এইবেলা, কুলাউড়া ::
সম্মেলনের ১১ মাস পর কুলাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি চুড়ান্ত অনুমোদনের জন্য পুর্নাঙ্গ করার প্রস্তুতি চলছে। তালিকায় স্থান পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন তোকর্মীরা। ফলে কুলাউড়ায় ক্ষমতাসীন দল এখন সরগরম। তবে দলের শীর্ষ নেতারা জানান, বিগত নির্বাচনে যারা নৌকার বিরুদ্ধাচরণ করেছেন তাদের স্থান হবে না কমিটিতে।
কেন্দ্রের নির্দেশে প্রায় ১৫ বছর পরে সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ২০১৯ সালের ১০ নভেম্বর কুলাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের বহুল প্রতীক্ষিত সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে আওয়ামী লীগের তৎকালীন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেনের উপস্থিতিতে সম্মেলন এবং কাউন্সিল অধিবেশনে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকর কাছে উপজেলার কাউন্সিলাররা কমিটি গঠনের দায়িত্ব দেয়া হয়। জেলা নেতৃবৃন্দ কুলাউড়া আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রেনুকে সভাপতি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান একেএম সফি আহমদ সলমানকে সহ-সভাপতি, যুব বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আ.স.ম কামরুল ইসলামকে সাধারণ সম্পাদক, সাবেক এমপি ও সাবেক উপজেলা সভাপতি আব্দুল মতিনকে সদস্য ও সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আব্দুল মুক্তাদির তোফায়েলকে সদস্য করে আংশিক কমিটি ঘোষণা করেন।
তিন মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের নির্দেশ দিলেও করোনা সংকটসহ বিভিন্ন কারণে গত দশ মাসে উপজেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা সম্ভব হয়নি। মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সম্পাদক চলতি মাসের ৩০ তারিখের মধ্যে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করে তালিকা জমা দেবার নির্দেশনা প্রদান করেন কুলাউড়া নেতৃবৃন্দকে। এদিকে কুলাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে বর্তমান দায়িত্বশীলরা তৃণমূল থেকে শুরু করে উপজেলা পর্যায়ের সাবেক নেতৃবৃন্দের সাথে যোগাযোগ ও মতামতের ভিত্তিতে একটি আদর্শিক শক্তিশালী কমিটির খসড়া তালিকা তৈরির কাজ জোরেসোরে চলছে। এই কমিটির বিভিন্ন পদে স্থান পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন সম্ভাব্য পদপ্রত্যাশীরা।
সিলেট বিভাগের আলোচিত রাজনৈতিক সচেতন এলাকা হিসিবে পরিচিত কুলাউড়া আবারো সরগরম হয়ে উঠেছে সরকারি দল আওয়ামীলীগের রাজনৈতিক পদ-পদবী পেতে। ৭১ সদস্য বিশিষ্ট উপজেলা আওয়ামী লীগের অবশিষ্ট ৬৬ পদে ৮টি সহ-সভাপতি, ৩টি যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, ৩টি সাংগঠনিক সম্পাদক ও অন্যান্য সম্পাদকীয় পদ ও সদস্য পদ রয়েছে। পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদে স্থান করে নিতে অবসরপ্রাপ্ত সচিব থেকে শুরু করে ডাক্তার, ব্যবসায়ী, আইনজীবী, সাংবাদিক, শিক্ষক, প্রবাসীরাও জোর লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন উপজেলা থেকে জেলা এবং কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের কাছে। এছাড়া অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সাবেক অনেক নেতাকর্মীরাও মুল দলে স্থান করে নিতে জোর চেষ্টা করছেন।
রাজনৈতিক সচেতন হিসেবে এই কুলাউড়া দেশের মধ্যে আলোচিত একটি এলাকা। এখান থেকে যেমন কেন্দ্রীয় আওয়াম ীলীগের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় পদে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এক সময়ের ডাক সাইটের নেতা ও ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ। বর্তমানেও কেন্দ্রিয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল।
উপজেলা পর্যায়ে দলীয় কোন্দলের কারনে বিগত সময়ে সংসদ, উপজেলা, পৌরসভা এবং ইউনিয়ন নির্বাচনেও দলীয় প্রার্থীর চরম ভরাডুবির ইতিহাস সৃষ্টি হয়। তবে স্থানীয় ও তৃণমূল আওয়ামীলীগের শোভাকাঙ্খীরা মনে করছেন, পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনে সৎ, ত্যাগী ও দলের জন্য নিবেদত কর্মীরা কমিটিতে স্থান পেলে এবং অতীতের সকল বিভেদ ও গ্রুপিং দ্বন্ধ ভূলে গিয়ে একটি স্বচ্ছ ও আদর্শিক নেতৃত্বের কমিটি গঠন হলে কুলাউড়া তাঁর হারানো দিনের নৌকার ঐতিহ্য ফিরে পাবে।
এছাড়া তৃণমুল আওয়ামী লীগ নেতাদের দাবি, বিগত নির্বাচনে নৌকা এবং দলীয় সিদ্ধান্তের বিপক্ষে যারা অবস্থান নিয়েছিলেন এমন নেতৃবৃন্দকে পুর্নাঙ্গ কমিটিতে এরা যেন স্থান না পায়।
জানা যায়, ২০০৪ সালে সম্মেলনের পর অনেক নেতাকর্মী মৃত্যুবরণ করেন ও অনেকে প্রবাসে চলে যাওয়া এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের মতানৈক্য ও গ্রুপিংয়ের কারণে কুলাউড়া আওয়ামী লীগের নেতৃতে ছন্দপতন হয়¡। যার প্রভাব পড়েছে ১৯৯৬ সালের সংসদ নির্বাচনের পর। সেই নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী (সুলতান মনসুর) জয়ী হলেও ২০০১ সালের পর থেকে নৌকার ভরাডুবি ঘটে বিভিন্ন নির্বাচনে। সর্বশেষ ২০১৯ সালের নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী হন এমএম শাহীন। কিন্তু সুলতান সমর্থকরা এবং দলের কিছু পদ পদবীধারী নৌকার ভরাডুবি নিশ্চিত করেছেন।
এ বিষয়ে কুলাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসম কামরুল ইসলাম জানান- মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ও দলীয় প্রধানের নির্দেশনা মোতাবেক দলের জন্য নিবেদিত ত্যাগী ও সৎ এবং প্রবীন ও নবীন নেতাকর্মীদের সমন্বয়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। তবে যারা বিগত সময়ে দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে নৌকার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন, সংগঠন বিরোধী কার্যক্রমে যুক্ত ছিলেন তাদেরকে আসন্ন কমিটির কোন পদে রাখা হবে না।
কুলাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম রেনু বলেন পুর্নাঙ্গ কমিটি গঠনে দলের জন্য ত্যাগী ও নিবেদিতদের স্থান দেয়া হবে।
এ বিষয়ে মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নেছার আহমদ এমপি বলেন, কুলাউড়া আওয়ামীলীগের পুর্নাঙ্গ কমিটির খসড়া তালিকা চলতি মাসের ৩০ তারিখের মধ্যে জেলায় প্রেরণের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কমিটির পদবী পুরনের ক্ষেত্রে সৎ ও ত্যাগী আদর্শবানদের মূল্যায়নের পরামর্শ দেয়া হয়েছে উপজেলা নেতৃবৃন্দকে।#
Leave a Reply