এইবেলা, কুলাউড়া ::
কুলাউড়া জংশন স্টেশনে কর্মরত রেলওয়ে উর্ধ্বতন উপ-সহকারি প্রকৌশলী (ওয়ার্কস) জুয়েল হোসেন অনিয়ম দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ পন্থায় হাতিয়ে নিচ্ছেন লক্ষ লক্ষ টাকা। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ওয়াকিবহাল। তদন্ত হলেও কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি এই অসাধু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
উর্ধ্বতন উপ-সহকারি প্রকৌশলী (ওয়ার্কস) জুয়েল হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ কুলাউড়া রেলওয়ে স্টেশনের পরিত্যক্ত কোয়ার্টার ভাড়া দেয়া, পরিত্যক্ত কোয়ার্টারের বাসিন্দাদের অর্থের বিনিময়ে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান করা, টাকার বিনিময়ে অবৈধ পানির সংযোগ দেয়া এবং স্টেশন আবাসিক এলাকার মুল্যবান গাছ কেটে বিক্রি করে অর্থ হাতিয়ে নেয়া।
রেলওয়ের একাধিক নির্ভরযোগ্য সুত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, উর্ধ্বতন উপ-সহকারি প্রকৌশলী (ওয়ার্কস) জুয়েল হোসেন কুলাউড়া জংশন স্টেশনে নিজের অপকর্ম পরিচালনার জন্য ক্শমতাসীন দলের সংগঠনের নেতা ও কর্মীদের যোগসাজশে গড়ে তুলেছেন সিন্ডিকেট। এসব সিন্ডিকেটের সহযোগিতায় নিজের অপকর্ম নির্বিঘ্নে চালিয়ে যান।
সুত্র আরও জানায়, কুলাউড়া জংশন স্টেশন আবাসিক এরিয়ায় ৫০টির অধিক পরিত্যক্ত কোয়ার্টার প্রতিটি মাসিক কমপক্ষে ২ হাজার টাকা করে ভাড়া দিয়েছেন। ভাড়া বাবত মাসে এসব বাসা থেকে লক্ষাধিক টাকা উত্তোলন করা হয়। এই টাকা উত্তোলন কাজে নিয়োজিত টিটু নামক রেস্ট হাউজের অস্থায়ী স্টাফ। এছাড়া এসব পরিত্যক্ষ কোয়ার্টারে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান করেন। পরিত্যক্ত কোয়ার্টারসহ প্রায় একশটি কোয়ার্টারে বৈদ্যুতিক হিটার জ্বালানো হয়। শতাধিক বাসা থেকে প্রতি মাসে লক্ষাধিক টাকা অবৈধ বিল উত্তোলন করা হয়। এই বিভাগের ইলেকট্রিক লাইনম্যান রিয়াজুল এই টাকা উত্তোলন করে। অথচ প্রতি মাসে সরকারি কোষাগার থেকে কুলাউড়া স্টেশনে বিদ্যুৎখাতে হাজার হাজার টাকা বিল বিল ভর্তুকি দেয়া হয়।
করোনাভাইরাসে লকডাউনে ট্রেন চলাচল বন্ধ হওয়ার আগে রেলওয়ের উর্ধ্বতন একটি প্রতিনিধিদল কুলাউড়া স্টেশন পরিদর্শণে আসলে রেলওয়ের অবৈধ বৈদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। কিন্তু সেই বিচ্ছিন্ন সংযোগ পুনরায় দিতে গ্রাহকদের কাছে ফের অর্থ দাবি করেন ইলেকট্রিক লাইনম্যান রিয়াজুল। এতে পরিত্যক্ত কোয়ার্টারের বাসিন্দারা ক্ষুব্ধ হয়ে রিয়াজুলের উপর হামলা চালায়। এতে তারা মাথা ফেটে যায়। বিষয়টি জেনেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।
কুলাউড়া স্টেশনের পানির ট্যাঙ্কি থেকে রেলস্টেশনের বিভিন্ন দোকানে ও পরিত্যক্ত বাসাগুলোতে টাকার বিনিময়ে দেয়া দিয়েছেন অবৈধ পানি সংযোগ লাইন। অথচ স্টেশনের বাথরুমে পানি লাইন সংযোগ না থাকায় যাত্রীদের দুর্ভোগে পড়তে হয়।
উর্ধ্বতন উপ-সহকারি প্রকৌশলী (ওয়ার্কস) জুয়েল হোসেনের কর্ম এলাকা শায়েস্তাগঞ্জ স্টেশন হতে ছাতক বাজার রেলস্টেশন পর্যন্ত। কিন্তু তিনি বেশিরভাগ সময় কুলাউড়া স্টেশনে অবস্থান করেন। প্রতিটি স্টেশনে সরেজমিন গিয়ে সিগন্যালিং দেখার দায়িত্ব হলেও রেলওয়ে রিক্রিয়েশন ক্লাবে সবসময় জুয়া খেলতে দেখা যায়। প্রতিটি স্টেশনে সিগন্যাল সচল রাখার জন্য রয়েছে জেনারেটর। এসব জেনারেটরের জন্য রয়েছে তেল বরাদ্ধ। প্রায় আড়াই মাস ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকলেও এসব জেনারেটরের সরবরাহকৃত তেল বিক্রি করে মেইনটেন্যান্স সিগন্যাল (এমএস) হুমায়ুন পাটোয়ারির যোগসাজশে হাতিয়ে নেন টাকা।
এদিকে জুয়েল হোসেনের বিরুদ্ধে আবাসিক এলাকার মুল্যবান গাছ বিক্রি করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রেলকালোনীবাসীর। কুলাউড়ার উত্তর কলোনী থেকে সম্প্রতি একটি বৃহৎ ফলজ কাঠালের গাছ কেটে নেয়ার অভিযোগ করেন। যে গাছে দেড় থেকে দু’শ কাঠাল ফল ধরতো। কাউকে না জানিয়ে সেই প্রাচীন ও বৃহৎ ফলের গাছটি কেটে নেন। জুয়েল হোসেনের বিরুদ্ধে এর আগে কুলাউড়া শিবির রোড থেকে একটি, রেলওয়ে ঈদগাহর সামনে থেকে এবং রানিং রুমের একাধিক গাছ কেটে বিক্রি করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়ারও অভিযোগ রয়েছে।
অভিযোগ প্রসঙ্গে অভিযুক্ত উর্ধ্বতন উপ-সহকারি প্রকৌশলী (ওয়ার্কস) জুয়েল হোসেন জানান, তার উপর আরোপিত অভিযোগগুলো সঠিক নয়। তবে গাছ কাটার ব্যাপারে তিনি জানান, এলাকাবাসীর আবেদনের প্রেক্ষিতে তিনি গাছটি কেটেছেন। গাছটি মরা ও জড়ে পড়ে যাওয়া। এলাকায় অ্যাম্বুলেন্স কিংবা জরুরি প্রয়োজনে কোন যানবাহন প্রবেশ করতে পারে না। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে গাছটি তিনি কেটেছেন।#
Leave a Reply