কমলগঞ্জে ছাত্র পড়িয়ে তিন দশক পার করলেন নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষক ঝুলন চক্রবর্তী কমলগঞ্জে ছাত্র পড়িয়ে তিন দশক পার করলেন নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষক ঝুলন চক্রবর্তী – এইবেলা
  1. admin@eibela.net : admin :
রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৫০ পূর্বাহ্ন

কমলগঞ্জে ছাত্র পড়িয়ে তিন দশক পার করলেন নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষক ঝুলন চক্রবর্তী

  • শুক্রবার, ২৭ আগস্ট, ২০২১

কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি:: মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে ছাত্র পড়িয়ে তিন দশক পার করলেন নিবেদিতপ্রাণ সাদামনের মানুষ শিক্ষক ঝুলন চক্রবর্তী। একজন অদম্য সাহসী মধ্যবয়সী যুবক তার মেধাকে বিলিয়ে দিয়ে যাচ্ছেন আগামী প্রজন্মকে সঠিক মানুষ হিসাবে গড়ে তোলতে। সেই মানুষ গড়ার কারিগরটি আর কেউ নন মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ কালীবাড়ীর ঝুলন চক্রবর্তী। গত দেড় বছর ধরে করোনা মহামারির লকডাউনের কারণে তাঁর প্রাইভেট পড়ানো বন্ধ রয়েছে। তিনি প্রাইভেট টিউশনির উপার্জিত অর্থ দিয়ে সমাজের সুবিধাবঞ্চিত দরিদ্র লোকদের নানাভাবে সাহায্য সহযোগিতা প্রদান করছেন। তিনি বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডের সাথে ওতোপ্রতোভাবে জড়িত রয়েছেন।

এলাকায় তিনি ছোটদের ঝুলন স্যার হিসেবেই পরিচিত। মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ পৌরসভার পানিশালা গ্রামে নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম নেওয়া ঝুলন চক্রবর্তী ১৯৮৭ সালে এসএসসি পাস করেন। এরপর থেকে ওই এলাকায় ছোটদের টিউশনি পড়ানো শুরু করেন। এভাবে টিউশনির টাকা দিয়ে লেখাপড়া করে ১৯৯১ সালে বিএসএস করেন। তিনি কমলগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে খন্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে কিছুদিন কর্মরত ছিলেন।

বিগত তিন দশক ধরে শিক্ষক ঝুলন চক্রবর্তী কোচিং-টিউশনি করে কোনো রকম জীবন যাপন করে আসছিলেন। কিন্তু মহামারী করোনাভাইরাসের শুরু থেকে কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকায় কর্মহীন হয়ে দিন কাটাচ্ছেন। বর্তমানে বয়স ও শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি আর এ পেশা চালিয়ে যেতে পারছেন না। শিক্ষক হিসেবে সমাজের শ্রদ্ধার পাত্র হওয়ায় কারো কাছে হাত পাততে না পারায় অনেকটাই মানবেতর জীবনযাপন করছেন তিনি। তাই সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা চেয়েছেন শিক্ষকের ছাত্র-ছাত্রী ও শুভানুধ্যায়ীরা।

ঝুলন চক্রবর্তী সকলের কাছে ঝুলন স্যার নামেই সর্বাধিক পরিচিত। ¯œাতক ডিগ্রি থাকা সত্বেও তিনি সরকারি বা বেসরকারি কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চাকরি গ্রহণ না করেও শিক্ষাকে জীবনের ব্রত হিসেবে ছাত্র পড়ানোকে জীবনের সঙ্গী করেছেন। অদম্য মেধাবী এই ব্যক্তি ছাত্র জীবনে লেখাপড়ার ফাঁকে বাড়তি উপার্জনের জন্য গৃহ শিক্ষকের কাজ করতেন। কিন্তু তিনি কি তখন জানতেন একদিন এটাই হয়ে উঠবে তার একমাত্র নেশা ও পেশা। অবশ্য তিনি শিক্ষা জীবন শেষে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যুক্ত হবার একবার ইচ্ছা পোষণ করে ১৮০০ প্রতিযোগীর মধ্যে মেধা তালিকায় উত্তীর্ণ হয়েও পরে কেন চাকরিতে যুক্ত হওয়ার সুযোগ পেলেন না, তা আর তলিয়ে দেখতে যাননি। জীবিকার তাগিদে তিনি বেঁছে নেন শিক্ষকতা পেশাকে।

