মোহাম্মদ ফয়সাল মিয়া: ইদানিং একটা বিষয় খুবই স্পষ্ট যে, বিশেষ করে আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে যে কোন একটা বিষয় সামনে আসার সাথে সাথে মিডিয়া যেভাবে এটাকে উপস্থাপন করে এবং সস্তা সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাবে সাধারণ মানুষেরা যেভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে তা অস্বাভাবিক এবং এটা সত্যি ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার পথে একটি বিরাট বাঁধা।
আমরা সবাই চাই- ন্যায়বিচার নিশ্চিত হোক কিন্তু আমরাতো কারো জন্য অপেক্ষা করি না। কাউকে কোনো অভিযোগে গ্রেফতার করা মানেই তাকে অপরাধী ট্যাগ লাগিয়ে দেয়া হয়। বিচারে তার অপরাধ প্রমাণ হবার আগে যেভাবে তাকে নিয়ে যে অসুস্থ চর্চা হয়, তাতেই তার আর নিরপরাধ প্রমান হবার আগেই বেঁচে থাকার স্বাদটাই চলে যায়।
কারো বিপক্ষে একটা অভিযোগ উঠলেই সে অপরাধী নয়। অপরাধবিজ্ঞানটা বাংলার ২০ কোটি মানুষ পড়েন নি, আমরা সবাই এই বিষয়ে বিশেষ জ্ঞানীও নই। যাদের এই বিষয়ে বিশেষ জ্ঞান ও প্রশিক্ষন রয়েছে তাদের কে বলতে দিন, ঠাণ্ডা মাথায় তদন্ত করে বিচার বুদ্ধি সম্পন্ন সিদ্ধান্ত নিতে দিন। এর পরে বিচার বিভাগ রয়েছে, রাষ্ট্রের একটা বড় স্তম্ভ, আমাদের (সাধারণ জনগনের) শেষ আশ্রয়স্থল, তাদেরকে বিচার করতে দিন।
প্লিজ, ভোর ৫ টায় ঘুম থেকে উঠে একটা খবর দেখে এবং খবরের মুখরোচক উপস্থাপনা শুনে ৫ টা ২ মিনিটে জাজমেন্ট দেয়া বন্ধ করেন। আপনি বুঝতেই পারছেন না আপনার এই অবিবেচনা প্রসূত কমেন্টটা হলো এরকম এক কোটি অবিবেচনা প্রসূত কমেন্টগুলোর একটি যা তদন্তরত, বিচারে রত বিচারকের মনের উপর প্রভাব ফেলছে, আর সাধারণ মানুষগুলোতো এই প্রমানবিহীন গালগল্প শুনে ধরেই নেয় এ এটা, ও ঐটা । প্লিজ বন্ধ করুন। and don’t be judgmental in twinkle of seconds.
এবার একটু দয়াকরে পরচর্চা বন্ধ করুন। ঘুম থেকে উঠে যদি কোনো কাজ না থাকে তাহলে পরিবারের প্রতি যে দায়িত্বগুলোর বছরের পর বছর পরচর্চায় ব্যস্ত থাকায় মনোযোগ দিতে পারেন নাই, সেগুলোতে মনোয়োগী হোন। আর দয়া করে যেটা আপনার কাজ না , সেটা যার কাজ তাকে করতে দিন।
ডাক্তার সাহেব রোগীকে প্রেসক্রিপশন দেয়ার কথা, এখন আপনি আমি যারা ডাক্তার না তারা যদি প্রেসক্রিপশন দেয়া শুরু করি, তাহলে অবস্থাটা কি হবে চিন্তা করতে পারেন। কারন ছাড়াই, যোগ্যতা ছাড়াই প্রেসক্রিপশন দেয়া করি বন্ধ করি , ভারসাম্য সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখি।
আর এভাবেই চলতে থাকলে এবং এই স্রোতে গা ভাসালে একদিন সেই স্রোতের চোরাবালিতে আপনিও আটকে যাবেন, পার পাবেন না। একটা মানুষ তিলে তিলে তার ক্যারিয়ার গড়ে, তাকে অনেক কিছুর মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। হঠাৎ করে যদি একটি অভিযোগ উঠে কারো উপর, এবং কোন প্রকার বাছ বিচার ছাড়াই যদি সবাই হুড়মোড় করে ঝাঁপিয়ে পড়ে তাকে এবং তার চরিত্রকে কালিমা দেয়ার জন্য তাহলে প্রশাসন, বিচার ব্যবস্থা কি করবে। চিন্তা করেন এইরকম সিচুয়েশনে ঐ ফ্যামিলি গুলোর মানসিক অবস্থার কথা। চূড়ান্ত বিচার করার আগেই আমরা রায় দিয়ে দিচ্ছি। এই ফাঁদে অচিরেই আপনাকে, আমাকে পড়তে হতে পারে, মজা লুটার মানসিক রোগ থেকে বেরিয়ে আসুন। নিজের জন্য, পরিবারের জন্য, সমাজের জন্য, পরবর্তী প্রজন্মের জন্য একটা বসবাসযোগ্য সমাজ গড়ে তুলতে ভূমিকা রাখুন।
মনে রাখবেন একজন বেশ্যা ও রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা পাবে, তার ন্যায় বিচার পাবার অধিকার রয়েছে। আপনি তাকে সম্মান করেন না করেন, সংবিধান তাকে সুরক্ষা দিবে এবং শোধরাবেও।
অতএব, নিজের দিকে আঙ্গুল রাখুন এবং অবশ্যই নিজের চরকায় তেল দিন।
লেখক: অ্যাডভোকেট জজ কোর্ট, ঢাকা ও প্রধান সম্পাদক, সাপ্তাহিক আমার কুলাউড়া।
Leave a Reply