এইবেলা, বড়লেখা :
বড়লেখা উপজেলার টেকাহালী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রণয় রঞ্জন দাস ৩ লাখ টাকা ঘুস নিয়ে নৈশপ্রহরী পদে বশির উদ্দিনকে চাকুরী দিয়েছেন। প্রায় দেড় বছর বিনাবেতনে খাটিয়ে এমপিওভুক্তি নামে আরো ২ লাখ টাকা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে অবশেষে হতভাগা নৈশপ্রহরীকে স্কুল থেকে বের করে দিয়েছেন। এব্যাপারে ভোক্তভোগি নৈশপ্রহরী সম্প্রতি ইউএনও বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার তালিমপুর ইউনিয়নের টেকাহালী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রণয় রঞ্জন দাস স্কুলের নৈশপ্রহরী পদে স্থানীয় হতদরিদ্র বশির উদ্দিনকে চাকুরী দিতে ৫ লাখ টাকা দাবী করেন। বশির উদ্দিন দরকষাকষি করে প্রধান শিক্ষককে ৩ লাখ টাকায় রাজি করান। বশির উদ্দিনকে নিয়োগ দিতে প্রধান শিক্ষক নিজের স্কুল থেকে অষ্টম শ্রেণি পাশের জাল সনদ প্রদান করেন। ২০২২ সালের ৫ সেপ্টেম্বর নৈশপ্রহরী পদের নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বশির উদ্দিনকে নৈশপ্রহরী পদে নির্বাচিত করেন প্রধান শিক্ষক প্রণয় দাস। ১৪ মে বশির উদ্দিন নৈশপ্রহরী পদে যোগদান করেন। প্রধান শিক্ষক নৈশপ্রহরী বশির উদ্দিনকে স্কুল থেকে কোনো বেতন দিতেন না। মানবেতন জীবন যাপন করেও এমপিওভুক্তির আশায় সে যথাযথভাবে স্কুলে দায়িত্ব পালন করে যায়। এরই মাঝে প্রধান শিক্ষক প্রণয় দাস কর্মচারি বশির উদ্দিনের কাছে চাকুরী স্থায়ী করতে আরো ২ লাখ চান। তিনি আর কোন টাকা দিতে পারবেন না বলায় প্রধান শিক্ষক ক্ষীপ্ত হয়ে উঠেন। ২০২৩ সালের ১২ অক্টোবর পর্যন্ত বশির উদ্দিন বিনা বেতনে নৈশপ্রহরীর দায়িত্ব পালনকালিন প্রধান শিক্ষক প্রণয় রঞ্জন দাস জোরপূর্বক তাকে স্কুল থেকে বের করে দেন। নানা হুমকি ধরমকির কারণে তিনি স্কুলে ঢুকতে পারছেন না।
ভোক্তভোগি নৈশপ্রহরী বশির উদ্দিন কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, প্রধান শিক্ষক প্রণয় রঞ্জন দাস চাকুরী দিতে ৫ লাখ টাকা দাবি করেন। অপরাগতা প্রকাশ করায় তিন লাখ টাকায় রাজি হলে স্ত্রীর সোনাদানা, বাড়ির গবাদি পশু আর গাছপালা বিক্রি করে তাকে টাকা দিলে তিনি নিয়োগের ব্যবস্থা করেন। ইন্টারভিউর মাধ্যমে আমাকে নিয়োগ দেন। প্রায় দেড় বছর বিনা বেতনে ডিউটি করার পর এমপিভুক্ত করার জন্য তিনি আরো ২ লাখ টাকা দাবী করেন। আমি গরিব মানুষ, আর টাকা দিতে পারবো না বলায় গত বছরের ১২ অক্টোবর তিনি আমার বিছানাপত্র স্কুলের বাহিরে ফেলে দিয়ে আমাকে স্কুল থেকে বের করে দেন। আমাকে স্কুলে ঢুকতে নিষেধ করেন। স্বেচ্ছায় অব্যাহতি দিতে ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। আমি ক্ষতিপুরণসহ ঘুসের টাকা ফেরৎ প্রদানের জন্য প্রশাসনের সহযোগিতা চাচ্ছি।
প্রধান শিক্ষক প্রণয় রঞ্জন দাস ২০২২ সালের ১৪ মে থেকে ২০২৩ সালের ১২ অক্টোবর পর্যন্ত বশির উদ্দিন নৈশপ্রহরী হিসাবে বিনা বেতনে দায়িত্ব পালনের, স্কুলের হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর থাকার, শিক্ষাগত যোগ্যতার জাল সনদ প্রদানের সত্যতা স্বীকার করলেও উৎকোচ নিয়ে চাকুরী দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন। কাগজপত্রে জটিলতা থাকলে আবেদনপত্র বাছাইয়ে বাদ দিলেন না কেন, তাকে কিভাবে ইন্টারভিউতে ডাকলেন, নির্বাচিত করলেন, নিয়োগপত্র দিলেন এমনসব কোনো প্রশ্নের সদোত্তর দেননি প্রধান শিক্ষক প্রণয় রঞ্জন দাস।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজরাতুন নাঈম জানান, বেশ কিছুদিন ধরে তিনি ছুটিতে রয়েছেন। কর্মস্থলে ফিরে অভিযোগটি দেখে এব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন।
Leave a Reply