ছাত্র পড়ানোই যেহেতু তার লক্ষ্য তখন তিনি আর ডান বাম না চেয়ে এ কাজেই নিবিষ্ট হয়ে পড়েন। নিজ বাসভবনেই শুরু করেন ছাত্র পড়ানোর কাজটি। কমলগঞ্জ পৌর এলাকার পানিশালা গ্রামে বসবাসকারী মানুষ গড়ার কারিগর ঝুলন চক্রবর্তী ১৯৮৭ সনে নিজ বাড়ির আঙ্গিনায় ৩/৪ জন ছাত্রকে নিয়ে “চক্রবর্তী প্রাইভেট কোচিং সেন্টার’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান চালু করেন। তার নিরলস চেষ্টায় ছাত্রদের সকলেই যখন এসএসসি পরীক্ষায় লেটার মার্কসহ প্রথম বিভাগ পেলো। তখন তার সুনাম দ্রুত ছড়িয়ে পড়লো চতুর্দিকে। এরপর আর তাঁকে পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি।

রোজগারের বিষয়টাকে গুরুত্ব না দিয়ে শিক্ষাদানের বিষয়টিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়ার কারণে প্রতিবছরই তার কোচিং সেন্টারে শিক্ষা নেয়া ছাত্রছাত্রী পরীক্ষায় ভাল ফলাফল করছে। এখানে শিক্ষা নেয়া ছাত্রদের অনেকেই ডাক্তার, ব্যারিস্টার, অধ্যাপক, শিক্ষকসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন।

জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষায় প্রতিবছর পাসের হার শতভাগ হওয়ায় উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছিল ছাত্র সংখ্যা। তাঁর এই কোচিং সেন্টারের ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল প্রায় ২০০ জন। প্রতি ব্যাচে ১৫ জন করে ছাত্রকে শিক্ষাদান করানো হয়ছিল। প্রধান পরিচালক ঝুলন চক্রবর্তী ছাড়াও আরও ৪ জন মেধাবী শিক্ষক নিয়মিত পাঠদান করাতেন শিক্ষার্থীদের। ৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত তার ছাত্র তালিকায় এ যেন স্কুলের মতো ১৫/২০ জনের মতো নিয়মিত ৩টি ব্যাচে ছাত্র ছাত্রী পড়ালেখা করে থাকতো। প্রতিটি ব্যাচে ২ ঘণ্টা করে সময় ছিল। এক্ষেত্রে তিনি বেশ কিছু নিজস্ব পদ্ধতি অবলম্বন করতেন। ছাত্ররা তা মেনে চলত। ছাত্র ছাত্রীর নিয়মিত উপস্থিতি ও সময়জ্ঞান মেনে চলা, পড়া আদায়ে দায়িত্বশীল থাকা, পাঠদানে ছাত্র-শিক্ষক ডায়েরী অনুসরণ করে চলা, ডায়েরীর বিষয়াদি সময় তারিখ নির্দিষ্ট করে উল্লেখ করা, স্কুলে ও বাড়িতে ছাত্র ছাত্রী নিয়মিত পড়ালেখা করে কিনা নজরদারি রাখা, অভিভাবকদের এসব বিষয়ে সময়ে সময়ে অবহিত করা, ঘন ঘন পরীক্ষা নেয়া, সকল বিষয় পাঠের অন্তর্ভুক্ত রাখা, ছাত্রদের পাঠদানে কোন অবহেলা শৈথল্য প্রশয় না দেয়া ও ছাত্রের চলাফেরা, আচার আচরণ পাঠের অন্তর্ভুক্ত করা।

