আব্দুর রব ::
মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলাটি ‘নৌকার ঘাঁটি’ হিসেবেই পরিচিত। এটি পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন এমপির নির্বাচনী এলাকা। সদ্য সমাপ্ত দ্বিতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এখানেই আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের ভরাডুবি হয়েছে। এতে হতাশ দলের নেতাকর্মীরা।
৫টি ইউনিয়নের মধ্যে ৪টিতেই হেরেছেন নৌকার প্রার্থীরা। দু’টিতে ডুবেছে বিদ্রোহের টানাহেঁচড়ায় আর দু’টি হেরেছে বিএনপির (স্বতন্ত্র) প্রার্থীদের কাছে। উপজেলার পশ্চিমজুড়ী, জায়ফরনগর, গোয়ালবাড়ি ও পূর্বজুড়ী ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থীরাই পরাজিত হয়েছেন। শুধুমাত্র সাগরনাল ইউপিতে আওয়ামী লীগ প্রার্থী জয়ের মুখ দেখেছেন।
‘নৌকার ঘাঁটিতে’ ভরাডুবির কারণ নিয়ে নেতাকর্মী থেকে শুরু করে স্থানীয়দের মধ্যে চলছে চুল চেড়া বিশ্লেষণ। আবার আলোচনায় উঠেছে সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য প্রার্থী না দেওয়া, বিদ্রোহী দমাতে ব্যর্থতা, অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, স্থানীয় নেতাকর্মীদের নিস্ক্রিয়তা ও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর (বিদ্রোহী ও বিএনপি) পক্ষে কোনো কোনো নেতার গোপন আঁতাতের বিষয়টিও। এ ছাড়া বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্র (বিএনপি) প্রার্থীদের নৌকা বিরোধী প্রচারণাও ভরাডুবির কারণ হিসেবে দেখছেন দলটির একাধিক নেতা।
বৃহস্পতিবার সরেজমিনে জুড়ী উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে আওয়ামী লীগের দলীয় পরাজিত প্রার্থী, স্থানীয় ভোটার ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ভোটার বলেন, ‘ভাই আমরা সত্য বললেতো সমস্যা। আওয়ামী লীগের নেতাদের মাঝে আগের মতো এখন আর দলীয় আদর্শ আর ঐক্য নেই। আড়ালে আওয়ামী লীগ নেতারা দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করেছেন। আর সামনে পড়লে পক্ষে ছিলেন। এছাড়া অর্থের বিনিময়ে ত্যাগী ও যোগ্যদের প্রার্থী না দিয়ে দুর্বল প্রার্থী দিয়েনে। এরজন্যই চার ইউনিয়নে ‘নৌকা’ বাঁশ খেয়েছে।
পশ্চিম জুড়ী ইউনিয়নের ‘নৌকা’র ভরাডুবি প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সমর্থক সুজন আহমদ বলেন, ‘নৌকা জিতব কেমনে। যারা নৌকা জিতাইতা তারাই ভিতরে ভিতরে বিদ্রোহী ও বিএনপি প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেন। দিনে নৌকার পক্ষে ভাষণ দিয়ে রাতে বিদ্রোহী প্রার্থীর সাথে আঁতাত রেখেছেন।’
সুজন আহমদের মন্তব্যের সত্যতা মিলে জায়ফরনগর ইউনিয়নের এক ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতার কথায়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই নেতা বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের বিএনপির (স্বতন্ত্র) প্রার্থীর সাথে দলের বড় বড় নেতাদের ব্যবসা রয়েছে। সঙ্গত কারণে তারা ওই প্রার্থীর পক্ষ নিয়েছেন। তারা শুধু মিটিং-মিছিলে পদ বাঁচাতে আই ওয়াস করতে উপস্থিত ছিলেন।’
