কুড়িগ্রামে অনিয়ম ও দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য শিক্ষা প্রকৌশলী কুড়িগ্রামে অনিয়ম ও দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য শিক্ষা প্রকৌশলী – এইবেলা
  1. admin@eibela.net : admin :
বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৩৫ পূর্বাহ্ন

কুড়িগ্রামে অনিয়ম ও দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য শিক্ষা প্রকৌশলী

  • শনিবার, ২০ আগস্ট, ২০২২

মো. বুলবুল ইসলাম, কুড়িগ্রাম সদর :: অনিয়ম ও দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য কুড়িগ্রাম শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকৌশলী।

চূড়ান্ত বিল প্রদানের আগে বাধ্যতামূলক ৫% টাকা ঘুষ প্রদান, উপ-সহকারী প্রকৌশলীদের কাছ থেকে ১% টাকা উৎকোচ নিয়ে এলাকা বন্টন, প্রকৌশলী হওয়ায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে কুষ্টিয়া জেলার ঘনিষ্ট স্বজন মেসার্স সৈকত কনস্ট্রাকশন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নামে কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটে কাজ বাগিয়ে ৫% টাকা নিয়ে বিভিন্ন ঠিকাদারের কাছে বিক্রি এবং আসবাবপত্র সরবরাহ কাজের ৩৯টি দরপত্রের মধ্যে ২৬টি কাজ কোটি টাকার বিনিময়ে মনোনীত ঠিকাদারকে দেয়া সহ নানা অপকর্মের জন্ম দিয়ে এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু কুড়িগ্রাম শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ শাহজাহান আলী।

অনিয়ম-দুর্নীতি থেকে নিজেকে আড়াল করতে তড়িঘড়ি করে টাঙ্গাইল জেলায় বদলি নিয়ে কুড়িগ্রাম ত্যাগ করার অভিযোগ উঠেছে। অবিলম্বে নানা অপকর্ম আর দুর্নীতির তদন্ত দাবি জানিয়েছেন সাধারণ ঠিকাদাররা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, কুড়িগ্রামে ৩ হাজার স্কুল, মাদরাসা ও ভ্যাটিক্যাল প্রকল্পের ভৌত অবকাঠামো কাজ চলমান। এর মধ্যে গত ২৯ জুলাই-২২ইং জেলার ৩ হাজার স্কুল প্রকল্পের আসবাবপত্র সরবরাহ কাজের ৩৯টি দরপত্র আহবান করা হয়। এর মধ্যে ১ কোটি টাকা উৎকোচের বিনিময়ে শুধুমাত্র প্রকৌশলীর মনোনীত ঠিকাদার মেসার্স জহুরুল হক দুলাল কনস্ট্রাকশনের সত্ত্বাধিকারী রনিকে একক নামে ২৬টি কাজ পাইয়ে দেন নির্বাহী প্রকৌশলী শাহজাহান আলী।

বাকী ১৩টি কাজ দুই/তিনজন ঠিকাদার পান। দরপত্র দাখিলে রংপুর বিভাগের ৮টি জেলার ঠিকাদাররা এ  কাজে অংশগ্রহণ নিয়ম থাকলেও নির্বাহী প্রকৌশলী শাহজাহান আলী উৎকোচ গ্রহণের উদ্দেশ্যে বিশেষ কায়দায় শুধুমাত্র কুড়িগ্রামের ৫/৬জন ঠিকাদারকে দরপত্র দাখিলের সুযোগ দেন।

একক নামে ২৬টি কাজ পাইয়ে দেয়ার ঘটনায় ক্ষোভে ফেঁটে পড়েন সাধারণ ঠিকাদাররা। প্রতিবাদ করলে একাধিক ঠিকাদারকে পুলিশ হয়রানি করান ওই প্রকৌশলী। পরে জেলা প্রশাসককে অভিযোগ করেন সাধারণ ঠিকাদাররা।

সাধারণ ঠিকাদারদের অভিযোগ, কুড়িগ্রাম শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী শাজাহান আলীর ঘনিষ্ট কুষ্টিয়া জেলার মেসার্স সৈকত কনস্ট্রাকশনের নামে লালমনিরহাট এবং কুড়িগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায় দরপত্রে অংশগ্রহণ করে।