ঝুলন চক্রবর্তী যেমন নিয়মের ভেতর থাকতেন, তেমনি তার কোচিং সেন্টারে ছাত্র ছাত্রীদের এসব শৃংখলা মেনে চলতো। এ জন্য দেখা গেছে অভিভাবক ছাত্ররা তার প্রতি আকৃষ্ট। এখানে ছাত্র ছাত্রী এক বছরের নিচে পড়ত না। এজন্য অনেকে ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম পর্যন্ত এক নাগাড়ে পড়েছে এমনও উদাহরণ আছে। ফলাফলের ক্ষেত্রে কেউ ফেল করছে এমন নজির নেই। ভাল রেজাল্ট নিয়েই উত্তীর্ণ হতো। তিনি ছাত্র ছাত্রীদের কাছ থেকে মুখস্ত পাঠ আদায়ের চেয়ে খাতায় লিখে দিয়ে পড়া আদায় ও ঘন ঘন পরীক্ষা নিতেন। তিনি নোট বই নয়, মূল বই থেকে ছাত্র ছাত্রীদের পড়া আদায়ে উৎসাহিত করতেন। তবে তিনি জানান, নোট বই এর বিশাল দাপট উপেক্ষা করে চলা কঠিন। সরকার এ ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করেও পুরো মাত্রায় তা বন্ধ হয়ে যায়নি।

শিক্ষক ঝুলন চক্রবর্তী মনে করতেন, এটা নিছক কোন কোচিং সেন্টার নয়। তিনি বছরে অন্তত একবার নিজ খরচে ছাত্র ছাত্রীদের নিয়ে শিক্ষা সফর করাতেন। এছাড়া তার প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী ছাত্র ছাত্রীদের কাগজ কলম ইত্যাদি নিজ খরচে সরবরাহ করতেন। এজন্য কোন ফি দিতে হত না। তিনি এ পেশায় থেকে কোন সরকারি বা বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবীর মতো নন; এ বোধ তাকে বিক্ষত করত না। তিনি শিক্ষকের মতো দিনরাত এ কাজে লেগে থাকতেন। তিনি বিশেষ কোনো পেশায় আছেন কি নেই, এই ভাবনা তাকে পীড়িত করত না। তিনি শুণ্য নন। স্ব-নিয়োজিতভাবে জীবনের ঠিকানা তৈরী করেছেন। তিনি ছাত্রদের মাঝে বেঁচে আছেন তাতেই তাঁর আনন্দ। এটাই তাঁর ব্রত। প্রতিদিন তিনি বিভিন্ন ব্যাচে প্রায় ২০০ জন ছাত্র ছাত্রীকে নিয়মিত পড়াতেন। প্রতিষ্ঠানটির সুনাম অক্ষুন্ন রাখতেও তার সহযোগী শিক্ষকদের প্রচেষ্টাও কোন অংশে কম ছিল না। প্রচার নয়, কাজেই বিশ্বাসী এই নির্মম বাস্তবতাকে বুকে লালন করে নিরলসভাবে কাজ করে যাওয়ার কারণে তিল তিল করে গড়ে উঠা তার এই প্রতিষ্ঠানটি হয়ে উঠেছিল কমলগঞ্জের শিক্ষা বিস্তারে একটি আলোকবর্তিকা হিসেবে। তাছাড়া মেধাবী দরিদ্র শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে পাঠদান করাতেন।

সর্বোপরি একটা নির্মল আনন্দ, সম্মান, শ্রদ্ধা ছাত্র অভিভাবকদের মিলে পারস্পরিক প্রীতির সম্পর্ক যা ৩৫ বছর ধরে গড়ে উঠেছে তা টাকা-পয়সার বিবেচনায় দেখা যায় না। এছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সাথে নিবিড়ভাবে জড়িত রয়েছেন।
এই প্রাপ্তি অনেক মূল্যবান। বয়সের হিসাবে ঝুলন চক্রবর্তী ৫২ বছরে পা রেখেছেন। বয়স ও অসুস্থতার কারণে তিনি এখন আর এ মহান পেশাটি ধরে রাখতে পারছেন না। তাই মানুষ গড়ার মহান কারিগর খ্যাতনামা শিক্ষক ঝুলন চক্রবর্তীর পাশে দাঁড়াতে সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন বলে মনে করছেন ছাত্র-ছাত্রী, অভিভাবক ও এলাকাবাসী।

