সঙ্গে গড়ে ওঠে ব্যক্তিগত সখ্য।

আক্ষরিক অর্থে গোর্কি ছিলেন তাঁর নামের মতোই তিক্ত। তাঁর লেখায় সব সময় ফুটে উঠেছে তিক্ত সত্য। রাশিয়ার জীবনযাত্রার বিরুদ্ধে সঞ্চিত রাগের প্রকাশ দেখা যায় তাঁর লেখায়। গোর্কির প্রথম বই ‘এসেস অ্যান্ড স্টোরিস’ প্রকাশিত হয় ১৮৯৮ সালে। প্রথম বইটি সাড়া জাগিয়েছে সারা দেশে। লেখক হিসেবে ম্যাক্সিম গোর্কির জয়যাত্রা শুরু হয়। রাশিয়ার সমাজের নিচু স্তরের মানুষগুলোর জীবনের প্রতিচ্ছবি এঁকেছেন তিনি। রাশিয়ার সামাজিক, রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের বাঁকগুলো তিনি এঁকেছেন নিখুঁতভাবে।
শ্রমিকদের সঙ্গে গোর্কির ছিল ঘনিষ্ঠতম সম্পর্ক। ১৯০২ সাল থেকে গোর্কি ছিলেন লেনিনের ঘনিষ্ঠতমদের একজন। ১৯০০ থেকে ১৯০৫ সাল পর্যন্ত গোর্কির লেখায় আশাবাদের ব্যঞ্জনা উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে। ১৯০৬ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফরে যান তিনি। সেখানে তিনি রচনা করেন বিখ্যাত কালজয়ী উপন্যাস ‘মা’। ১৯০৬ থেকে ১৯১৩ সাল পর্যন্ত গোর্কি ছিলেন ক্যাপ্রিতে। ১৯১৩ সালে সাধারণ ক্ষমার আওতায় তিনি আবার ফিরে আসেন রাশিয়ায়।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় গোর্কির ঘরটি হয়ে উঠেছিল বলশেভিকদের অফিসঘর। রুশ বিপ্লবের পর গোর্কি ছিলেন ইতালিতে। ১৯৩২ সালে স্টালিনের আহ্বানে গোর্কি রাশিয়ায় ফিরে আসেন। তাকে ভূষিত করা হয় অর্ডার অব লেনিন উপাধিতে।

‘মা’ উপন্যাসের জন্য গোর্কি জগদ্বিখ্যাত। যদিও মা ছেলের সম্পর্কই উপন্যাসটির মূল বিষয়। একটি সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের জন্য তৈরি হতে থাকা রাশিয়ার রাজনীতির পরিস্থিতি বস্তুনিষ্ঠভাবে উপস্থাপন করার কারণে এই ঔপন্যাসিক বিশ্বসাহিত্যে বিশেষ স্থান ও প্রশংসার পাওয়ার দাবি রাখেন, যা তিনি ন্যায্যভাবেই পেয়েছেন। ‘মা’ উপন্যাসটির সামাজিক মূল্য এককথায় তুলনাহীন। একটি উপন্যাস একটি জাতির বিবেককে বদলে দিয়েছে ব্যাপকভাবে। পেলাগেয়া নিলভনা নামের একজন অতি সাধারণ ‘মেয়ে মানুষ’ কী করে সময়ের প্রয়োজনে আস্তে আস্তে রূপান্তরিত হন একজন রাজনীতিসচেতন ‘ব্যক্তি’তে; বুঝতে শেখেন সারা জীবন কী করুণ কাটিয়েছেন, হয়েছেন শ্রেণিগত নির্যাতন ও লিঙ্গগত অবস্থানের অসহায় শিকার- সেসবের চমৎকার বর্ণনা করেছেন গোর্কি, দুর্দান্ত ছিল তাঁর ভাষারীতি।

সোভিয়েত ইউনিয়নে ‘সোশ্যাল রিয়েলিজম’ নামে যে সাহিত্যিক ধারার সূচনা হয়েছিল সেটার প্রতিষ্ঠাতা গোর্কি। তুচ্ছের মধ্যেই নাকি বৃহৎ কিছু খুঁজে নিতে হয়। আর সে কারণে বোধহয় কোনো বিষয়-বস্তুকেই কখনোই তিনি অবহেলা বা তুচ্ছের চোখে দেখেননি। উনিশ শতকে বিশ্বসাহিত্যে যে কয়েকজন হাতেগোনা সাহিত্যিক বিশ্বসাহিত্যে ঝড় তুলেছেন ম্যাক্সিম গোর্কি তাঁদের মধ্যে অন্যতম। যদিও তিনি উপন্যাসের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী পরিচিতি পেয়েছেন, তারপরও তাঁর গল্পগ্রন্থগুলো তাঁকে সত্যিকারের গোর্কি হয়ে উঠতে অসামান্য অবদান রেখেছে।

সমকালীন বাস্তবতা, সমাজের নিচুতলার মানুষই ছিল তাঁর গল্পের উপজীব্য বিষয়। মূলত প্রথম দিকে তিনি লিখতেন প্রথাগত নিয়মে। পরবর্তী সময়ে তাঁর সঙ্গে পরিচয় হয় তরুণ লেখক ভ্লাদিমির করোলেঙ্কার। করোলেঙ্কার কথায় চেতনা ফিরে পেলেন গোর্কি। প্রথাগত চেতনার ধারাকে বাদ দিয়ে শুরু হলো তাঁর নতুন পথের যাত্রা। সমাজের নিম্ন শ্রেণির মানুষেরা- চোর, লম্পট, ভবঘুরে, মাতাল, বেশ্যা, চাষি, মজুর, জেলে, সারিবদ্ধভাবে প্রকাশ পেতে থাকে তাঁর রচনায়। এই পর্বের কয়েকটি বিখ্যাত গল্প হলো মালভা, বুড়ো ইজরেগিল, চেলকাশ, একটি মানুষের জন্ম। গল্পগুলোতে একদিকে যেমন ফুটে উঠেছে নিচুতলার মানুষের প্রতি গভীর মমতা, অন্যদিকে অসাধারণ বর্ণনা, কল্পনা আর তাঁর সৃজনশক্তি।