এছাড়া মেসার্স জহুরুল হক কনস্ট্রাকশনের সত্ত্বাধিকারী রনি সহ কিছু ঠিকাদারের সাথে প্রকৌশলী শাহজাহান আলী গভীর রাত পর্যন্ত আড্ডা দিতেন। যাতে সাধারণ ঠিকাদাররা প্রয়োজনে তার সাথে সাক্ষাতের সুযোগ না পায়। প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে কোন কিছু বললেই সুবিধাবাদী সিন্ডিকেট এবং দলীয় ক্যাডারদের দ্বারা হয়রানি করে থাকেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কুড়িগ্রাম শিক্ষা প্রকৌশলের জনৈক কর্মচারী জানান, প্রতিটি কাজের বিলের সময় হিসাব রক্ষক মোঃ আফজাল এবং অফিস পিয়ন নুর আমিনের মাধ্যমে ৫% টাকা ঘুষ নিতেন নির্বাহী প্রকৌশলী শাহজাহান আলী। এছাড়া তিনি ১% উৎকোচের বিনিময়ে উপ-সহকারী প্রকৌশলী তপন কুমার সাহাকে ৪টি উপজেলা এবং বিজন কুমার রায়কে ৪টি উপজেলার দায়িত্ব দিয়েছেন। নির্দিষ্ট পিসি থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কায় সৎ অফিসার হিসেবে পরিচিত উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোঃ রেজাউল হককে শুধুমাত্র রৌমারী উপজেলার দায়িত্ব দেন। কারণ তিনি ঘুষ খান না। এ ঘটনায় অন্যান্য স্টাফদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।

অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, নির্বাহী প্রকৌশলী শাহজাহান আলী ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। ইতোমধ্যে রংপুরে ক্লিনিক ব্যবসা, ঢাকা শহরে ২টি ফ্ল্যাট ক্রয় এবং জামালপুরের সরিষাবাড়ীর গ্রামের বাড়িতে নামে-বেনামে প্রচুর পরিমাণ জমি কিনেছেন।

নির্বাহী প্রকৌশলী শাহজাহান আলীর বিরুদ্ধে ঘুষ-দুর্নীতির অভিযোগ উঠায় তড়িঘড়ি করে টাঙ্গাইল জেলায় বদলি হয়ে যান। তদন্ত সাপেক্ষে নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন সাধারণ ঠিকাদাররা।

মেসার্স জহুরুল হক কনস্ট্রাকশনের সত্ত্বাধিকারী ঠিকাদার রনিকে ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

কুড়িগ্রাম শিক্ষা প্রকৌশলের নির্বাহী প্রকৌশলী অভিযুক্ত শাহজাহান আলীকে একাধিকবার মুঠোফোনে কথা বলার চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

এ ব্যাপারে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের রংপুর বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী তারেক আনোয়ার জাহেদী বলেন, একক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নামে ২৬টি কাজ পাওয়ার সুযোগ আছে যদি সেই প্রতিষ্ঠানের কাজ করার সক্ষমতা তাকে। দুই ধরণের মাধ্যমে টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পাদন করা হয়। সেটি হলো এলটিএম এবং ওটিএম।

ওটিএমে সারাদেশের ঠিকাদাররা অংশগ্রহণ করতে পারবে আর এলটিএমে প্রকৌশলী নির্ধারণ করে কোন জেলার ঠিকাদাররা অংশগ্রহণ করবে। ইজিপি টেন্ডার প্রক্রিয়ায় সুবিধা হলো কেউ যদি এখানে কোন প্রকার অনিয়ম দুর্নীতি করে থাকে তাহলে পার পাবার কোন সুযোগ নেই। কারণ দশ বছর পর হলেও তা শনাক্ত করা সম্ভব।  তিনি অনিয়মের বিষয়টি দেখবেন বলে এ প্রতিবেদককে আশ্বস্ত  করেন।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো সংবাদ পড়ুন
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২২ - ২০২৪
Theme Customized By BreakingNews