সংসার জীবনে তিনি স্ত্রী ও ২ কন্যা সন্তানের জনক। স্ত্রী রুনা চক্রবর্তী সরকারি চাকুরিজীবী। তিনি বাংলাদেশ পুলিশ বিভাগে কর্মরত আছেন।
এইবেলা/পিআরডিএন

কমলগঞ্জে ছাত্র পড়িয়ে তিন দশক পার করলেন নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষক ঝুলন চক্রবর্তী
কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি:: মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে ছাত্র পড়িয়ে তিন দশক পার করলেন নিবেদিতপ্রাণ সাদামনের মানুষ শিক্ষক ঝুলন চক্রবর্তী। একজন অদম্য সাহসী মধ্যবয়সী যুবক তার মেধাকে বিলিয়ে দিয়ে যাচ্ছেন আগামী প্রজন্মকে সঠিক মানুষ হিসাবে গড়ে তোলতে। সেই মানুষ গড়ার কারিগরটি আর কেউ নন মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ কালীবাড়ীর ঝুলন চক্রবর্তী। গত দেড় বছর ধরে করোনা মহামারির লকডাউনের কারণে তাঁর প্রাইভেট পড়ানো বন্ধ রয়েছে। তিনি প্রাইভেট টিউশনির উপার্জিত অর্থ দিয়ে সমাজের সুবিধাবঞ্চিত দরিদ্র লোকদের নানাভাবে সাহায্য সহযোগিতা প্রদান করছেন। তিনি বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডের সাথে ওতোপ্রতোভাবে জড়িত রয়েছেন।

এলাকায় তিনি ছোটদের ঝুলন স্যার হিসেবেই পরিচিত। মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ পৌরসভার পানিশালা গ্রামে নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম নেওয়া ঝুলন চক্রবর্তী ১৯৮৭ সালে এসএসসি পাস করেন। এরপর থেকে ওই এলাকায় ছোটদের টিউশনি পড়ানো শুরু করেন। এভাবে টিউশনির টাকা দিয়ে লেখাপড়া করে ১৯৯১ সালে বিএসএস করেন। তিনি কমলগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে খন্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে কিছুদিন কর্মরত ছিলেন।

বিগত তিন দশক ধরে শিক্ষক ঝুলন চক্রবর্তী কোচিং-টিউশনি করে কোনো রকম জীবন যাপন করে আসছিলেন। কিন্তু মহামারী করোনাভাইরাসের শুরু থেকে কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকায় কর্মহীন হয়ে দিন কাটাচ্ছেন। বর্তমানে বয়স ও শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি আর এ পেশা চালিয়ে যেতে পারছেন না। শিক্ষক হিসেবে সমাজের শ্রদ্ধার পাত্র হওয়ায় কারো কাছে হাত পাততে না পারায় অনেকটাই মানবেতর জীবনযাপন করছেন তিনি। তাই সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা চেয়েছেন শিক্ষকের ছাত্র-ছাত্রী ও শুভানুধ্যায়ীরা।

ঝুলন চক্রবর্তী সকলের কাছে ঝুলন স্যার নামেই সর্বাধিক পরিচিত। ¯œাতক ডিগ্রি থাকা সত্বেও তিনি সরকারি বা বেসরকারি কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চাকরি গ্রহণ না করেও শিক্ষাকে জীবনের ব্রত হিসেবে ছাত্র পড়ানোকে জীবনের সঙ্গী করেছেন। অদম্য মেধাবী এই ব্যক্তি ছাত্র জীবনে লেখাপড়ার ফাঁকে বাড়তি উপার্জনের জন্য গৃহ শিক্ষকের কাজ করতেন। কিন্তু তিনি কি তখন জানতেন একদিন এটাই হয়ে উঠবে তার একমাত্র নেশা ও পেশা। অবশ্য তিনি শিক্ষা জীবন শেষে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যুক্ত হবার একবার ইচ্ছা পোষণ করে ১৮০০ প্রতিযোগীর মধ্যে মেধা তালিকায় উত্তীর্ণ হয়েও পরে কেন চাকরিতে যুক্ত হওয়ার সুযোগ পেলেন না, তা আর তলিয়ে দেখতে যাননি। জীবিকার তাগিদে তিনি বেঁছে নেন শিক্ষকতা পেশাকে।

