কমলগঞ্জ প্রতিনিধি ::
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের একটি টিলায় অগ্নিকান্ডের ঘটনায় বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের পক্ষ থেকে ২ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে দুই দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সিদ্ধান্ত করা হয়। টিলায় বন্যপ্রাণীর বিচরন থাকায় আগুন লাগার পর দিগবিদিগ ছুটাছুটি করে অন্যত্র পালাতে শুরু করে নানা ধরণের বন্যপ্রাণী। এ ঘটনায় সরেজমিন তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করতে কাজ শুরু করছে তদন্ত কমিটি। গত শনিবার (২৪ এপ্রিল) দুপুর পৌনে ১টার দিকে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের বেসকারি উন্নয়ন সংস্থা হীড বাংলাদেশের কার্যালয় সংলগ্ন বাঘমারা বন ক্যাম্পের পাশে একটি টিলা থেকে আগুনের ধোয়া দেখে লোকজন তাদের খবর দেন। খবর পেয়ে তারা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌছেন এবং ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেন। বাতাসের কারনে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে যায়। আশে পাশে পানিরও তেমন ব্যবস্থা ছিলো না। তাই আগুন নিয়ন্ত্রনে আনেতে সময় লাগে। প্রায় ৪ একর এলাকা জুড়ে বাশ ও বেত বাগানের ক্ষতি হয়। বিকেল পৌনে ৪টার দিকে তা নিয়ন্ত্রণে আনে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা। বন এলাকার ছোট-বড় লতা-গুল্ম ও গাছ পুড়ে যাওয়ায় জীববৈচিত্র্যের জন্য হুমকির হয়ে দেখা দিয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, বাঘমারা বন ক্যাম্পে বনে দু’টি টিলার বেশ কিছু অংশ আগুনে পুড়ে ছোট-বড় লতা-গুল্ম ও গাছ পুড়ে যায়। বনবিভাগের পক্ষ থেকে ওই এলাকায় বনায়নের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছিল। প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে উঠা গাছের ফাঁকে ফাঁকে বন্যপ্রাণীর খাবার তৈরি হয় এমন সব খাবার জাতীয় গাছ রোপনের জন্য শ্রমিকরা সেখানে কর্মরত ছিলেন। লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান সংলগ্ন বনে হঠাৎ করে সৃষ্ট অগ্নিকান্ডে বন এলাকার ছোট-বড় লতা-গুল্ম ও গাছ পুড়ে যাওয়ায় জীববৈচিত্র্যের জন্য হুমকির হয়ে দেখা দিয়েছে। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, লাউয়াছড়া বনের প্রায় চার একর জায়গা জুড়ে পশুপাখির নিরাপদ আবাসস্থল এবং গাছপালাসহ অনেক পাখির বাসা পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। স্থানীয় কয়েকজন জানান, এর আগেও লাউয়াছড়া বনে আগুন লেগেছে। ঘন ঘন বনে আগুন লাগার উৎস অবিলম্বে খোঁজে বের করা হউক।
স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, এখানে কিছু অবৈধ দখলদার আছেন। ধারণা করা হচ্ছে, প্রচ- খরতাপের সুযোগ কাজে লাগিয়ে এসব অবৈধ দখলদারেরাই আগুন লাগাতে পারেন। দেড় বছর আগেও এই বনে আগুন লেগেছিল।
বাংলাদেশ পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (বাপা) সিলেট বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক আবদুল করিম বলেন, প্রায় দেড় বছর আগে এবারের ঘটনাস্থলের কাছে লাউয়াছড়া বনে আগুন লেগেছিল। ওই ঘটনার কোনো তদন্ত হয়নি। এখন আবার আগুন লেগে বনের ক্ষতি হলো। এর দায় বন বিভাগকে নিতে হবে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বন বিভাগের খামখেয়ালির জন্য এখানে বারবার আগুনের ঘটনা ঘটছে। এর ফলে শত শত একর বনভূমি পুড়ে ছাই হয়ে যায়। কিন্তু বন বিভাগের পক্ষে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়ায় বারবার আগুনের ঘটনা ঘটছে।
এ ঘটনায় বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের পক্ষ থেকে দুই সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করেছে। কমিটির সদস্য বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা মীর্জা মেহেদী সরওয়ার ও বন মামলা পরিচালক জুলহাস উদ্দিন। দুই দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। এদিকে সপ্তাহ খানেক আগে উদ্যানের ফুলবাড়ি চা বাগান মুখেও অল্প পরিমাণ বনে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে।
লাউয়াছড়া বনবিট কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিলে বিষয়টি জানা যাবে।
বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা মির্জা মেহেদি সরোয়ার বলেন, অগ্নিকা-ের কারণ উদঘাটনে আমরা এরইমধ্যে তদন্ত শুরু করে দিয়েছে। দুইদিনের মধ্যে রিপোর্ট জমা দেবো। তদন্ত কাজ চলছে। তদন্ত শেষে বিস্তারিত বলা যাবে।
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি মাঠে কাজ করছে। প্রকৃতভাবে কারা দায়ী তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন আসার পর জানা যাবে। সে অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উল্লেখ্য, মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত ১২৫০ হেক্টর জমি নিয়ে লাউয়াছড়া সংরক্ষিত বনাঞ্চল। ১৯৯৬ সালে সরকার এটিকে জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করা হয়। উদ্ভিদ আর প্রাণীবৈচিত্র্যের আঁধার এই বন বিভিন্ন বিরল ও বিপন্ন প্রজাতির প্রাণীর আবাসস্থল হিসেবে পরিচিত। বন বিভাগের হিসেব মতে, ২০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৫৯ প্রজাতির সরীসৃপ (৩৯ প্রজাতির সাপ, ১৮ প্রজাতির লিজার্ড, ২ প্রজাতির কচ্ছপ), ২২ প্রজাতির উভচর, ২৪৬ প্রজাতির পাখি ও অসংখ্য কীট-পতঙ্গ রয়েছে। এই বনে বিরল প্রজাতির উল্লুক, মুখপোড়া হনুমান, চশমাপড়া হনুমানও দেখতে পাওয়া যায়। বিলুপ্তপ্রায় উল্লুকের জন্য এ বন বিখ্যাত। উল্লুক ছাড়াও এখানে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির দুর্লভ জীবজন্তু, কীটপতঙ্গ এবং উদ্ভিদ। নিরক্ষীয় অঞ্চলের চিরহরিৎ বর্ষাবন বা রেইন ফরেষ্টের মতো এখানে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। সুর্যের আলোর জন্য প্রতিযোগিতা করে এ বনের গাছপালা খুব উঁচু হয়ে থাকে, এবং অনেক ওপরে ডালপালা ছড়িয়ে চাঁদোয়ার মত সৃষ্টি করে। এই বন এতই ঘন যে মাটিতে সুর্যের আলো পড়েনা বললেই চলে।#
caller_get_posts
is deprecated. Use ignore_sticky_posts
instead. in /home/eibela12/public_html/wp-includes/functions.php on line 6085caller_get_posts
is deprecated. Use ignore_sticky_posts
instead. in /home/eibela12/public_html/wp-includes/functions.php on line 6085
Leave a Reply