এসব লেখার বেশির ভাগই ছাপা হয়েছিল ভলগা তীরের আঞ্চলিক পত্রিকায়। স্থানীয় মানুষ, কিছু লেখক, সমালোচক তাঁর লেখা পড়ে মুগ্ধ হলেন। তখনো যশখ্যাতি পাননি গোর্কি। ১৮৯৮ সালে তাঁর প্রবন্ধ ও গল্প নিয়ে একটি ছোট সংকলন প্রকাশিত হলো। এই বই প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল গোর্কির নাম। এর পেছনেও আছে একটি গল্প। আত্মহত্যার ব্যর্থ চেষ্টার পর কুলঝানি নামে এক ভদ্রলোক গোর্কিকে নিয়ে গেলেন স্থানীয় পত্রিকা অফিসে। নিজের নাম সই করার সময় ‘আলেক্সি পেশকভ’-এর পরিবর্তে লেখালেন ম্যাক্সিম গোর্কি। গল্পটি প্রকাশিত হলো ১৮৯২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। এই গল্পে বাস্তবতার চেয়ে রোমান্টিকতার প্রভাবই ছিল বেশি। ‘এমিলিয়ান পিলিইয়াই’ গল্প পড়ে জ্যেষ্ঠ সাহিত্যিক ভ্লাদিমির গালাক্কিওনচিভচ করলিয়েনক উৎসাহ দেওয়ার পর ‘চেলকাশ’ গল্প যখন কাগজে বেরুল, তখন গোর্কিকে তিনি প্রস্তাব দেন সাংবাদিকতার চাকরির। সামারার একটি বড় কাগজে চাকরি, মাস গেলে ১০০ রুবল আসবে। গোর্কিও সানন্দে রাজি হয়ে গেলেন।

১৮৯২ সালের ১২ সেপ্টেম্বর শনিবারের কথা। তিফলিস শহর থেকে প্রকাশিত দৈনিক সংবাদপত্র ‘ককেশাস’-এ ছাপা হলো একটি গল্প : মাকার চুদ্রা। লেখকের নাম এম গোর্কি। এরপর অনেক পত্রিকায় ক্রমে ক্রমে ছাপা হতে থাকে লেখা– যেমন ভোলগা সংবাদপত্র, দৈনিক সামারা, ওদেসা সংবাদ, নিঝেগরোদপত্র ইত্যাদি। ১৯১৫ সালে তিনি নিজেই লিয়েতপিস (কড়চা) পত্রিকা প্রকাশ করেন এবং ১৯২১ থেকে তাঁর সম্পাদনায় বেরুনো শুরু হয় পত্রিকাটি।

গোর্কির রচনা সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে গেয়র্গি লুকাস বলেন, ‘লেখক হিসেবে গোর্কি সর্বদাই তাঁর সমকালীন ঘটনাবলির প্রতি বিশ্বস্ত থেকেছেন এবং নিজের রচনার মধ্যে এমন ভেদরেখা টেনে দেননি যাতে কতটুকু একজন সাহিত্যিকের লেখা আর কতটুকু একজন বিপ্লবী সাংবাদিক ও প্রচারকর্মীর লেখা, তা ধরা যায়। সত্য এর বিপরীতটাই। তাঁর মহত্তম সাহিত্যকীর্তি সর্বদা সাংবাদিকতাকে আশ্রয় করে উত্থিত হয়েছে।’

১৯২১ সালে হঠাৎই যক্ষ্মায় আক্রান্ত হন ম্যাক্সিম গোর্কি। উন্নত চিকিৎসার জন্য লেনিন তাঁকে পাঠান জার্মানিতে। দুই বছর সেখানে কাটিয়ে ১৯২৪ সালের এপ্রিলের প্রথমে গেলেন তাঁর প্রিয় জায়গা ক্যাপ্রিতে, পরে সেখান থেকে সোরেন্তো ফেরেন, ১৯২৮ সালে। তখনো তিনি ভালোমতো সেরে ওঠেননি। চিকিৎসারত অবস্থায় ৬৮ বছর বয়সে ১৯৩৬ সালের ১৮ জুন রাশিয়ার মস্কোতে আকস্মিকভাবে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন কালজয়ী এই সাহিত্যিক। মৃত্যুর আগে তিনি বলেছিলেন, ‘যুদ্ধ আসছে … তোমরা তৈরি থেকো।’

 

লেখক::
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট;
বিশেষ প্রতিনিধি, সাপ্তাহিক নতুনকথা;
সম্পাদক, আরপি নিউজ;
সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, মৌলভীবাজার জেলা;
‘৯০-এর মহান গণঅভ্যুত্থানের সংগঠক

সাবেক কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, বাংলাদেশ ছাত্রমৈত্রী।
সাধারণ সম্পাদক, মাগুরছড়ার গ্যাস সম্পদ ও পরিবেশ ধ্বংসের ক্ষতিপূরণ আদায় জাতীয় কমিটি’।
E-mail : rpnewsbd@gmail.com
মুঠোফোন: ০১৭১৬৫৯৯৫৮৯

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো সংবাদ পড়ুন
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২২ - ২০২৪
Theme Customized By BreakingNews