কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি ::
আধিপত্য বিস্তারের জের ধরে চা বাগানের দু’পক্ষের দু’দফা সংঘর্ষে নারীসহ ৬ জন আহত হয়েছেন। আহতদের কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, মৌলভীবাজার জেলা সদর ও সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হয়েছে। গত সোমবার দিবাগত রাত ১০টায় মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী পাত্রখোলা চা বাগানে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় মঙ্গলবার সকাল থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত চা বাগানে কাজ বন্ধ রাখে চা শ্রমিকরা। এ সময় বাগানের কারখানার প্রধান ফটকের সামনে বিক্ষোভ করে পরে চা শ্রমিকদের একাংশ।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ন্যাশনাল টি কোম্পানীর (এনটিসি) মালিকানাধীন পাত্রখোলা চা বাগান পঞ্চায়েত কমিটির প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক শ্রমিক সর্দার মোবারক হোসেন ও বর্তমান কমিটির সভাপতি দেবাশীষ চক্রবর্তী শিপনের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দীর্ঘদিনের বিরোধ চলমান রয়েছে। এর জের ধরে সোমবার রাতে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়রা জানান, এক নারী চা শ্রমিকের ঘরের জন্য টিন দিতে বাগানের পঞ্চায়েতের প্রাক্তন সম্পাদক মোবারক হোসেন স্টোরকিপার অমর মিয়াকে বলেন। বিষয়টি দেবাশীষ চক্রবতী শিপন জানতে পারলে মোবারক ও শিপনের মধ্যে ফোনে কথাকাটাকাটি হয়। পরে মোবারক হোসেনের বাসার সামনে দু’পক্ষের সংঘর্ষ হয়। দেশীয় লাঠিসোটা নিয়ে হামলার এ সময়ে বাগানের পোস্টঅফিস লাইন এলাকায় মোবারক হোসেন (৪৮), তাঁর স্ত্রী আছমা বেগম (৪০), মেয়ে লুৎফুন্নাহার আঁখি (১৭) ও চা শ্রমিক জীবন উরাং (২০) আহত হন। পরে দ্বিতীয় দফায় বাজার লাইনে সংঘর্ষে কিষান অলমিক (২২), মধু কর্ম্মকার (৪৬) আহত হন। গুরুতর আহত মধু কর্ম্মকারকে সিলেট এমএজি ওসমানী হাসপাতালে ও কিষান অলমিককে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অন্যরা কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করেন। এ ঘটনায় মঙ্গলবার শ্রমিকরা বাগানে কোন কাজ করেনি।
এদিকে পাত্রখোলা চা বাগানে হামলা পাল্টা হামলার ঘটনায় দুপক্ষের শ্রমিকদের মধ্যে উত্তেজনার সংবাদ পেয়ে কমলগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) সোহেল রানার নেতৃত্বে মঙ্গলবার দুপুর ১টায় একদল পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। এ সময় শ্রম অধিদপÍর, শ্রীমঙ্গল এর ডেপুটি ডিরেক্টর মোহাম্মদ নাহিদুল ইসলাম, পাত্রখোলা চা বাগান ব্যবস্থাপক মো. শামসুল ইসলাম সেলিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আগামী ২৯ জুলাই বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় এ ঘটনায় উভয় পক্ষকে নিয়ে একটি বৈঠকের মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানের আশ্বাস প্রদান করে শ্রমিকদের কাজে ফিরে যেতে অনুরোধ করেন।
মোবারক হোসেন বলেন, দেবাশীষ চক্রবতী শিপন গ্রুপের সদস্যরা আমার বসতবাড়িতে এসে হামলা করে টিনের বাউন্ডারী ভেঙ্গে আমাকে ও আমার স্ত্রী, মেয়েকে পিটিয়ে আহত করেছে এবং নগদ অর্থ ও স্বর্ণালংকার লুট করে নেয়।
পাত্রখোলা চা বাগান পঞ্চায়েত সভাপতি দেবাশীষ চক্রবতী শিপন শিপন চক্রবর্তী বলেন, মোবাইল ফোনে হুমকি দিয়ে মোবারক হোসেন ও তার দলবল নিয়ে সোমবার রাত পৌনে ১২টায় প্রথমে আমার বাড়িতে এসে হামলা করে দু’জনকে গুরুতর জখম করেছে। এর প্রতিবাদে জখমকারীর স্বজনরা পরে পাল্টা হামলা চালায়।
পাত্রখোলা চা বাগান ব্যবস্থাপক মো. শামসুল ইসলাম সেলিম জানান, আসলে তাদের দীর্ঘদিনের এই সমস্যা। কিছুদিন আগেও তাদের মধ্যে এভাবে ঘটনা ঘটে। আগামী ২৯ জুলাই বৃহস্পতিবার এ ঘটনায় উভয় পক্ষকে নিয়ে একটি বৈঠকে ঘটনাটির সমাধান করা হবে। তবে মঙ্গলবার বিকেলে শ্রমিকরা বাগানের কাজে যোগ দেয়।#
Leave a Reply