ভবিষ্যতে নিউইয়র্ক পুলিশের নেতৃত্ব দেবেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিনরা ভবিষ্যতে নিউইয়র্ক পুলিশের নেতৃত্ব দেবেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিনরা – এইবেলা
  1. admin@eibela.net : admin :
বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ০২:৪৪ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
রাজনগরের ফতেহপুর ইউপি চেয়ারম্যান নকুল চন্দ্র দাস সাময়িক বরখাস্ত কুলাউড়ায় ওয়াশ বিষয়ক ওরিয়েন্টেশন কমলগঞ্জে চেয়ারম্যান প্রার্থী ইমতিয়াজ আহমেদ বুলবুলের মতবিনিময় কুলাউড়া শাহ্জালাল আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের উপাধ্যক্ষের বিদায়ী অনুষ্ঠান ও পুরস্কার বিতরণ আত্রাইয়ে তিন দিনব্যাপী কৃষি প্রযুক্তি মেলার উদ্বোধন কুলাউড়ায় ইউনিয়ন ওয়াটসান কমিটির ওয়াশ বিষয়ক ওরিয়েন্টেশন মৌলভীবাজারে আগর-আতর শিল্পের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ শীর্ষক সেমিনার-উৎপাদন ও রপ্তানির জটিলতা নিরসনের দাবি ওসমানীনগরে লক্ষ টাকার চেয়ারম্যান কাপ ফুটবল টুর্ণামেন্টের উদ্বোধন কালবৈশাখী ঝড়ে লাউয়াছড়ায় গাছ পড়ে দুই ঘন্টা ট্রেন চলাচল বন্ধের পর চালু কুলাউড়ায় চাচা-ভাতিজা মুখোমুখি, চলছে বাকযুদ্ধ

ভবিষ্যতে নিউইয়র্ক পুলিশের নেতৃত্ব দেবেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিনরা

  • বুধবার, ৪ নভেম্বর, ২০২০

এইবেলা, নিউইয়র্ক ::

ভবিষ্যতে নিউইয়র্ক পুলিশের নেতৃত্ব দেবেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিনরা—এমন স্বপ্ন দেখেন ক্যাপ্টেন কারাম চৌধুরী। নিউইয়র্কে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিনদের সংগঠন বাংলাদেশি আমেরিকান পুলিশ—বাপার সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।

দ্বিতীয় বাংলাদেশি মার্কিন হিসেবে এনওয়াইপিডির ক্যাপ্টেন পদে পদোন্নতি পেয়েছিলেন। শুধু পুলিশে নয়, কমিউনিটি অ্যাকটিভিস্ট হিসেবে নিউইয়র্কে বাংলাদেশি জনসমাজে তিনি পরিচিত মুখ।

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কারাম চৌধুরী ২০০৫ সালে নিউইয়র্ক নগর পুলিশের কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন। মেধা আর সাহসিকতার গুণে তিনি দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছেন। এরই মধ্যে নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগের (এনওয়াইপিডি) ক্যাপ্টেন হয়েছেন।

ভয়াবহ করোনা মহামারিতে কারাম চৌধুরী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানবসেবায় এগিয়ে এসেছেন। পরিবারকেও ঝুঁকিতে ফেলেছেন। সব সময় ভয়ে থাকতেন, এই ভাইরাস কি তিনি বহন করে বাসায় নিয়ে যাচ্ছেন? তবু পিছু হটেননি। সামাজিক দায়িত্ববোধকে বড় করে দেখেছেন।

অন্য সময় সপ্তাহে ৪০ ঘন্টা কাজ করার কথা। করোনাকালে ৭০ থেকে ৭৫ ঘণ্টা মানুষের সেবায় কাজ করেছেন। ভাইরাসে প্রিয়জনহারা শোকাহত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। এখনো করে যাচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্রে যখন মৃত্যুর মিছিলে প্রতিদিন যোগ হচ্ছিল বাংলাদেশিদের নাম, তখন তিনিও দুজন সহকর্মীকে হারিয়েছেন। এঁরা হচ্ছেন মোহম্মদ আহসান (ট্রাফিক সুপারভাইজার), মোহাম্মদ চৌধুরী (ট্রাফিক সেকশন কমান্ডার)। করোনায় এদের হারিয়ে তিনি মানসিকভাবে অনেকটাই ভেঙে পড়েন।

কারাম চৌধুরী এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘বাংলাদেশি কমিউনিটির অনেকেই চোখের সামনে আমাদের ছেড়ে চলে যাচ্ছিল। তখন শোকে আতঙ্কে বিমর্ষ পরিবারসহ পুরো কমিউনিটি। অথই সাগরে পড়েছে বহু পরিবার। বদলে গিয়েছে তাদের জীবনধারা। তখন তিনি লড়ে গেছেন। কাজ করেছেন বিপদাপন্ন মানুষের জন্য। কে কোন দেশের, কোন জাতের বা কোন ধর্মের সেটি দেখেননি। নিজ উদ্যোগে, কখনোবা বাপার সহযোগিতায় বিপদগ্রস্ত পরিবারকে সাহায্য করেছেন। চাল, ডাল, সবজি, ফলমূল, তেল ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পৌঁছে দিয়েছেন বাসায়। দিয়েছেন ওষুধসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী।
বিজ্ঞাপন