ছাত্র পড়ানোই যেহেতু তার লক্ষ্য তখন তিনি আর ডান বাম না চেয়ে এ কাজেই নিবিষ্ট হয়ে পড়েন। নিজ বাসভবনেই শুরু করেন ছাত্র পড়ানোর কাজটি। কমলগঞ্জ পৌর এলাকার পানিশালা গ্রামে বসবাসকারী মানুষ গড়ার কারিগর ঝুলন চক্রবর্তী ১৯৮৭ সনে নিজ বাড়ির আঙ্গিনায় ৩/৪ জন ছাত্রকে নিয়ে “চক্রবর্তী প্রাইভেট কোচিং সেন্টার’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান চালু করেন। তার নিরলস চেষ্টায় ছাত্রদের সকলেই যখন এসএসসি পরীক্ষায় লেটার মার্কসহ প্রথম বিভাগ পেলো। তখন তার সুনাম দ্রুত ছড়িয়ে পড়লো চতুর্দিকে। এরপর আর তাঁকে পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি।

রোজগারের বিষয়টাকে গুরুত্ব না দিয়ে শিক্ষাদানের বিষয়টিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়ার কারণে প্রতিবছরই তার কোচিং সেন্টারে শিক্ষা নেয়া ছাত্রছাত্রী পরীক্ষায় ভাল ফলাফল করছে। এখানে শিক্ষা নেয়া ছাত্রদের অনেকেই ডাক্তার, ব্যারিস্টার, অধ্যাপক, শিক্ষকসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন।

জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষায় প্রতিবছর পাসের হার শতভাগ হওয়ায় উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছিল ছাত্র সংখ্যা। তাঁর এই কোচিং সেন্টারের ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল প্রায় ২০০ জন। প্রতি ব্যাচে ১৫ জন করে ছাত্রকে শিক্ষাদান করানো হয়ছিল। প্রধান পরিচালক ঝুলন চক্রবর্তী ছাড়াও আরও ৪ জন মেধাবী শিক্ষক নিয়মিত পাঠদান করাতেন শিক্ষার্থীদের। ৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত তার ছাত্র তালিকায় এ যেন স্কুলের মতো ১৫/২০ জনের মতো নিয়মিত ৩টি ব্যাচে ছাত্র ছাত্রী পড়ালেখা করে থাকতো। প্রতিটি ব্যাচে ২ ঘণ্টা করে সময় ছিল। এক্ষেত্রে তিনি বেশ কিছু নিজস্ব পদ্ধতি অবলম্বন করতেন। ছাত্ররা তা মেনে চলত। ছাত্র ছাত্রীর নিয়মিত উপস্থিতি ও সময়জ্ঞান মেনে চলা, পড়া আদায়ে দায়িত্বশীল থাকা, পাঠদানে ছাত্র-শিক্ষক ডায়েরী অনুসরণ করে চলা, ডায়েরীর বিষয়াদি সময় তারিখ নির্দিষ্ট করে উল্লেখ করা, স্কুলে ও বাড়িতে ছাত্র ছাত্রী নিয়মিত পড়ালেখা করে কিনা নজরদারি রাখা, অভিভাবকদের এসব বিষয়ে সময়ে সময়ে অবহিত করা, ঘন ঘন পরীক্ষা নেয়া, সকল বিষয় পাঠের অন্তর্ভুক্ত রাখা, ছাত্রদের পাঠদানে কোন অবহেলা শৈথল্য প্রশয় না দেয়া ও ছাত্রের চলাফেরা, আচার আচরণ পাঠের অন্তর্ভুক্ত করা।

