কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি :: মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী ইসলামপুর ইউনিয়নের ভান্ডারীগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. খুরশেদ আলী। শিক্ষার জন্য নিবেদিত এক প্রাণ, ঘরে ঘরে যেন শিক্ষার আলো জ্বালানোর দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে উপজেলার বিভিন্ন চা বাগান ও গ্রাম অঞ্চলের অলি গলিতে ছুটে চলছেন দিনরাত। প্রধান শিক্ষক হিসেবে স্কুলের প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনে অত্যন্ত স্বচ্ছতা, সততা, আন্তরিকতা, কর্মদক্ষতা ও দৃঢ়তার মাধ্যমে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিবাবকদের বেশ আস্থা অর্জন করেছেন। একইসাথে শিক্ষা কার্যক্রম গ্রহণ করে শিক্ষার মানোন্নয়নে দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।
গত শনিবার (৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত উপজেলার পাত্রখোলা চা বাগানের বিভিন্ন এলাকায় ভা-ারীগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের হোমভিজিট করেন প্রধান শিক্ষক মো. খুরশেদ আলী। তার আগে আরও কয়েকটি গ্রামে হোম ভিজিট করেন তিনি। এসময় তিনি অভিভাবকদের সাথে শিক্ষার বিষয় নিয়ে মতবিনিময় করেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য মো. জুনেদ মিয়া, দুলাল ছত্রী ও শিক্ষক সঞ্জিত কৈরি।
জানা যায়, হোম ভিজিটকালে মূলত শিক্ষার্থীরা সন্ধ্যার পর যথাসময়ে বাসায় প্রবেশ করেছে কি না, বাড়িতে পড়াশুনা করছে কি না ও সার্বিক প্রস্তুতির খোঁজখবর নেওয়া হয়। অভিভাবকদের সাথে কথা বলা হয়। কিছু পরামর্শ ও নির্দেশনা প্রদান করা হয়। এছাড়াও স্কুলের সময়ে ‘কে স্কুলে আসলো কে আসলো না’ সেটা দেখে ছাত্র-ছাত্রীদের বাড়িতে চলে যান এই প্রধান শিক্ষক।
প্রধান শিক্ষকের সান্ধ্যকালীন এমন আকস্মিক ভিজিটে এলাকায় ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়। যেসব শিক্ষার্থীর বাড়িতে তিনি গিয়েছেন সেসব শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা বিস্মিত, অভিভূত ও অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছেন। তারা ধারণাই করতে পারেননি, এভাবে সরাসরি ছাত্র-ছাত্রীদের বাড়িতে ভিজিট করতে চলে আসবেন। তারা মনে করেন, প্রধান শিক্ষক এতটাই শিক্ষাবান্ধব যে তিনি অনেকগুলো ব্যতিক্রমী উদ্যোগ গ্রহণ করে আমাদের সন্তানদের পড়াশোনায় অবিশ্বাস্য সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। যা শিক্ষার সার্বিক মানোন্নয়নেও অনেক বড় ভূমিকা রাখছে।
অভিভাবকরা বলেন, এমন কার্যক্রমে আমাদের সন্তানরা পড়াশুনায় আরও বেশি আগ্রহী হয়ে উঠছে। গত বছরও তিনি অনেক শিক্ষার্থীর বাড়িতে সান্ধ্যকালীন ভিজিট করেছিলেন। প্রধান শিক্ষক ও স্কুল ম্যানেজিং কমিটির এমন কঠোর মনিটরিং থাকলে শিক্ষার প্রতিটি স্তরে উন্নতি অবশ্যম্ভাবী।
শিক্ষার্থীরা জানায়, স্যারের ‘সান্ধ্যকালীন হোম ভিজিট খুব ভালো লেগেছে। এভাবে সব স্যার যদি মাঝে মাঝে আমাদের খেয়াল করেন তাহলে আমরা আরও ভালো রেজাল্ট করতে পারবো।
এ বিষয়ে ভান্ডারীগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. খুরশেদ আলী জানান, এসএসসি পরীক্ষা সন্নিকটে। পরীক্ষার্থীসহ অন্যান্য শিক্ষার্থীদেরকে ক্লোজ মনিটরিং এ নিয়ে আসা, তারা যাতে সন্ধ্যার পরে অহেতুক বাসার বাইরে না থাকে, আড্ডা না দেয়, খারাপ সঙ্গে জড়িয়ে না পরে, কিশোর গ্যাং সৃষ্টি না করে, মাদকাসক্তি ও অসামাজিক কার্যকলাপে সম্পৃক্ত না থাকে এবং তাদেরকে পড়াশুনায় মনোযোগী করা ও উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যেই এ উদ্যোগটি হাতে নিয়েছি। আমাদের শিক্ষার্থীরা বইমুখী হলে, পড়াশুনায় মনোযোগ দিলে সামগ্রিক অর্থে শিক্ষা জীবনে তাদের সাফল্য ও উন্নতি হবে এবং জীবনে তারা অনেক উপরে উঠতে পারবে।
প্রধান শিক্ষক মো. খুরশেদ আলীর এমন আকস্মিক ‘সান্ধ্যকালীন হোম ভিজিট’ এলাকাবাসী, সচেতন সমাজ, অভিভাবক ও শিক্ষকমহলে ব্যাপকভাবে আলোচিত ও প্রশংসিত হয়। তাদের মতে, এটি সম্পূর্ণরুপেপ ব্যতিক্রমী ও অসাধারণ একটি বিষয়। স্যারের এই কার্যক্রম শিক্ষা ক্ষেত্রে একটি ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে। শিক্ষাসচেতনতা বৃদ্ধিতে ও শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে এমন উদ্যোগ অনেক বেশি কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলেও তারা বিশ্বাস করেন। একইসাথে তারা চান, শিক্ষা ক্ষেত্রে মানসম্মত পরিবর্তন আনয়নে ও আমাদের আগামীর প্রজন্মকে সঠিক দিক-নির্দেশনা দিয়ে গড়ে তুলতে প্রধান শিক্ষক মো. খুরশেদ আলী স্যারের অন্যান্য ব্যতিক্রমী কার্যক্রমকে স্বাগত জানান।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শামসুন্নাহার পারভীন বলেন, ভান্ডারীগাঁও উচ্চ বিকদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. খুরশেদ আলীর সান্ধ্যকালীন হোম ভিজিট অবশ্যই একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগে। বিশেষ করে এসএসসি পরীক্ষাকে সামনে রেখে তাঁর এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগে শিক্ষার্থীদের ভাল রেজাল্টে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।#
Leave a Reply