এইবেলা, কুলাউড়া:: মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার শরীফপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ ভূইগাঁও (মানগাঁও) গ্রামে জমি-সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে প্রতিপক্ষের সশস্ত্র হামলায় ছেলেকে রক্ষা করতে আহত হয়েছেন মা। গত ৩১ জুলাই শনিবার দুপুরে ঘটনাটি ঘটেছে এবং গত ৫ আগস্ট এ ব্যপারে ৭ জনকে আসামী করে কুলাউড়া থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। এ মামলায় ১৭ দিনেও পুলিশ কোন আসামীকে গ্রেফতার করতে পারেনি। অপরদিকে প্রতিপক্ষের লোকেরা থানায় তাদের বিরুদ্ধে একটি হয়রানীমূলক মামলা দায়ের করেছে বলে অভিযোগ করছেন বাদীপক্ষ।
থানায় দায়েরকৃত মামলা সুত্র ও জমির মলিক মখদ্দছ আলী জানান, কুলাউড়া উপজেলার শরীফপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ ভূইগাঁও (মানগাঁও) গ্রামে জমি-সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে জমির মালিকানা দাবি করে আমাদের পাশ্ববর্তী বাসিন্দা মজম্মিল আলী ও আকমল আলীর নেতৃত্বে ৬/৭ জন লোক সন্ত্রাসী কায়দার ধারালো দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। হামলাকারীরা জমি দখল করে হালচাষ করার জন্য চেষ্টা চালায়। এ সময় বাধা দিতে গেলে সন্ত্রাসীরা আমি ও আমার ফুফুত্ব ভাই রুবেলের ওপর হামলা চালায়। হামলাকারীদের বাঁধা দিতে গেলে আমার ফুফু রেজিয়া বেগম (৪৫) কে শ্লীলতাহানীর চেষ্টা করে হামলা চালিয়ে মাথায় আঘাত করে ডান হাত ভেঙ্গে দেয় হামলাকারীরা। এ সময় ৩০ হাজার টাকার স্বর্ণালংবার লুটে নেয় হামলাকারীরা। পরে আহত অবস্থায় তাকে প্রথমে কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় মখদ্দছ আলীর ফুফাতো ভাই মো: মোতাহের হোসেন বাদী হয়ে গত ৫ আগস্ট ৭ জনকে আসামী করে কুলাউড়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় ১৭ দিনেও পুলিশ কোন আসামীকে গ্রেফতার করতে পারেনি। উল্টো প্রতিপক্ষের লোকেরা আমাদের মামলা করার দুদিন পর আমাদের উপর মিথ্যা ও হয়রানীমুলক মামলা দায়ের করেছে। এই মামলায় প্রতিপক্ষের আকমল আলী (৩৫) কে আহত সাজিয়ে টিলাগাঁও ইউপির নয়াবাজারে স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক আপ্তাব আলীর কাছে নিয়ে যায়। আপ্তাব আলী প্রাথমিক চিকিৎসা দিলেও আকমল আলীর সঙ্গীরা জোর করে মাথায় দুটি সেলাই দেয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করলে তিনি সেলাই দেন। পরে মামলার সুবিধার জন্য কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আকমল আলীকে ভর্তি করা হয়।
এ ব্যাপারে আলাপকালে নয়াবাজার এলাকার পল্লী চিকিৎসক আপ্তাব আলী বলেন, আকমল আলী দুর্ঘটনায় আহত হয়েছে বলে আমার কাছে নিয়ে আসলে আমি প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা দেই। পরে রোগীর স্বজনদের চাপে রোগীকে দুটি সেলাই দিয়েছি। পুলিশও আমার বক্তব্য গ্রহণ করেছে।
আলাপকালে মখদ্দছ আলী আরও বলেন, আকমল আলী ও ইয়াকুব আলীর সঙ্গে জমির মালিকানা নিয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য ও চেয়ারম্যানদের নিকট বিচার রয়েছে। মখদ্দছ আলী আরও বলেন, এ জমির খারিজ, প্রিন্ট ও মাঠ ফরছাসহ দলিল আমার নামে রয়েছে। দখলদার কোন ডকুমেন্ট দেখাইতে পারলে এ জমি তিনি ছেড়ে দিবেন বলে জানান। এ ঘটনায় আহত রেজিয়া বেগম (৪৫) বলেন, হামলায় তিনির ছেলে রুবেল মিয়াকে আক্রমন করে মারধরে সময় বাঁধা দিতে গেলে আমার ওপর হামলা চালিয়ে হামলাকারীরা ডান হাত ও মাথায় আঘাত করে আহত করেন।
অপরদিকে গত ৭ আগস্ট রেলী খানম বাদী হয়ে মখদ্দছ আলী, রুবেল মিয়াসহ ৭ জনের নামে কুলাউড়া থানায় পাল্টা একটি মামলা দায়ের করেছেন। রেলী খানম জানান, প্রতিপক্ষের লোকের সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে আমাদের আত্মীয় আকমল আলী ও দিলারা বেগমকে আহত করায় আমরা থানায় মামলা করেছি।
দুটি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কুলাউড়া থানার এসআই মো. মহসীন তালুকদার বলেন, এ ঘটনায় কুলাউড়া থানায় পৃথক দুটি মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। মামলা দুটি তদন্তাধীন আছে। একটি মামলায় ৬ জন আসামী আদালত থেকে জামিনে আছেন।
কুলাউড়া থানার ওসি বিনয় ভূষণ রায় ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এ ঘটনায় দু’পক্ষের লিখিত অভিযোগ মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছে। মামলা দুটি তদন্তাধীন আছে।
এইবেলা/কুলাউড়া
Leave a Reply