এইবেলা, কুলাউড়া :: কুলাউড়া উপজেলার পৃথিমপাশা ইউনিয়নে অবস্থিত নারী শিক্ষাকেন্দ্র সুলতানপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের বিরোধপূর্ণ জমি রক্ষায় ২৪ এপ্রিল রোববার বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। ২৩ শনিবার বিকেলে বিদ্যালয়ের বিরোধকৃত জমিতে বেড়া দেয়ার চেষ্টা করলে শিক্ষার্থীরা ক্ষিপ্ত হয়।
রোববার দুপুরে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্লেকার্ড, ফ্রেস্টুন নিয়ে বিদ্যালয়ের জমিতে প্রতিপক্ষ কর্তৃক অবৈধভাবে বেড়া দিয়ে বিদ্যালয়ের জমি দখলের প্রতিবাদে বিক্ষোভ শুরু করেন। উত্তেজনার খবর পেয়ে কুলাউড়া থানা পুলিশ ঘটনা স্থলে উপস্থিত হয়ে উভয় পক্ষকে শান্ত করেন।
জানা যায়, ১৯৯১সালে সুলতানপুর গ্রামের শিক্ষানুরাগী মেহেরুন্নেছা খাতুন চৌধুরী এলাকার নারী শিক্ষা বিস্তারে সুলতানপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য একশত তিন শতক জমি দান করেন। পরবর্তীতে ১৯৯৪সালে বিদ্যালয়ের নামে ওই জমি রেকর্ড হয় এবং বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয় এলাকাবাসীর সহযোগিতায়। সর্বশেষ বিদ্যালয়টি ২০২০ সালে এমপিওভুক্ত হয় এবং বর্তমানে ৪৬৫ শিক্ষার্থীদের জন্য শ্রেণিকক্ষের সংকট নিরসনে একটি একাডেমিক ভবন অনুমোধন হয়।
যে স্থানে নতুন ভবনের কাজ শুরু হওয়ার জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষ প্রাথমিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে সেই স্থানেই বিদ্যালয়ের ১০৩ শতক মোট জমির মধ্যে প্রায় ১৭শতক জমিতে মৃত রজব আলীর স্ত্রী সামিনা খাতুন ও তার পরিবারের ২০-২৫ জন সদস্যসহ বসবাস করেন।
ওই ১৭ শতক জমি নিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ এবং সামিনা খাতুনের পরিবারের বিরোধ চলছে। বিষয়টি নিয়ে একাধিক সমঝোতা বৈঠক হলেও তা নিষ্পত্তি হয়নি।
বিরোধপূর্ণ এই জমি (পৃথিমপাশা মৌজার জে এল নং-৮৬, এস এ খতিয়ান-২২২, আর এস খতিয়ান-৩৪৮৪, দাগ-২৪৮৪) নিয়ে দেওয়ানি মামলা চলমান থাকলেও বর্তমানে ২৩ এপ্রিল দুপুরে সামিনা খাতুনের পরিবার নিজেদের দখলে থাকা জমির চারপাশে বেড়া নির্মাণ কাজ শুরু করলে সুলতানপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বাঁধা দেয়।
প্রধান শিক্ষক নাজমা চৌধুরী জানান, প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘদিন থেকে এলাকার মানুষের সহযোগিতায় চলছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি এমপিও ভুক্ত হয়েছে এবং একটি নতুন ভবন এর অনুমোদন হয়েছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একাডেমিক ভবনের জন্য নির্ধারিত এই স্থানটি অবৈধভাবে একটি পক্ষ দখল করে রেখেছে। বিদ্যালয়ের এই ভবনটি নির্মাণ হলে শ্রেণি কক্ষের সংকট কমবে। দাতা ১০৩ শতক জমি স্কুলকে দান করেছেন যা আমাদের রেকর্ড রয়েছে।
বিরোধপূর্ণ জমিতে বসবাসকারী পক্ষের সামিনা খাতুন ও তাামিম হোসেন জাানান, আমরা দাতা কর্তৃক মৌখিক ক্রয় বলে ৩৬শতক জমিতে আমাদের পরিবারের ২০-২৫ জন লোক বসবাস করছেন। স্কুল কর্তৃপক্ষ আমাদের বিদ্যুৎ সংযোগ ও বেড়া নির্মাণসহ অন্যান্য কাজ করতে বাঁধা প্রধান করে আসছে। এ নিয়ে আমরা আদালতে সত্ত্ব মামলা দায়ের করেছি (মামলা নং -১৯৩/২১)। আমরা এখান থেকে উচ্ছেদ হলে যাব কোথায়? আমাদের আর থাকার জমি নাই।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ইলিয়াস আলী চৌধুরী (রেকু) জানান, বিদ্যালয়িিট এখন সরকারের। আমরা অনেক চেষ্টা তদবির করে একটি ভবন পেয়েছি। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে ভবনের কাজ শুরু হলেও স্কুলের জমিতে অবৈধ দখলদাররা থাকার কারণে ভবন নির্মাণ কাজ শুরু করতে বিলম্ব হচ্ছে। বিদ্যালয়ের জমির জটিলতার করণে একাডেমিক ভবন ফেরৎ গেলে স্কুলের ক্ষতি অপূরণীয়।
পৃথিমপাশা ইউনিয়নের স্থানীয় ২নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো: আব্দুল মতিন জানান, বিদ্যালয়টি এলাকার শিক্ষাবিস্তারে কাজ করছে। একটি মহলের ইন্দনে একটি পক্ষ বিদ্যালয়কে ধ্বংসের পায়তারা করছে এবং আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটাচ্ছে।
পৃথিমপাশা ইউপি চেয়ারম্যান জিমিউর রহমান চৌধুরী জানান, উভয় পক্ষকে আইন শৃঙ্খলার অবনতি না ঘটিয়ে আলোচনার মাধ্যেমে বিষয়টি সমাধানের প্রস্তাব দিয়েছি।
এ ব্যাপারে কুলাউড়া থানার অফিসার ইনচার্জ বিনয় ভূষণ রায় বলেন, বিষয়টি নিয়ে মামলা চলমান রয়েছে আদালত যারা যে অবস্থায় আছে সে অবস্থায় থাকার নির্দেশনা দিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের বাঁধার কারণে আদালতের নির্দেশনা পালন করতে পারেনি পুলিশ। আমরা এ বিষয়ে আদালতে প্রতিবেদন দেবো । উভয় পক্ষকে সংযত থাকার আহবান জানিয়েছি। ##
Leave a Reply