ছাতক (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি ::
সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নে চোরাচালানি টাকার ভাগাভাগি নিয়ে দুই গ্রামের সংঘর্ষের জেরে এক ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। চলমান উত্তেজনার মধ্যেই নিহত ব্যবসায়ী মানিক মিয়ার হত্যাকাণ্ডকে ভিন্ন খাতে নিতে পরিকল্পিতভাবে একটি বীর মুক্তিযোদ্ধার বাড়িতে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ উঠেছে। শনিবার গভীর রাতে ইসলামপুর ইউনিয়নের লুবিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রাতের নিস্তব্ধতা ভেঙে ৮–১০ জনের সশস্ত্র একদল দুষ্কৃতকারী মুক্তিযোদ্ধার বাড়ি ঘেরাও করে। প্রথমে ঘরে থাকা গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র, স্বর্ণালংকার, নগদ অর্থ ও গবাদিপশু লুট করে নেয় তারা। পরে ঘরের ভেতরে থাকা আলমারি, আসবাব ও মালামাল ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয়। মুহূর্তেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে পুরো একটি ঘর পুড়ে ছাই হয়ে যায়।এতে প্রায় ১০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি পরিবারের।
এ সময় বাড়িতে ছিলেন শুধু দুইজন মহিলা—মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী জাহানারা বেগম এবং আরেক আত্মীয়। জাহানারা বেগম জানান, “হামলাকারীরা আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্র দেখিয়ে আমাদের ভয় দেখায়। তারা জোর করে আমাদের একটি কক্ষে তালাবদ্ধ করে রাখে। চিৎকার করার সুযোগও দেয়নি। পরে বাইরে থেকে চেঁচামেচি আর ধোঁয়ার গন্ধ পেয়ে বুঝতে পারি ওরা আগুন দিয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “আমার স্বামীর স্মৃতি, কাগজপত্র, পদক—সব পুড়ে গেছে। আমরা অসহায় হয়ে শুধু কান্না করেছি।”
স্থানীয়দের দাবি, নুবিয়া ও বনগাঁও গ্রামের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলমান বিরোধই সাম্প্রতিকসংঘাতের মূল কারণ। এই বিরোধ নতুন মাত্রা পায় চোরাচালানি টাকার ভাগাভাগি নিয়ে।
সম্প্রতি ৫ লাখ টাকার একটি লেনদেনকে কেন্দ্র করে লুবিয়া গ্রামের সাইফুল ইসলামের ছেলে কামরুল ইসলাম—যিনি এলাকায় পরিচিত চোরাকারবারী—ও বনগাঁও গ্রামের মৃত জগম্বর আলীর ছেলে ব্যবসায়ী মানিক মিয়ার ভাই ফজলুল করিমের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।
এই উত্তেজনার পরদিন রাতেই দুই গ্রামের শতাধিক লোক দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। ইছামতী বাজারে ভাঙচুর, দোকানপাট লুট, সড়ক অবরোধ, গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ এবং বাজারের একটি ব্রিজে আগুন লাগানোর ঘটনাও ঘটে। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ হয়ে ওঠে যে পুলিশ ও বিজিবিকে যৌথভাবে হস্তক্ষেপ করতে হয়।
সংঘর্ষে গুরুতর আহত হন ব্যবসায়ী মানিক মিয়া। তাকে সিলেট থেকে ঢাকা এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। নিহত মানিক মিয়ার মৃত্যুতে এলাকায় আরও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী শাহিনুর বেগম গত ৩১ অক্টোবর ছাতক থানায় ২২ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ১৫–২০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর পুলিশ অভিযান চালিয়ে এজাহারভুক্ত ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে প্রেরণ করে।
স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, মুক্তিযোদ্ধার বাড়িতে হামলাটি উদ্দেশ্যমূলক। তাদের দাবি, মানিক হত্যাকাণ্ডের মামলাকে বিভ্রান্ত করতে এবং নিজেদের দিকে সন্দেহ ঠেকাতে একপক্ষ পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনার পথ বেছে নিয়েছে।
এদিকে, লুবিয়া গ্রামে বীর মুক্তিযোদ্ধার বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবার ঘটনাটিকে মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধের ওপর ‘আঘাত’ বলে মন্তব্য করেছেন।
তারা দ্রুত দোষীদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। ঘটনার পর পুরো এলাকায় উত্তেজনা থাকলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর অবস্থানে রয়েছে। পুলিশ ও বিজিবির টহল জোরদার করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রশাসনের বিশেষ নজরদারিও অব্যাহত রয়েছে।
এব্যাপারে ছাতক থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শফিকুল ইসলাম খান বলেন, “মুক্তিযোদ্ধার বাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগের খবর পেয়ে পুলিশ তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে যায়। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, হত্যাকাণ্ডের মামলাকে ভিন্ন খাতে নিতে আসামিপক্ষই এ হামলা চালিয়েছে। ইতোমধ্যে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং পুরো ঘটনার রহস্য উদঘাটনে গভীর তদন্ত চলছে।” #
caller_get_posts is deprecated. Use ignore_sticky_posts instead. in /home/eibela12/public_html/wp-includes/functions.php on line 6121caller_get_posts is deprecated. Use ignore_sticky_posts instead. in /home/eibela12/public_html/wp-includes/functions.php on line 6121
Leave a Reply