পশ্চিম জুড়ী ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ছিলেন শ্রীকান্ত দাস। তিনি দলের বিদ্রোহী প্রার্থী আনফর আলীর কাছে পরাজিত হন। আলাপকালে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ তো আর আওয়ামী লীগ রইছে না। আমরার মাঝে কিছু মানুষ আমারে অত্যন্ত সুকৌশলে ডুবাইছে।’
পূর্বজুড়ী ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ছিলেন আব্দুল কাদির। এই ইউনিয়নে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী ওবায়দুল ইসলাম রুহেল জয়ী হয়েছেন। দ্বিতীয় হন আরেক বিদ্রোহী প্রার্থী সালেহ উদ্দিন আহমদ। পরাজয়ের কারণ হিসেবে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী আব্দুল কাদির বলেন, ‘আওয়ামী লীগের ভেতরে নৌকা বিরোধী আছে। প্রচুর টাকার ছড়াছড়ি হয়েছে। একেক জন এক কোটি, দুই কোটি টাকা ব্যয় করেছে। ’তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে উল্টো সুরে কথা বলেন এক আওয়ামী লীগ নেতা। তার দাবী ভুল প্রার্থী মনোনয়নের কারণে এ ইউনিয়নে ‘নৌকা’ তিন নম্বর হয়েছে।
গোয়ালবাড়ি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ছিলেন শাহাব উদ্দিন লেমন। তিনি স্বতন্ত্র (বিএনপি) প্রার্থী আব্দুল কাইয়ুমের কাছে পরাজিত হয়েছেন। তিনি জানান, জুড়ী আওয়ামী লীগে ‘মোস্তাক’ ঢুকেছে। আগামী জাতীয় নির্বাচনে এর মারাত্মক প্রভাব পড়বে। ‘মোস্তাক বাহিনী’ মাস্টার প্ল্যান করে ‘নৌকা’ ডুবিয়েছে। নৌকার ভোটব্যাংক কেন্দ্রগুলোতে বিনা কারণে দীর্ঘক্ষণ ভোটবন্ধ রেখে প্রশাসনও এর অর্থ বাণিজ্যের নগ্ন প্রকাশ ঘটিয়েছে। উপজেলা আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতা গত সংসদ নির্বাচনের ধানের শীষ প্রার্থীর বাড়িতে গিয়ে বিজয়ী বিএনপি প্রার্থীকে ফুলের মালা দিয়েছেন। এরাই গোয়ালবাড়ি ইউনিয়নে ‘নৌকা’ ডুবিয়েছে।
জায়ফরনগর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ছিলেন জায়েদ আনোয়ার চৌধুরী। তিনি এখানে তৃতীয় হয়েছেন। জয় পেয়েছেন স্বতন্ত্র (বিএনপি) প্রার্থী মাসুম রেজা। দ্বিতীয় হয়েছেন হাবিবুর রহমান। আওয়ামী লীগের প্রার্থী জায়েদ আনোয়ার চৌধুরী বলেন, ‘আমি এই বিষয়ে এখন মুখ খুলতে চাচ্ছি না। মন্ত্রীর কাছে বিচার দিয়ে বিচারের অপেক্ষা করব। প্রয়োজনে সংবাদ সম্মেলন করে দলীয় নেতাদের ভুমিকার বিস্তারিত তুলে ধরবো।’
জুড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাসুক আহমদ জানান, ‘আমাদের প্রার্থী বাছাইয়ে ঘাটতি ছিল। ভালো প্রার্থী পাওয়া যায়নি। আর যারা নৌকার টিকেট পান তারা ভালোভাবে নির্বাচন পরিচালনা করতে পারেননি। নেতাকর্মীদের সাথেও সমন্বয় করতে পারেননি। ভালো প্রার্থীরাই বিদ্রোহী হয়ে বিজয়ী হন।’#
caller_get_posts
is deprecated. Use ignore_sticky_posts
instead. in /home/eibela12/public_html/wp-includes/functions.php on line 6085caller_get_posts
is deprecated. Use ignore_sticky_posts
instead. in /home/eibela12/public_html/wp-includes/functions.php on line 6085
Leave a Reply