হাকালুকি হাওরে জল টর্ণেডো : জনমনে নানা কৌতুহল হাকালুকি হাওরে জল টর্ণেডো : জনমনে নানা কৌতুহল – এইবেলা
  1. admin@eibela.net : admin :
রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৪৯ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
৩ মাস থেকে ১২ চা বাগানের শ্রমিকদের রেশন-বেতন বন্ধ কুলাউড়ার নবারুন আদর্শ বিদ্যাপীটের সভাপতির প্রবাস গমন উপলক্ষে সংবর্ধনা প্রদান কমলগঞ্জে অনুষ্ঠিত হলো খাসিয়াদের বর্ষবিদায় উৎসব “সেং কুটস্নেম” বড়লেখায় শিক্ষা ও সেবা ফাউন্ডেশনের মেধাবৃত্তি পরীক্ষা ও পুরস্কার বিতরণ কুড়িগ্রামে শ্রমিক লীগ নেতাকে শ্রমিক দলে রাখার পায়তারা বড়লেখায় পৌর যুবদল নেতার মামলায় ২ যুবলীগ নেতা গ্রেফতার বড়লেখায় শিক্ষক ও সাংবাদিক মইনুল ইসলামের ইন্তেকাল : শোক প্রকাশ নাসির উদ্দীনকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ নিটার মিনিবার নাইট ফুটবল টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন এফসি ডার্ক নাইট একজন মেহেদী হাসান রিফাতের গল্প : স্বপ্ন থেকে সাফল্যের পথে

হাকালুকি হাওরে জল টর্ণেডো : জনমনে নানা কৌতুহল

  • রবিবার, ২৪ জুলাই, ২০২২

আব্দুর রব :

দেশের সর্ববৃহৎ জলাভুমি হাকালুকি হাওরে শনিবার সন্ধ্যায় হঠাৎ করে সৃষ্ট ভয়ংকর জল টর্নেডোর ভিডিও এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল। স্থানীয় বাসিন্দাদের মুঠোফোনে ধারণকৃত ওই ভিডিও নিয়ে আলোচনা এখন উপজেলা, জেলা ছাড়িয়ে সারা দেশের মানুষের মুখে মুখে। সাগরে এমন দৃশ্য দেখা গেলেও হাওর এলাকায় তার দেখা মিলা দুষ্কর। নিকট অতীতে এমন দৃশ্যের দেখা মিলেছে কিনা তা নিয়ে যেমন চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ তেমনি ওই দৃশ্যের বিজ্ঞান সম্মত কারণও খোঁজছেন অনেকে। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিতে মূলধারার গণমাধ্যম কর্মীদেরকেও অনেকে ফোন দিয়ে তা জানতে চাচ্ছেন। তবে দীর্ঘদিন থেকে ভয়াবহ বন্যায় সৃষ্ট জলাবদ্ধতার দুর্ভোগে থাকা হাকালুকি হাওর তীরের বাসিন্দারা বলেছেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে এটা আল্লাহর কুদরত ও রহমত। টর্ণেডোর পর ওই এলাকায় অনেক পানি কমেছে। হাকালুকি হাওরের এ বিরল ঘটনা নিয়ে রোববার দিনভর রাস্তাঘাট, হোটেল- রেস্তোরাসহ সর্বত্র কৌতুহলী আলোচনা চলতে দেখা গেছে।

হাওরপারের বাসিন্দাদের সূত্রে জানা যায়, ২৩ শে জুলাই শনিবার গোধুলীলগ্নে হঠাৎ করে হাকালুকি হাওরের চাতলাবিল ও বাইলাকান্দির মধ্যবর্তী জলরাশির ওপর জল টর্ণেডো শুরু হয়। এমন দৃশ্য সরাসরি অবলোকন করেন ও নিজেদের মুঠোফোনে তা ধারণ করেন বড়লেখা, জুড়ী ও কুলাউড়া উপজেলার হাওর পাড়ের মানুষসহ হাওরে নৌকা ভ্রমণে যাওয়া লোকজন। তারা বলেন, হঠাৎ হাওরের জল কুন্ডলির ন্যায় ঘূর্ণন গতিতে আকাশের দিকে উঠে কালো মেঘের ভেতর গিয়ে প্রবেশ করে। এ অবস্থার স্থায়ীত্বকাল ছিল প্রায় ১৫ মিনিট। ওই সময় হাওরের কয়েক কিলোমিটার এলাকা থেকে ওই স্থানে ছুটে যাওয়া পানির স্রোত ছিলো অত্যন্ত প্রবল। হাওর পাড়ের মানুষ প্রথমবারের মতো সরাসরি জল টর্ণেডো প্রত্যক্ষ করেন ও অনেকেই মুঠোফোনে তা ভিডিও ধারণ করেন। যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ব্যাপকভাবে ভাইরাল হয়। প্রথম দিকে অনেকে ওই ভিডিও নিয়ে নানা সন্দেহ পোষণ করলেও পরে তা প্রমাণিত হয় ওই ভিডিওটি হাকালুকিরই।