করোনার মধ্যেই নিউইয়র্কে নাগরিক আন্দোলন শুরু হয়। শুরু হয় সহিংসতা। বাণিজ্যিক এলাকার যেখানে ভাঙচুর হয়েছে, সেখানে এক্সট্রা পেট্রল পাঠিয়ে পাহারা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। মানুষকে মাস্ক পরা ও হাত সেনিটাইজ করার পরামর্শ দিতেন। বাপা থেকে কুইন্স, ব্রুকলিন, ম্যানহাটনসহ ছয়টি জায়গায় ফ্রি অ্যান্টিবডি টেস্টের প্রোগ্রাম করেছেন। এ পর্যন্ত প্রায় দুই হাজার মানুষের ফ্রি অ্যান্টিবডি টেস্ট করেছেন।

কারাম চৌধুরী এনওয়াইপিডিতে যোগ দিয়ে কিছু পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন। জানালেন, এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগে বেশি বাংলাদেশিদের অন্তর্ভুক্তিতে সহযোগিতা করা। বাংলাদেশি কমিউনিটিতে সচেতনতামূলক কর্মসূচি, বিশেষ করে অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাস দমনে কমিউনিটির ভূমিকা, টাউন হল মিটিং আয়োজনের মাধ্যমে তথ্য আদান–প্রদান, ফেডারেল, স্টেট ও সিটি প্রশাসনে চাকরি পেতে সহায়তা দান ইত্যাদি নিয়েও কাজ করছেন তিনি।

নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগের নির্বাহী কর্মকর্তার এই পদে এ পর্যন্ত কারাম চৌধুরীসহ তিনজন বাংলাদেশি-আমেরিকান পদোন্নতি পেয়েছেন। এর আগে কারাম চৌধুরীর খালাতো ভাই সিলেটের আরেক সন্তান খন্দকার মোহাম্মদ আবদুল্লাহ ও প্যারোল আহমেদ ক্যাপ্টেন হিসেবে পদোন্নতি পান।

কারাম চৌধুরী বৃহত্তর সিলেটের মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার টিলাগাঁও গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আবদুল মতিন চৌধুরীর একমাত্র ছেলে কারাম চৌধুরী ১৯৯৩ সালে মাত্র ১১ বছর বয়সে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন। লেখাপড়া ও বেড়ে ওঠা নিউইয়র্কেই।

পড়ালেখা শেষে নিউইয়র্কের ফাইন্যান্সিয়াল ডিস্ট্রিক্টে চাকরি করেন। কিন্তু ইচ্ছা ছিল চ্যালেঞ্জিং কোনো পেশায় আসার। আর তাই ২০০৫ সালে যোগ দিলেন নিউইয়র্ক পুলিশের অফিসার পদে। ধাপে ধাপে নানা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে অফিসার থেকে সার্জেন্ট, লেফটেন্যান্ট ও সর্বশেষ ক্যাপ্টেন হলেন।

কারাম চৌধুরী বলেন, পুলিশের চাকরিতে জনসেবার সুযোগ বেশি। সেই সেবার মানসিকতা নিয়েই পুলিশের চাকরি বেছে নেই। এই পদোন্নতিতে এখন আরও সেবা করার সুযোগ বাড়ল। তিনি বলেন, আমি বাংলাদেশি কমিউনিটির জন্য কাজ করতে চাই।

সাত বছর বয়সে বাবাকে হারান কারাম চৌধুরী। স্ত্রী বেগম চৌধুরীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, ক্যাপ্টেন পরীক্ষার আগে একটানা আট মাস আমাকে পড়াশোনা করতে হয়েছে। এই সময়ে একমাত্র ছেলেকে সামলানোসহ সংসারের সব দেখভাল করেছে আমার স্ত্রী। মায়ের দোয়া ও স্ত্রীর সহযোগিতা না পেলে তিনি এ পর্যন্ত আসতে পারতেন না।

এখন নিউইয়র্ক পুলিশে বাংলাদেশিদের সংখ্যা বাড়ছে। বর্তমানে সাড়ে তিন শ পুলিশ কর্মকর্তা রয়েছে এনওয়াইপিডিতে। তাদের মধ্যে তিনজন ক্যাপ্টেন, ১৫ জন লেফটেন্যান্ট, ২৮ জন সার্জেন্ট ও অন্যরা অফিসার পদে কর্মরত।

এ ছাড়া ট্রাফিক বিভাগে ম্যানেজার ও সুপারভাইজারসহ এজেন্ট হিসেবে কর্মরত রয়েছেন আরও সহস্রাধিক। তিনি জানান, অফিসার থেকে ক্যাপ্টেন হতে পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হতে হয়। ক্যাপ্টেন থেকে শীর্ষপদ পর্যন্ত আর কোনো পরীক্ষা নেই। দক্ষতা, যোগ্যতা ও রাজনৈতিক বিবেচনায় ক্যাপ্টেন থেকে যে কেউ পুলিশ কমিশনারও হতে পারেন। দিন দিন এই সাফল্যে নতুনরা পুলিশে যোগ দিতে উৎসাহ পাচ্ছেন।

যুক্তরাষ্ট্রে বেড়ে উঠলেও চিন্তা চেতনা ও মননে কারাম চৌধুরী বাংলাদেশি। অনর্গল বাংলা বলেন। তাদের সন্তানসহ পরিবারের সবাই বাংলা চর্চা করেন বলে জানান তিনি। তাঁর পরিবারের আরও চারজন সদস্য নিউইয়র্ক পুলিশে আছেন বলে জানান কারাম চৌধুরী।

উল্লেখ্য, ৬৩ বছর বয়স পর্যন্ত নিউইয়র্ক পুলিশের চাকরি করা যায়। সে হিসেবে আরও ২৫ বছর চাকরি করতে পারবেন তিনি। সে লক্ষ্য নিয়েই কারাম চৌধুরী স্বপ্ন দেখেন আরও সামনে এগিয়ে যাওয়ার।#

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published.

আরো সংবাদ পড়ুন
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২২ - ২০২৪
Theme Customized By BreakingNews