কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি :: মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে চা শ্রমিক সংঘের সম্মেলনে বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি শ্রমিকনেতা চৌধুরী আশিকুল আলম ‘চা-শ্রমিকদেরকে সবচেয়ে অবহেলিত শ্রমিক আখ্যায়িত’ করে বলেন চা-শিল্পের ১৭০ বছর পরও চা-শ্রমিকদের মজুরি মাত্র ১৭০ টাকা। সম্প্রতি ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট প্রদানের পরও শ্রমিকদের মজুরি হয়েছে মাত্র ১৭৮.৫০ টাকা। বর্তমান দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্দ্ধগতির সময়ে এই মজুরি দিয়ে কি করে একজন শ্রমিক ৫-৬ জনের পরিবারের ভরণপোষণ করবে? অথচ বর্তমান বাজারদরে ৬ জনের একটি পরিবারের জন্য ন্যূনতম খরচ পড়ে ৮শ’ থেকে ১ হাজার টাকা। চা-শ্রমিকদের হাড় ভাঙ্গা খাটুনিতে চায়ের রেকর্ড পরিমান উৎপাদন হচ্ছে, চা উৎপাদনকারী দেশগুলো মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বে ৯ম স্থান অর্জন করে নিয়েছে।
রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) চা-শ্রমিক সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির ১ম জেলা সম্মেলন সকাল ১১ টায় কমলগঞ্জ উপজেলার শমসেরনগর জনমিলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন চা-শ্রমিক সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির অন্যতম নেতা গণেশ ভাস্কর। সংগঠনের যুগ্ম-আহাবয়ক হরিনারায়ন হাজরারা পরিচলানায় অনুষ্ঠিত সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি শ্রমিকনেতা চৌধুরী আশিকুল আলম। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সভাপতি কবি শহীদ সাগ্নিক, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সভাপতি মোঃ নুরুল মোহাইমীন, সিলেট জেলা কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবুল কালাম আজাদ ও চট্টগ্রাম জেলা কমিটির যুগ্ম-সম্পাদক ওমর ফারুক, বাংলাদেশ কৃষক সংগ্রাম সমিতি মৌলভীবাজার জেলা কমিটির আহবায়ক অবনী শর্ম্মা ও বাংলাদেশ ওএসকে গার্মেন্টস এন্ড টেক্সটাইল শ্রমিক ফেডারেশনের চট্টগ্রাম জেলা কমিটির সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক।
অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ধ্রুবতারা সাংস্কৃতিক সংসদ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অমলেশ শর্ম্মা, চা-শ্রমিক সংঘের সাবেক আহবায়ক দিনেশ কর্মকার, চা-শ্রমিক সংঘ সিলেট জেলা শাখার প্রতিনিধি শিপন মুন্ডা, চা শ্রমিক নেতা মধু রজক, কানিহাটি চা-বাগানের রামভজন রবিদাস, নারী চা-শ্রমিক নেত্রী লছমী রাজভর, সুনিয়া ভাস্কর, বাবুচাঁদ রবিদাস, লক্ষèী রানী বাক্তি প্রমূখ।
বক্তারা বলেন, ২০২২ সালের আগষ্টে মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে চা-শ্রমিকরা খেয়ে না খেয়ে জানবাজী রেখে দীর্ঘ ১৯ দিনের লাগাতার কর্মবিরতিসহ বিক্ষোভ, রাজপথ-রেলপথ অবরোধের মতো কঠিন সংগ্রামের ফলশ্রুতিতে দৈনিক ৫০ টাকা বৃদ্ধি করে মজুরি ১৭০ টাকা কার্যকর করা হয়েছিল। এমন কি শ্রমিকদের হাড়ভাঙ্গা খাটুনির বকেয়া ৩০ হাজার ২০০ টাকা এরিয়াকে লামসাম হিসেবে মাত্র ১১ হাজার টাকা প্রদান করে শ্রমিকদের ঠকিয়ে মালিকের স্বার্থরক্ষা করা হয়। ১৭০ টাকা মজুরি মেয়াদ ২০২২ সালে উত্তীর্ণ হওয়ার ২০ মাস অতিক্রান্ত হলেও নতুন মজুরি কার্যকরের ব্যাপারে নির্বিকার। যুগ যুগ ধরে বসবাস করার পরও চা-শ্রমিকদের ভূমির অধিকার নেই। নেই শিক্ষা, চিকিৎসার মত মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা নেই। যার কারণে চা-শ্রমিকদের মধ্যে শিক্ষিতের হার কম; আবার অপুষ্টি, রোগ-শোক ও মাতৃমৃত্যুর হার অনেক বেশি।##
Leave a Reply