হাওর তীরের প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শনিবার সন্ধ্যার কিছু আগে হঠাৎ পদখেন হাওরের পভতর পানি ও আকাশের মধ্যে হাতির শুঁড়ের মতো কিছু একটা ঘূর্ণন খাচ্ছে। অনেকেই এমন দৃশ্য দেখে ভয় পেয়ে যান। বিশেষ করে হাওরে নৌকা ভ্রমণে যারা ছিলেন তাদের মধ্যে আতংক বিরাজ করে। ঘূর্ণন দুর্বল হয়ে আসার পরই শুরু হয় ঝড় ও বৃষ্টি। আর তখনই অনেকেই তা ভিডিও ধারণে করেন। ফেসবুকে লাইভকারী অনেকেই লিখেন বাতাশের টর্ণেডো দেখেছি জলের টণের্ডো দেখলাম এই প্রথম। বেশ কয়েক বছর আগে হাকালুকি হাওরে এধরনের দৃশ্য দেখা গিয়েছিল বলে অনেকেই বলেছেন।

তবে এ প্রজন্মের সবাই এই প্রথম এমন দৃশ্য দেখে তা ভিডিও ধারন করেন। ওই টর্নেডোর কারণে কোথাও কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। তবে অনেকেই টর্ণেডোর বিজ্ঞান সম্মত বক্তব্য তুলে ধরেছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। তারা সংজ্ঞা দিচ্ছেন টর্ণেডো এক ধরনের ঝড়, যা বায়ুস্তম্ভের আকারে সৃষ্ট প্রচÐ বেগে ঘূর্ণায়মান ঝড় যা মেঘ (সাধারণত কিউমুলোনিম্বাস, ক্ষেত্রবিশেষে কিউমুলাস) এবং পৃথিবীপৃষ্ঠের সাথে সংযুক্ত থাকে। টর্নেডোর আকৃতি বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এটি দৃশ্যমান ঘনীভূত ফানেল আকৃতির হয়। যার চিকন অংশটি ভূপৃষ্ঠকে স্পর্শ করে এবং এটি প্রায়শই বর্জ্যের মেঘ দ্বারা ঘিরে থাকে। আবহাওয়া বিজ্ঞানের শব্দকোষ (Glossary of Meteorology) অনুযায়ী, টর্নেডো হল প্রচন্ড বেগে ঘূর্ণনরত একটি বায়ুস্তম্ভ, যা ভূপৃষ্ঠের সংস্পর্শে একটি কিউমুলিফর্ম মেঘ থেকে ঝুলন্ত বা এর নীচে থাকে, এবং প্রায়শই (কিন্তু সবসময় নয়) একটি ফানেলাকৃতির মেঘ হিসেবে দৃশ্যমান থাকে। টর্নেডো তৈরি হয় অনেকটা কালবৈশাখীর নিয়ম মেনে।

আবহাওয়া বিদদের মতে, সমুদ্র থেকে গরম জলীয়বাষ্প ভরা বাতাস সমতলে ঢুকে ক্রমশ উপরের দিকে উঠতে থাকে। এক সময়ে তা ঠান্ডা বাতাসের সংস্পর্শে চলে আসে। আর তার থেকেই তৈরি হয় উল্লম্ব মেঘ। উল্লম্ব মেঘ উচ্চতায় বাড়তে থাকে এবং এক সময় সেই মেঘ ভেঙে গিয়ে তৈরি হয় কালবৈশাখী। টর্ণেডো তৈরি হওয়ার প্রক্রিয়াটাও প্রায় একই রকম। তবে এ ক্ষেত্রে বায়ুপ্রবাহের জটিলতায় দীর্ঘকায় উল্লম্ব মেঘের ভিতরে ঘূর্ণি তৈরি হয়। সেই ঘূর্ণি একটি সরু ফানেলের আকারে (মনে হয় যেন হাতির শুঁড়) নেমে আসে মাটির কাছাকাছি। আর মাটি ছুঁয়েই সেই দৈত্যাকৃতি ঘূর্ণায়মান ফানেল তার কেন্দ্রের দিকে সব কিছু টেনে নেয়। ১৯৮৯ সালের ২৬ এপ্রিল মানিকগঞ্জ জেলায় শক্তিশালী টর্ণেডোতে মারা গিয়েছিলেন ১৩শ’ মানুষ।

বড়লেখা ইউএনও খন্দকার মুদাচ্ছির বিন আলী জানান, বনবিভাগের হাল্লা ফরেস্ট ক্যাম্পের ইনচার্জ মোতাহার হোসেন ঘটনাটি প্রত্যক্ষ করেছেন। তিনি তাকে স্থিরচিত্র ও ভিডিও ফোটেজ প্রেরণ করেন। আসলে এটি জল টর্ণেডো। ছোট আকারের ও জনহীন এলাকায় হওয়ায় কোন ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেনি। হাকালুকি হাওরে ইতিপূর্বে এধরণের জল টর্ণেডো হয়েছে বলে কেউ নিশ্চিত করতে পারেননি।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো সংবাদ পড়ুন
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২২ - ২০২৪
Theme Customized By BreakingNews