ঝুলন চক্রবর্তী যেমন নিয়মের ভেতর থাকতেন, তেমনি তার কোচিং সেন্টারে ছাত্র ছাত্রীদের এসব শৃংখলা মেনে চলতো। এ জন্য দেখা গেছে অভিভাবক ছাত্ররা তার প্রতি আকৃষ্ট। এখানে ছাত্র ছাত্রী এক বছরের নিচে পড়ত না। এজন্য অনেকে ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম পর্যন্ত এক নাগাড়ে পড়েছে এমনও উদাহরণ আছে। ফলাফলের ক্ষেত্রে কেউ ফেল করছে এমন নজির নেই। ভাল রেজাল্ট নিয়েই উত্তীর্ণ হতো। তিনি ছাত্র ছাত্রীদের কাছ থেকে মুখস্ত পাঠ আদায়ের চেয়ে খাতায় লিখে দিয়ে পড়া আদায় ও ঘন ঘন পরীক্ষা নিতেন। তিনি নোট বই নয়, মূল বই থেকে ছাত্র ছাত্রীদের পড়া আদায়ে উৎসাহিত করতেন। তবে তিনি জানান, নোট বই এর বিশাল দাপট উপেক্ষা করে চলা কঠিন। সরকার এ ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করেও পুরো মাত্রায় তা বন্ধ হয়ে যায়নি।

শিক্ষক ঝুলন চক্রবর্তী মনে করতেন, এটা নিছক কোন কোচিং সেন্টার নয়। তিনি বছরে অন্তত একবার নিজ খরচে ছাত্র ছাত্রীদের নিয়ে শিক্ষা সফর করাতেন। এছাড়া তার প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী ছাত্র ছাত্রীদের কাগজ কলম ইত্যাদি নিজ খরচে সরবরাহ করতেন। এজন্য কোন ফি দিতে হত না। তিনি এ পেশায় থেকে কোন সরকারি বা বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবীর মতো নন; এ বোধ তাকে বিক্ষত করত না। তিনি শিক্ষকের মতো দিনরাত এ কাজে লেগে থাকতেন। তিনি বিশেষ কোনো পেশায় আছেন কি নেই, এই ভাবনা তাকে পীড়িত করত না। তিনি শুণ্য নন। স্ব-নিয়োজিতভাবে জীবনের ঠিকানা তৈরী করেছেন। তিনি ছাত্রদের মাঝে বেঁচে আছেন তাতেই তাঁর আনন্দ। এটাই তাঁর ব্রত। প্রতিদিন তিনি বিভিন্ন ব্যাচে প্রায় ২০০ জন ছাত্র ছাত্রীকে নিয়মিত পড়াতেন। প্রতিষ্ঠানটির সুনাম অক্ষুন্ন রাখতেও তার সহযোগী শিক্ষকদের প্রচেষ্টাও কোন অংশে কম ছিল না। প্রচার নয়, কাজেই বিশ্বাসী এই নির্মম বাস্তবতাকে বুকে লালন করে নিরলসভাবে কাজ করে যাওয়ার কারণে তিল তিল করে গড়ে উঠা তার এই প্রতিষ্ঠানটি হয়ে উঠেছিল কমলগঞ্জের শিক্ষা বিস্তারে একটি আলোকবর্তিকা হিসেবে। তাছাড়া মেধাবী দরিদ্র শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে পাঠদান করাতেন।

সর্বোপরি একটা নির্মল আনন্দ, সম্মান, শ্রদ্ধা ছাত্র অভিভাবকদের মিলে পারস্পরিক প্রীতির সম্পর্ক যা ৩৫ বছর ধরে গড়ে উঠেছে তা টাকা-পয়সার বিবেচনায় দেখা যায় না। এছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সাথে নিবিড়ভাবে জড়িত রয়েছেন।
এই প্রাপ্তি অনেক মূল্যবান। বয়সের হিসাবে ঝুলন চক্রবর্তী ৫২ বছরে পা রেখেছেন। বয়স ও অসুস্থতার কারণে তিনি এখন আর এ মহান পেশাটি ধরে রাখতে পারছেন না। তাই মানুষ গড়ার মহান কারিগর খ্যাতনামা শিক্ষক ঝুলন চক্রবর্তীর পাশে দাঁড়াতে সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন বলে মনে করছেন ছাত্র-ছাত্রী, অভিভাবক ও এলাকাবাসী।

সংসার জীবনে তিনি স্ত্রী ও ২ কন্যা সন্তানের জনক। স্ত্রী রুনা চক্রবর্তী সরকারি চাকুরিজীবী। তিনি বাংলাদেশ পুলিশ বিভাগে কর্মরত আছেন।
এইবেলা/পিআরডিএন

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো সংবাদ পড়ুন
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২২ - ২০২৪
Theme Customized By BreakingNews